ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি লিমিটেড পরিচালনার জন্য চার সদস্যের অন্তবর্তীকালীন বোর্ড গঠনের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মের পক্ষ থেকে কোম্পানিটির সব নথিপত্র দাখিলের পর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্টের একক কোম্পানি বেঞ্চ এই অভিমতের কথা জানান।
আদালত বলেন, কোম্পানির দু’জন সদস্য,দুজনই কারাগারে। কীভাবে বোর্ড মিটিং হবে? বোর্ড মিটিং করতে গেলেও তা করা যাচ্ছে না। বোর্ড মিটিং না করতে পারলে টাকা কোথায় কী আছে, সে বিষয়েও জানা যাচ্ছে না। সাবেক বিচারপতি, সচিব ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসহ চার জন রাখা যেতে পারে। বেসরকারি কোম্পানিতে চার জনের বেশি সদস্যের দরকার নেই। শুনানি নিয়ে আদালত আজ বুধবার আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
আদালত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তিন জন সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের নাম চেয়েছেন; যাদের মধ্য থেকে একজনকে চূড়ান্ত করা হবে। বোর্ডের বাকিদের নাম আদালত নিজেই নির্ধারণ করে দেবেন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইনজীবী তাপস কান্তি বলের উদ্দেশে আদালত বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা বলবেন। যাতে বর্তমান বা সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব-এমন তিন জনের নাম দেন। এখান থেকে যাচাই-বাছাই করে একজন চূড়ান্ত করা হবে।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাছুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা।
জানতে চাওয়া হলে আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা বলেন, কোম্পানিটি অবসায়নের আবেদন করেছে। এটা নিষ্পত্তি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কে? যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির দু’জন পরিচালকই কারাগারে। এখন সম্পদের দায়-দেনা, হিসাব-নিকাশসহ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ফোরাম গঠন করার কথা ভাবছে হাইকোর্ট। এ কারণে হাইকোর্ট চার সদস্যের অন্তবর্তীকালীন একটি বোর্ড গঠনের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এতে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন আইনজ্ঞ, একজন সচিব ও একজন চার্টার্ড একাউনট্যান্ট রাখার কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে বুধবার হাইকোর্ট আদেশ দেবেন বলেও জানান তিনি।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ করছে না-এমন অভিযোগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহক গুলশান থানায় মামলা করার পরদিন বিকালে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তাঁর স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে দু’জনই কারাগারে।
এরই মধ্যে ইভ্যালি’র অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টের কোম্পানি আদালতে আবেদন করেন ইভ্যালি’র গ্রাহক ফরহাদ হোসেন। এতে ইভ্যালি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনেরও আবেদন জানান। এ আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। এজন্য একটি নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।
এর ধারাবাহিকতায় ৩০ সেপ্টেম্বর বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত ইভ্যালির সব নথিপত্র ১১ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ইভ্যালির সব নথি হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রার এই নথি গত রবিবার হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেন। বিশাল আকারের এই নথি আদালতে জমা পড়েছে। তবে বিশাল আকৃতির এই নথি এখনও খতিয়ে দেখা হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন।
–ইউএনবি
আরও পড়ুন
দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথে অপরাধমূলক কর্মকান্ড বাড়ছে, বেশী হচ্ছে সিলেট অঞ্চলে
অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিতকরণে বাজার কমিটিগুলোর সহযোগিতা চায় এফবিসিসিআই
একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন