April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 30th, 2021, 9:08 pm

তিস্তা পাল্টে দিয়েছে বিনবিনা চরের মানচিত্র

আব্দুল বারী স্বপন, রংপুর:
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় দফায় দফায় বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি ও কমানোর সাথে ভাঙনে দিশেহারা হয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষজন। গত এক মাস ধরে তিস্তার এ খেলায় কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরের মানচিত্র পাল্টে দিয়েছে। গ্রামটির এক সাথে বসবাসরত প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক পরিবারের বাড়ি, আবাদী জমি ও গাছ পালা হারিয়ে এখন নিঃস্ব। শত শত একর আবাদী তিস্তায় পরিনত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে আমন ক্ষেত। ভাঙন অব্যাহত থাকায় বিনবিনার পাকা রাস্তাসহ স্বেচ্ছাশ্রমের বাঁধ ও ৪ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধটি বিলীন হয়েছে। বেড়ি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তিস্তার পানি বিনবিনায় প্রবেশ করে গ্রামটির ১ হাজার পরিবার ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে। এছাড়া লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলির দেড় ১শ পরিবার বাড়ি জমি জমা হারিয়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি আবার দুদিনের মধ্যে কমা আবার তিন দিনের মধ্যে কমা এভাবে গত ১ মাস ধরে তিস্তার খেলায় মানুষজনের কেউ সব কিছু হারিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে আবার কেউ দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবিক জীবন যাপন করছে। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো সরকারিভাবে পায়নি কোন আর্থিক সহায়তা। পানিবন্দি ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো সরকারিভাবে পাওয়া ১০ কেজি করে চালই শান্তনা। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড নেয়নি জোড়ালো কোন পদক্ষেপ। ভাঙনের মাঝামাঝি সময় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা মানুষজন ও এলাকার জনপ্রতিনিধিগণকে শান্ত করা হয়। কাজের কাজ যে ভাঙন তা অব্যাহত থাকে। এর ফলে তিস্তা বেষ্টিত বিভিন্ন এলাকার রাস্তা, ব্রিজ, জমি, বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। ভেসে গেছে পুকুর, মৎস্য খামার ও জলাশয়ের কয়েক লক্ষ টাকার মাছ। আর তিস্তার পানি সরাসরি প্রবেশ করায় মটুকপুর, চিলাখাল, সাউদপাড়া, কুড়িবিশ্বা, ইচলি, পাইকান হাজীপাড়া, মিনার বাজার, ছালাপাক, মর্নেয়াচরসহ নিম্ন এলাকার প্রায় ৩ হাজার পরিবার ১৫ দিনের বেশী সময় ধরে কষ্টে পানির মাঝে বসবাস করছে। বিনবিনাসহ প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি। ভাঙন নিঃস্ব বিনবিনার নেরগান, আহাম্মদ, আকবার, মনতাজ কাজি, কালাম, আলিমুদ্দি, ইমতিয়াজ, পারভিন,কামরুজ্জামান, মিলন, আনোয়ার, জয়নাল জানান, গত ১ মাস ধরে তিস্তার ভাঙা গড়ার খেলায় আমরা গ্রামের সাড়ে ৩শ এর বেশি মানুষ বাড়ি, জমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিলে এমন হতনা। গ্রামটির অর্ধেকের বেশি এখন তিস্তার গর্ভে। ওই গ্রামের মতিন, আসাদ, পেয়ারি, আখলিমা, মকবুল, শফিকুল, ইদ্রিস, লাভলু, সেতার, আলাদ্দিন, মোস্তফা জানান, ভাঙনে বেড়ি বাঁধ ভেঙে যাওয়া তিস্তার পানি বাড়িতে ঢুকে ১৫ দিনের বেশি সময় কষ্টে পানিতে বসবাস করছি। মাত্র কয়েক কেজি চাল সাহায্য আর জিও ব্যাগে ভাঙন বন্ধের চেষ্টায় আমাদের শান্তনা। আমরা সাহায্য নয় ভাঙনে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের বাড়ি ও আবাদি জমি রক্ষা করলে আমরাই সাহায্য দিতে পারব। কোলকোন্দ ইউনিয়েনর চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু বলেন, এবার তিস্তার ভাঙনে তার ইউনিয়নের বিনবিনা চরের সাড়ে তিন শতাধিক বাড়ি বিলিন হয়েছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি থাকা মানুষগুলো রান্নার কারনে কষ্টে আছে। এসব মানুষ ত্রাণ নয় ভাঙন রোধের ভাল পদক্ষেপ চায়। এছাড়া ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি পরিবার ত্রান সহায়তা পেলেও ক্ষতিগ্রস্তরা কোন আর্থিক সহায়তা পায়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম জানান, ভাঙন কবলিত ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর তালিকা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে টিনসহ আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।