March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, June 20th, 2021, 8:10 pm

করোনা মহামারীতে বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরি হারিয়ে ফিরে আসছে প্রবাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

করোনা মহামারীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরি হারিয়ে প্রবাসীরা দেশে ফিরে আসছে। চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে ৩৬ হাজার বাংলাদেশী কর্মীকে ফেরত আসতে হয়েছে। আর প্রত্যেকেই আউটপাস নিয়ে ফিরেছে। তার মধ্যে বেশির ভাগই ওমান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরে এসেছে। কেউ করোনায় কাজ না থাকা বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে, আবার কেউ ভিসার মেয়াদ না থাকায় সাধারণ ক্ষমার আওতায় আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরেছে। বর্তমানে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গত বছর করোনা মহামারীর শুরু থেকেই সংকট চলছিল। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা মহামারী দেখা দেয়ার পর থেকেই জনশক্তি রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশেই বাংলাদেশী কর্মীদের খারাপ সময় চলছে। আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) নবায়ন করতে না পেরে সৌদি আরবে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অবৈধ হয়ে পড়ে। তাছাড়া অবৈধদের তালিকা দীর্ঘ হয় ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এমনকি কাতারেও। এমন অবস্থায় চাকরি হারিয়ে উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওমান, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ থেকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় অনেকেই দেশে ফিরতে বাধ্য হয়। আবার কেউ কেউ অবৈধভাবে অবস্থান করতে গিয়ে ধরাও পড়ে। তাদের কারাভোগ শেষে দূতাবাসের মাধ্যমে আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে। মূলত যাদের পাসপোর্ট নেই, অবৈধ কিংবা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে একেবারে নিজ দেশে চলে যেতে ইচ্ছুক অথবা দেশে গিয়ে নতুন ভিসায় আবার বিদেশে আসতে চায় তাদের জন্যই দূতাবাস আউটপাস দেয়। তাছাড়া যেসব কর্মী দূতাবাসের সেইফ হাউসের হেফাজতে থাকে এবং যাদের মামলা শেষ তাদেরও আউটপাস দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দূতাবাস। আউটপাস নিয়ে ফেরা প্রত্যেককেই প্রথমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিতে হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তাদের বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কে পাঠানো হয়। সেখানে তথ্য সংগ্রহের পর তাদের বিমানবন্দর ত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৬ হাজার ২১০ জন আউটপাস নিয়ে দেশে ফেরত এসেছে। দেশে ফিরে আসাদের মধ্যে পুরুষ ৩৪ হাজার ৯২ জন আর নারী ২ হাজার ১১৮ জন। তার মধ্যে জানুয়ারিতে ১১ হাজার ৫৪৯ (পুরুষ ১ হাজার ১১৮ জন, নারী ৩৬০ জন), ফেব্রুয়ারিতে ৯ হাজার ২১৪ জন (পুরুষ ৮ হাজার ৯৬৮ জন, নারী ২৪৬ জন), মার্চে ৭ হাজার ৭৬৭ জন (পুরুষ ৭ হাজার ৪১৩ জন, নারী ৩৫৪ জন), এপ্রিলে ২ হাজার ৩৫৯ জন (পুরুষ ২ হাজার ১৩ জন, নারী ৩৪৬ জন), মে মাসে ৩ হাজার ৬০৫ জন (পুরুষ ৩ হাজার ১৭ জন, নারী ৫৮৮ জন) এবং ১৩ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৭১৬ জন (পুরুষ ১ হাজার ৪৯২ জন ও নারী জন ২২৪) ফেরত আসে। তবে গত ৫ মাসে স্মার্টকার্ড নিয়ে ২ লাখের বেশি বাংলাদেশী বিদেশ গেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৭ হাজার ৮৫৫ জন কর্মী স্মার্টকার্ড নিয়ে বিদেশে গেছে। তার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৮ জন আর নারী ৩৯ হাজার ৭০৭ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৯ হাজার ২৫৮ জন (পুরুষ ৩৪ হাজার ১০২ জন, নারী ৫ হাজার ১৫৬ জন), ফেব্রুয়ারিতে ৪৪ হাজার ৮৫০ জন (পুরুষ ৩৬ হাজার ৪৭৯ জন, নারী ৮ হাজার ৩৭১ জন), মার্চে ৫১ হাজার ৭৮২ জন (পুরুষ ৪১ হাজার ১৬৪ জন, নারী ১০ হাজার ৬১৮ জন), এপ্রিলে ৪৫ হাজার ৪২০ জন (পুরুষ ৩৬ হাজার ৩১৩ জন, নারী ৯ হাজার ১০৭ জন), মে’তে ২২ হাজার ৫৮২ জন (পুরুষ ১৭ হাজার ২৭০ জন, নারী ৫ হাজার ৩১২ জন) এবং ১৩ জুন পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৯৩ জন (২ হাজার ৮৫০ জন, নারী ১ হাজার ১৪৩ জন) বিদেশে যায়।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বিদেশ যাওয়া ১ লাখ ৯৫ হাজার কর্মীর মধ্যে ১ লাখ ৪৪ হাজার জনই সৌদি আরবে গেছে। শতকরা হিসেবে তা মোট বিদেশ যাওয়া কর্মীর প্রায় ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ গেছেন ওমান। তার পরিমাণ ১৯ হাজার জন। তার বাইরে সিঙ্গাপুরে ৬ শতাংশ (১২ হাজার), জর্ডানে আড়াই শতাংশ (৫ হাজার) এবং আরব আমিরাতে ২ শতাংশের কিছু বেশি বাংলাদেশী কর্মী গেছে।
এদিকে করোনাকালীন শ্রমবাজার পরিস্থিতি বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, করোনার মধ্যে বৈদেশিক শ্রমবাজার সম্পর্কে মিশনগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সৌদি আরব, ইউএই, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ ২৫ দেশে কর্মসংস্থানে দক্ষ কর্মী তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আর নতুন করে পোল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, উজবেকিস্তানের শ্রমবাজারে লোক পাঠানো শুরু হয়েছে। কম্বোডিয়া, সেসেলম ও চীনেও কর্মীরা যাচ্ছে। তাছাড়া সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর আশা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিগত ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা হয়েছে। বিদেশে গমনেচ্ছু শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপজেলা পর্যায়ে আরো ৭১টি টিটিসি স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।