April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, August 25th, 2021, 11:05 am

করোনার নেতিবাচক প্রভাবে বন্ধ হয়ে গেছে এসএমই খাতের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবে ইতিমধ্যে দেশের এসএমই খাতের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত আর্থিক সঙ্কটই প্রতিষ্ঠান বন্ধের অন্যতম কারণ। আর বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান টিকে আছে সেগুলোও কোনোমতে চলছে। করোনাকালীন সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সরকার অর্থ বরাদ্দ দিলেও এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে তা সরবরাহ করা হয়নি। এসএমই খাতের ব্যবসায়ীদের মতে, প্রণোদনার সব অর্থ ছাড় করে সুষ্ঠুভাবে সরবরাহ করা সম্ভব হলে আর্থিক সঙ্কটে থাকা এসএমই উদ্যোক্তারা আবারো লাভে ফিরতে পারবে। দেশের মোট শিল্প খাতের ৯০ শতাংশই এসএমই। শিল্প মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনাকালে আর্থিক সঙ্কট কাটাতে এসএমই ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, জয়িতা ফাউন্ডেশন, এনজিও ফাউন্ডেশন, রসাশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন,পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর ঋণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত বরাদ্দকৃত অর্থের ৫৭০ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়। আর ছাড়কৃত অর্থের ২৭৬ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়নে গ্রামীণ এলাকার ঋণদান কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওই ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে গত ৩০ জুন পর্যন্ত বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩০০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের অনুকূলে বরাদ্দের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থ বিভাগ থেকে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে ১০০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের অনুকূলে ৫০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠান দুটি ছাড়কৃত ঋণের সবটাই এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করেছে। আর জয়িতা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি টাকা। তার মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে ১০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। তবে ছাড়কৃত অর্থের কোনো টাকাই গত ৩০ জুন পর্যন্ত এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়নি। এনজিও ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা আর তার মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা। সেখান থেকেও কোনো অর্থ গত ৩০ জুন পর্যন্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের বিতরণ করা হয়নি। সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে ১০০ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে বিতরণকৃত এসএমই ঋণের পরিমাণ ৪১.৬৩ কোটি টাকা। পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে ১০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ছাড়কৃত অর্থের কোনো টাকা এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া হয়নি। ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ১০০ কোটি টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে ৫০ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। সেখানে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে ১৫০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। আর ওই অর্থের ৬০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সংগঠন নাসিবের সভাপতি মির্জা নূরুল গণি শোভন জানান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ১০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা নাসিবের সদস্য। তার মধ্যে করোনার কারণে ৩ হাজারেরও বেশি উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যরাও ভালো নেই। ক্রমাগত লোকসানে রয়েছে। ওসব উদ্যোক্তার এখনই আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। না হলে তারাও ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ ঋণ হিসেবে সরবরাহ করা হলে এসএমই উদ্যোক্তারা আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে।
অন্যদিকে করোনার কারণে এসএমই খাতের নারী উদ্যোক্তারা বেশি সঙ্কটে পড়েছে দাবি করে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন ওয়েবের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী নাসরিন আউয়াল জানান, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে পহেলা বৈশাখ, চারটি ঈদসহ কোনো পালা-পার্বণে এসএমই উদ্যোক্তারা ব্যবসা করতে পারেনি। ইতিমধ্যে আর্থিক সংকটে অনেক এসএমই নারী উদ্যোক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত কখনো লকডাউন, কখনো গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পণ্য বানিয়ে উদ্যোক্তারা বিক্রি করতে পারেনি। পাশাপাশি কাঁচামালও সংগ্রহ করা যায়নি। এমন অবস্থায় করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই নারী উদ্যোক্তাদের কাছে সরকারের দেয়া অর্থ দ্রুত পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। তাতে নারী উদ্যোক্তারা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে।