April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, September 1st, 2021, 9:10 pm

ট্রেনের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও সংগ্রহে নীতিমালা করছে রেলওয়ে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশেই রেলওয়ের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। সেজন্য সংস্থাটির নিজস্ব কারখানার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদেরও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে রেলের যন্ত্রাংশ উৎপাদন ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকেও আমদানি করে রেলওয়েকে সরবরাহ করতে পারবে। সেজন্য রেলওয়ে একটি নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের মতে, উদ্যোগটির সফল বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন রেলের যন্ত্রাংশ সহজ ও সুলভে পাওয়া যাবে, তেমনি তা স্থানীয় শিল্পের বিকাশেও অবদান রাখবে। মূলত ট্রেনের ইঞ্জিনের (লোকোমোটিভ) যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও সংগ্রহের জন্যই রেলওয়ে নীতিমালাটি প্রস্তুত করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে থাকা ইঞ্জিন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হয়। আর ওসব যন্ত্রাংশ বিশেষায়িত সামগ্রী। ডিজেল ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের কোনো ড্রয়িং ও স্পেসিফিকেশন না থাকায় পার্ট নম্বর ও বিবরণের ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়। ওসব যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতে রেলওয়েকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে পরনির্ভরশীলতা কমাতে অতীতে বিসিক নীতিমালার আওতায় এবং পরবর্তী মহাপরিচালক বাংলাদেশ রেলওয়ের কার্যালয়ের মেকানিক্যাল শাখা থেকে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় প্রস্তুতকারক অনুসন্ধান ও সাময়িকভাবে প্রস্তুতকারীদের যন্ত্রাংশ তৈরির অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু যথাযথ মনিটরিংয়ের জন্য নীতিমালা ও গাইডলাইন না থাকায় এবং উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুরক্ষা না থাকায় টেকসই উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহী হচ্ছে না। মূলত উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আগ্রহী করতেই রেলওয়ে নীতিমালাটি তৈরি করছে।
সূত্র জানায়, যেসব উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের বিসিক তালিকাভুক্তির বা অনুরূপ অন্য কোনো সনদ, নিজস্ব কারখানা, পর্যাপ্ত মেশিনারিজ, দক্ষ জনবল ও আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে, তারাই যন্ত্রাংশ উৎপাদনের জন্য যোগ্য হবে। যোগ্যতাসম্পন্ন উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্নের পর রেলওয়ে প্রাথমিকভাবে সেটিকে ৫ বছরের জন্য একক সোর্স হিসেবে ঘোষণা করবে। ওই সময়ের মধ্যে উপযুক্ত কারণ ছাড়া রেলওয়ে দেশী-বিদেশী কোনো সরবরাহকারীর কাছ থেকে চুক্তিবদ্ধ কারখানায় উৎপাদিত পণ্য সংগ্রহ করবে না। রেলওয়ে কর্তৃক গঠন করা ডকুমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট কমিটি, ফ্যাক্টরি ইন্সপেকশন কমিটি, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও মূল্য নির্ধারণ কমিটি ওসব বিষয় দেখাশোনা করবে। বর্তমানে ট্রেনের একটি ইঞ্জিনে কম-বেশি ২৫ হাজার ধরনের যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হয়। আর তার সবই বিশেষায়িত আইটেম। ওসব যন্ত্রাংশের মাত্র ৫ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়, বাকি ৯৫ শতাংশ যন্ত্রাংশই রেলওয়ে বিভিন্ন বিদেশী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করে। চাহিদা নিরূপণ থেকে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যন্ত্রাংশের একটি লট কিনতেই রেলওয়ের প্রায় দুই বছর সময় লেগে যায়। যন্ত্রাংশ সংগ্রহে ওই অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ ইঞ্জিনের সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে বর্তমানে ব্রড গেজ ও মিটার গেজ মিলিয়ে ২৬৩টি ইঞ্জিন রয়েছে। তার মধ্যে ৭৭ শতাংশ মিটার গেজ ও ৪৭ শতাংশ ব্রড গেজ ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। পুরনো ইঞ্জিনগুলোয় যন্ত্রাংশের প্রয়োজনও বেশি হয়। আবার পাইপলাইনেও নতুন ইঞ্জিন কেনার একাধিক প্রকল্প রয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যন্ত্রাংশের চাহিদা আরো বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে যন্ত্রাংশ সংগ্রহের বিদ্যমান জটিলতা ও ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ রেলওয়ে আমদানি যন্ত্রাংশের বিকল্প উৎস তৈরির পরিকল্পনা করছে। সেজন্যই একটি খসড়া নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই নীতিমালার লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিংস্টকের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আমদানি বিকল্প যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ তৈরির মাধ্যমে দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং অধিকতর দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করে দ্রুত স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠন করা। পাশাপাশি সম্ভাব্য সর্বোচ্চসংখ্যক লোকোমোটিভের যন্ত্রাংশ দেশে তৈরির সুযোগ সৃষ্টি, বাংলাদেশ রেলওয়েতে যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য টেকসই উদ্যোক্তা তৈরিসহ ৭টি উদ্দেশ্যের কথা খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে।
এদিকে ট্রেনের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ সংগ্রহ প্রক্রিয়ার জটিলতা ও খসড়া নীতিমালার বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, রেলওয়ের পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর কারখানায় বগি-ওয়াগনের কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। তবে ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ বলতে গেলে পুরোটাই আমদানিনির্ভর। যে কারণে ট্রেন পরিচালনায় বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হয়। এমন অবস্থায় রেলয়ে যন্ত্রাংশের একটি বিকল্প উৎস তৈরি করতে চাচ্ছে। তাতে একদিকে যেমন রেলওয়ের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সহজেই পাওয়া যাবে, তেমনি স্থানীয় শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে।