April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, September 8th, 2021, 8:47 pm

জাপানি মাকে নিয়ে অপপ্রচার সংক্রান্ত ভিডিও সরানোর নির্দেশ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণের জন্য ইমরান শরীফ কর্তৃক বাসার ভিতরে সিসিটিভি অপসারণ ও বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে থাকা অবমাননাকর ভিডিও অপসারণে বিটিআরসি চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব ভিডিও তৈরির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিআইডির সাইবার টিমকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। জাপানি মায়ের আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। আদেশের বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোকে নিয়ে অপপ্রচার সংক্রান্ত সব কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়াও এসব ভিডিও তৈরির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও সিআইডির সাইবার টিমকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। শুনানিতে শিশির মনির আদালতকে বলেন, এরিকো দুই মেয়ের সঙ্গে রাতে থাকতে চান। এ ছাড়া কেনাকাটা ও বিনোদনমূলক কাজে অংশ নেওয়ার জন্য শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিমার্ট যেতে চান। পরে দুই মেয়েকে নিয়ে বাধাহীনভাবে উন্মুক্ত পরিবেশে চলাচল ও রাতে তাদের সঙ্গে ঘুমানোর অনুমতি দেন হাইকোর্ট। এদিকে জাপানি মাকে নিয়ে আপলোড হওয়া ভিডিও কনটেন্টের বিষয়ে আইনজীবী বলেন, ‘আরও একটি বিষয় বলতে চাই, তবে লজ্জা লাগছে।’ এ সময় তিনি আবেদনের পৃষ্ঠা উল্লেখ করে ভিডিও লিংক দেওয়া আছে বলে জানান। শিশির মনির বলেন, সেখানে কমপক্ষে ১৭টি লিংক রয়েছে। যেখানে জাপানি নারীকে নিয়ে বিভিন্ন চটকদার ভিডিও ও নারী উপস্থাপকরা উপস্থাপনা করেছেন। কোনোটিতে দুই মিলিয়ন, চার মিলিয়ন, ছয় মিলিয়ন এমনকি সাত মিলিয়ন ভিউয়ার (দর্শক)। যেখানে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ দেখেছেন এই ভিডিওগুলো। এগুলো অপসারণের নির্দেশনা চাই। এসময় আদালত বলেন, ‘ভিডিও লাইক-শেয়ারে নাকি আয়-ইনকাম হয়?’ তখন শিশির মনির বলেন, হ্যাঁ, এসব ভিডিও লাইক-শেয়ারে আয়-ইনকাম হয়। আবেদনের বিষয়ে শিশির মনির জানান, এরিকো দুই মেয়ের সঙ্গে রাতে থাকা, বাইরে বিনোদনমূলক কাজে অংশগ্রহণ, তাদের বাবা ইমরান শরীফের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণের জন্য ইমরান শরীফ কর্তৃক বাসায় স্থাপন করা সিসিটিভি অপসারণ, বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে থাকা এরিকোর বিরুদ্ধে অবমাননাকর ভিডিও অপসারণে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে আবেদনটি করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোর করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর এ বিষয়ে এদিন আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এর আগে গত ২২ আগস্ট ওই দুই শিশুকে বাবার কাছ থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় তাদের তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। তার আগে ১৯ আগস্ট তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সঙ্গে তাদের বাবা ও ফুফুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। এরপর গত ২৩ আগস্ট জাপানি দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এসময়ের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের মা ও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন মর্মে আদেশ দেন আদালত। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বাবা রাজধানীর যে কোনো একটি উন্নতমানের হোটেলে মেয়েদের রাখার নির্দেশনা চেয়ে গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। এরপর গত ২৬ আগস্ট বাবা-মা একমত হওয়ায় জাপানি দুই শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে উন্নত হোটেলে রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। তারপর থেকে শিশুরা গুলশানের একটি ভাড়া বাসায় থাকছেন। এর আগে গত ১৯ আগস্ট সকালে দুই কন্যাশিশুকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে দুই কন্যাশিশুকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী। জাপানি মায়ের আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।