April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, July 29th, 2021, 1:08 pm

কোভিড চিকিৎসায় আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হলেও সেগুলো অসম্পূর্ণ

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্ক :

কোভিড চিকিৎসায় দেশে যে পরিমাণ আইসিইউ আছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, বাস্তব চিত্র সেরকম নয়। সরকারিভাবে আইসিইউ উপযোগী শয্যাগুলোকেও আইসিইউ হিসাবে উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিইউ আরো অনেক কম। রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কোভিড আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১০টি। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৪টিতে ভেন্টিলেশন সুবিধা আছে। খুলনার অন্যতম চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র শেখ আবু নাসের হাসপাতালেরও একই অবস্থা। সেখানে ১০ শয্যার আইসিইউর মধ্যে ৪টিতে সেবা প্রদান করা হয়। মূলত বাস্তবে প্রস্তাবিত শয্যাও তালিকাভুক্ত হিসাবে দেখানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও শয্যার সঙ্গে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, বিপ্যাপ বা সিপ্যাপ সংযোগ থাকলেই তাকে আইসিইউ বলা হচ্ছে। যা প্রকৃতপক্ষে আইসিইউ নয়। ওসব শয্যার কতোগুলোয় শুধু উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব। কতোগুলোয় নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন সুবিধা দেয়া যাবে। আর অর্ধেকেরও কম পরিমাণ শয্যায় ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন সুবিধা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য মোট ১ হাজার ৩২১টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। তার মধ্যে রাজধানীর ১৬টি সরকারি হাসপাতালে ৩৯৩টি আর ২৮টি বেসরকারি হাসপাতালে ৫০৫টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। ঢাকা শহরসহ ঢাকা জেলায় মোট আইসিইউ সমমানের শয্যা আছে ৯৬১টি। চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা ও উপজেলায় ১০৭টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২টি, রাজশাহী বিভাগে ৫৮টি, রংপুর বিভাগে ৪৪টি, খুলনা বিভাগে ৭৪টি, বরিশাল বিভাগে ৩৩টি এবং সিলেট বিভাগে ২২টি। তার মধ্যে সিলেটে বর্তমানে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। বরিশালে খালি আছে ১১টি, খুলনায় ১৬টি, রংপুরে ২০টি, রাজশাহীতে ১৪টি, চট্টগ্রামে ২২টি, ময়মনসিংহে ৮টি এবং ঢাকায় ১৫৪টি।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ভয়াবহ সংক্রমণে করোনা মহামারি প্রকট রূপ ধারণ করেছে। আক্রান্ত রোগীর বড় অংশই ফুসফুসে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ সংক্রমণের শিকার হচ্ছে। আর তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিতে আইসিইউর (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) প্রয়োজন। ইতিমধ্যে দেশের পূর্ণাঙ্গ ৬৬০টি আইসিইউ শয্যা কোভিড রোগীতে পূর্ণ। এমনকি জোড়াতালি দেয়া নামমাত্র আইসিইউগুলোর শয্যাও আর ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ সরকারিভাবে বলা হচ্ছে তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৩২১ শয্যার মধ্যে ১ হাজার ৭৬টিতে রোগী রয়েছে। সেদিক থেকে পূর্ণাঙ্গ ও অসম্পূর্ণ মিলিয়ে আইসিইউ শয্যার ৮০ শতাংশই রোগীতে পূর্ণ। তবে এমন ধরনের শয্যার হিসাব নিয়েও গোলমাল আছে। কারণ এখনো অনেক আইসিইউ বেড তৈরি না হলেও তাকে আইসিইউ বেড হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এভাবেই হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংখ্যা বেশি দেখানো হচ্ছে। মূলত সরকারিভাবে কোভিড আইসিইউ তালিকায় আছে কিন্তু বাস্তবে নেই।
সূত্র আরো জানায়, সরকারের তালিকায় সারা দেশে ১ হাজার ৩২১টি কোভিড আইসিইউ সমমানের শয্যা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে ২৪৫টি ফাঁকা আছে। অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগে শয্যা দেখানো হয়েছে ১ হাজার ২৫৯টি এবং এ মাসের শুরুতে দেখানো হয়েছিল ১ হাজার ১৬৫টি। এতো স্বল্প সময়ে শতাধিক আইসিইউ শয্যা কীভাবে স্থাপন হলো তা নিয়ে খোদ চিকিৎসকদের মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে। রাজধানীর ১৬টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ১০টিতে এবং বেসরকারি ২৮টি হাসপাতালের ৮টিতে কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। এমনকি করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত সাধারণ শয্যারও সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। আর রোগী বাড়লেই সাধারণ শয্যার অভাবও তীব্র হবে।
এদিকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত আইসিইউ বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায় অবশ্যই কার্যকর আইসিইউ প্রয়োজন। আইসিইউ শুধু একটি শয্যা নয়, রোগীর চিকিৎসায় এর সঙ্গে আরো অনেক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। কিন্তু বেশির ভাগ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। অনেক আইসিইউতে নেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভেন্টিলেটর সুবিধা। অনেক আইসিইউতে নেই সিরিঞ্জ পাম্প, এবিজি মেশিন বা ডিফেব্রিলেটর। ফলে রোগীকে আইসিইউতে নেয়া হলেও তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিদের্শনা মতে, একটি আদর্শ আইসিইউর জন্য বেশকিছু জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন-আইসিইউ শয্যা, আইসিইউ ভেন্টিলেটর, ইনফিউশন পাম্প বা সিরিঞ্জ পাম্প, নেবুলাইজার মেশিন, পেশেন্ট মনিটর, পালস অক্সিমিটার, সাকশন মেশিন। দেশে বর্তমানে ১ হাজার ৩২১টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। কিন্তু জীবনরক্ষাকারী ভেন্টিলেটর মেশিন রয়েছে মাত্র ৬৬০টি। অর্থাৎ অর্ধেক শয্যায়ই ওই গুরুত্বপূর্ণ মেশিনটি নেই। ২৯৮টি ভেন্টিলেটর মেশিন কোভিড শুরুর আগেই ছিল। আর দেশে কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ১০০টি ভেন্টিলেটর দেয়া হয়। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের (এইচএসএম) পক্ষ থেকেও ১০০টি ভেন্টিলেটর কেনা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কেনা হয় আরো ১৪৪টি এবং ইউনিসেফের পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে ১৮টি। অর্থাৎ কোভিডকালীন আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হলেও সেগুলোকে পরিপূর্ণ রূপ দেয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া অনেক বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে নামমাত্রই সুবিধা দেয়া হয়। আর বেসরকারি পর্যায়ের অনেক হাসপাতালে শুধু শয্যা ছাড়া আর কিছুই থাকে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান জানান, কোভিড চিকিৎসায় আইসিইউর প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না। ফলে যে শয্যা রয়েছে, সেগুলো দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় রোগী বাড়লে সংকট সৃষ্টি হবে। চাইলেই আইসিইউ করা যায় না। কারণ অনেক যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষিত নার্স ও চিকিৎসক প্রয়োজন। তাই যেসব স্থানে আইসিইউ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না, সেসব স্থানে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার ব্যবস্থা করা জরুরি। আর জেলা-উপজেলায় সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করতে প্রয়োজন।