April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, September 13th, 2021, 9:15 pm

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল, বিভাগ থাকছে না নবম-দশম শ্রেণিতে, বাস্তবায়ন ২৩ সালে

নিউজ ডেস্ক :

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্চে সরকার। এর মধ্যে গতানুগতিক পরীক্ষা বাদ দিয়ে প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ তথ্য জানান। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে শিখনকারীর মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে শতভাগ। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর সামষ্টিক মূল্যায়ন অর্থাৎ পরীক্ষা হবে ৪০ শতাংশ। ৬০ শতাংশই ধারাবাহিক মূল্যায়ন। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প কলা (বিদ্যমান চারু ও কারুকলা) এগুলো শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের কারিকুলাম বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন (বছর শেষে পরীক্ষা) ৪০ শতাংশ। বাকি বিষয় জীবন ও জীবিকা, তথ্যপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি (বিদ্যমান বিষয়-চারু ও কারু কলা) শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। আর নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৫০ শতাংশ। নবম ও দশম শ্রেণির বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দশম শ্রেণি শেষে দশম শ্রেণির ওপর পাবলিক পরীক্ষা হবে। আগে তো নবম-দশম মিলে পাবলিক পরীক্ষা হতো। এখন শুধু দশম শ্রেণির কারিকুলাম অনুযায়ী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষাটি হবে। শুধু দশম শ্রেণির যে কারিকুলাম সেটির ওপর হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের কারিকুলাম প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ। পাবলিক পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষা দিতে হবে। প্রয়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। এ ছাড়া নৈর্বাচনিক, বিশেষায়িত কাঠামো, প্রকল্পভিত্তিক, ধারণা অনুযায়ী সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক ও ব্যবহারিক ও অন্যান্য উপায়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে। সেখানে নানা অ্যাসাইনমেন্ট হয়, প্রকল্প হয়, সেগুলোর মাধ্যমে হবে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর বছর শেষে একটি করে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কারিগরিতে এখন তা-ই হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুটো পরীক্ষার সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।
নবম ও দশম শ্রেণিতে বিভাগ থাকছে না: মাধ্যমিক স্তরের নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিষয়ের মতো বিভাজন থাকছে না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই পড়তে হবে ১০টি বিষয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, নবম ও দশম শ্রেণির বই আলাদা হয়ে যাবে। কোনও বিভাগ থাকবে না। সব শিক্ষার্থীই ১০টি বিষয় পড়বে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, নবম ও দশ শ্রেণি আলাদা হয়ে যাবে। আলাদা করে পরীক্ষা হবে। শুধু দশম শ্রেণিতে যা পড়ানো হবে, তার ওপরে ভিত্তি করে এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু ২০২৩ সাল থেকে: পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে ২০২২ সালে, আর বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে। ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। পরিমার্জিত কারিকুলাম প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন এই কারিকুলামে দক্ষতা অর্জনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে বলা আছে। শিখন সময় প্রাথমিকে কতটা, মাধ্যমিকে কতটা হবে তা-ও বলা আছে। প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম-২০১২ এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২০; সেগুলো সম্পর্কেও এই কারিকুলামে বলা আছে। নতুন কারিকুলামে সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোথায়, কোন কোন পর্যায়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে- সেগুলো আমরা ভাগ করেছি। কোন কোন বিষয় টোটালি ধারাবাহিক মূল্যায়নে যাবে সেগুলো বলা আছে রূপরেখায়। শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্তিমূলক যে বিষয়টি এনেছি, সেখানে ফ্ল্যাক্সিবিলিটি নিয়ে আসা হয়েছে। শারীরিক, মানসিক, সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক শিক্ষার্থী সবাইকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী বছর (২০২২) থেকে কীভাবে পাইলটিং করবো- তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। আগামী বছর প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণির পাইলটিং করবো। প্রাথমিকে ১০০টি প্রতিষ্ঠানে এবং মাধ্যমিকের ১০০টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং হবে। মাধ্যমিকের মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছয় মাস পাইলটিংয়ের পর আমরা বিশ্লেষণ করতে পারবো। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্পর্কে দীপু মনি বলেন, ২০২৩ সালে পরিমার্জিত নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করতে পারবো। ২০২৩ সালে প্রাথমিকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এটি চালু হবে। ২০২৪ সালে প্রাথমিকের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি। ২০২৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি ও মাধ্যমিকের দশম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করবো। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে ২০২২ সালে, আর বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে। ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই শিক্ষাক্রমের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছেন বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শুধু দশম শ্রেণির কারিকুলামেই এসএসসি পরীক্ষা: এতদিন নবম ও দশম শ্রেণির কারিকুলাম অনুযায়ী এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। পরিমার্জিত কারিকুলামে শুধু দশম শ্রেণিতে যা পড়ানো হবে, তার ওপরে ভিত্তি করে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, পরিমার্জিত কারিকুলামের খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। শ্রেণিকক্ষেই পাঠদান সম্পন্ন করার ব্যবস্থা রেখে পরিমার্জিত কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগের কারিকুলামে এসএসসির পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো নবম ও দশম শ্রেণির কারিকুলামে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু করা কারিকুলামে শুধু দশম শ্রেণির কারিকুলামেই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
একাদশ ও দ্বাদশের সমন্বিত মূল্যায়নে এইচএসসি’র চূড়ান্ত ফল: উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির আলাদা মূল্যায়ন সমন্বয় করে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা উপস্থাপনের পর দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ। পাবলিক পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষা দিতে হবে। প্রায়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। এ ছাড়া নৈর্বাচনিক, বিশেষায়িত কাঠামো, প্রকল্পভিত্তিক, ধারণানুযায়ী সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক ও ব্যবহারিক ও অন্যান্য উপায়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে। সেখানে যে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট হয়, প্রকল্প হয় সেগুলোর মাধ্যমে হবে। এইচএসসির চূড়ান্ত পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠসূচির ওপর প্রতি শিক্ষাবর্ষ শেষে একটি করে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কারিগরিতে এখন তাই হচ্ছে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুটো পরীক্ষার সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।
পিইসি ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হবে নিজ প্রতিষ্ঠানে: পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা আর কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে না। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং সনদও দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয়ভাবে এই তিনটি পরীক্ষা পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে পরিচিত। তবে নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ নেই। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনীকে পাবলিক পরীক্ষা বলছি না। দেখা যাবে প্রাথমিক শেষে একটা এবং ক্লাস এইট শেষে একটা সনদ পেল। অষ্টম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা বলি বা পঞ্চমে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলিনি। কিন্তু সেগুলো তো ক্লাস সমাপনী পরীক্ষা। সেগুলো তো হবে তাই না? ক্লাস সমাপনী শেষে তো মূল্যায়ন হবে। বিভিন্ন স্তরে মূল্যায়নের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের যেখানে যেখানে সনদ দেওয়া হয়েছে, সেখানে সেখানে সনদ দেব। অষ্টম আর পঞ্চমের সমাপনী থাকবে নাÑএমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমাপনী প্রতি ক্লাসেই থাকবে। শুধু তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনও ধরনের পরীক্ষা থাকবে না। তৃতীয় শ্রেণির পর থেকে সব শ্রেণিতেই সমাপনী পরীক্ষা রয়েছে। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতেও আমরা সনদ দিয়ে দেব। সনদ দেওয়ার জন্য তো পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই। পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা থাকছে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা তো পাবলিক পরীক্ষা না। এগুলো ক্লাস সমাপনী পরীক্ষা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, এখনই বলে দেওয়া যাবে না পরীক্ষা (পিইসি ও জেএসসি) হবে কি হবে না। তবে মূল্যায়ন হবে।