April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 23rd, 2021, 9:37 pm

জাপানি নারীর দুই সন্তানকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখার নির্দেশ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বাংলাদেশি বংশদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানের জিম্মা থেকে দুই শিশু সন্তানকে সিআইডি কর্তৃক উদ্ধারের পর আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের মা এবং বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাবা শিশুদের সঙ্গে থাকতে পারবেন বলেও আদালত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এছাড়াও আগামী ৩১ আগস্ট শিশুদের হাইকোর্ট হাজির করতে এবং এ সময়ের মধ্যে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা চালাতে পরামর্শ দিয়েছেন আদালত। শিশুদের বাবার পক্ষে করা একটি সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৩ আগষ্ট) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অন্যদিকে রিটকারী জাপানি নারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। এর আগে ১৯ আগস্ট বাংলাদেশি বংশদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানের জিম্মায় থাকা দুই শিশু সন্তানকে আগামী ৩১ আগস্ট হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন আদালত। শিশুদের মা জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোর করা রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। পরে দুই শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে তাদের মা মামলা দায়ের করলে গত ২২ আগস্ট শিশুদের উদ্ধার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তিনটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হলোÑজেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) এবং সানিয়া হেনা (৭)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপান (এএসআইজে) এর শিক্ষার্থী ছিল। এ বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। একই মাসের ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। পরে গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার বাচ্চাদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যন করেন। গত ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার বাচ্চাদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন। অন্যদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। পরে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। দুই মেয়ের বিবৃতি ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক টোকিওর পারিবারিক আদালত গত ৩১ মে এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লাইলার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। বিষয়টি নিয়ে এরিকো বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য তিনি বাংলাদেশে আসতে পারেননি। ২০২১ সালের ১৮ জুলাই তারিখে মিস এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তবে ইমরান শ্রীলঙ্কা থেকে এরিকোকে ফিরে যেতে বলেন। এরিকো বাংলাদেশে কোভিড পরীক্ষা করান, যার ফলাফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু ইমরান রিপোর্টের ফলাফল অবিশ্বাস করে তার সঙ্গে সন্তানদের সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেও তা ছিল হৃদয়বিদারক ঘটনা। গত ২৭ জুলাই এরিকোকে তার মোবাইল সংযোগ বন্ধ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। একই অবস্থায় তাদের গাড়িতে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাই আইনি প্রতিকারের আশায় হাইকোর্টে দুই মেয়ের জিম্মা চেয়ে রিট দায়ের করেন জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো। রিট আবেদনে দুই শিশুকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।