নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। বরং দিন দিন খারাপ যাচ্ছে। গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। ওই সময়ে বেসরকারি বেশ কিছু ব্যাংক খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পারলেও সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ২০ শতাংশের বেশি। তার বাইরে আছে অবলোপন করা আরো সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। নানা সময় আলোচনা-সমালোচনার পর টাকা উদ্ধারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো প্রায়ই আদায় সপ্তাহ বা আদায় মাস ঘোষণা করে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। করোনাকালে যখন নিয়মিত ঋণ পরিশোধে নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে, তখন খেলাপি হয়ে যাওয়া অর্থ আদায় আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী, বেসিক ও বিডিবিএল মোট ২ লাখ ৭ হাজার ৭৭১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। কিন্তু ওই ঋণের ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা অনাদায়ী অর্থাৎ খেলাপি। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। অথচ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি মাত্র ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ওই হার ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক ২ লাখ ২ হাজার ৩৩০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে। তার মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪২ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। মোট ঋণের ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশই ছিল খেলাপি। অধিক পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে মূলধন ঘাটতির শীর্ষেও রয়েছে ওসব ব্যাংক। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১১টি ব্যাংক ২৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। তার মধ্যে সরকারী ব্যাংকগুলোর ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি। ওসব ব্যাংক অবলোপন করা ঋণ থেকেও তেমন আদায় করতে পারেনি। ২০২০ সালে অবলোপনের মাধ্যমে ৬ হাজার ৫৯০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ব্যাংকের ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়। তার মধ্যে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বা মোট ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ অবলোপন করে। রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের অবলোপন করা ঋণ থেকে আদায় কমেছে মাত্র ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার মতো, যা শতকরা হিসেবে দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এদিকে অর্থনীতিবিদদের মতে, আর্থিক কেলেঙ্কারি, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। অথচ ওই বিশাল অর্থ উদ্ধারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হওয়া জরুরি। পাশাপাশি ঋণের গুণগত মান, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি, পরিচালকদের বেপরোয়া ঋণ গ্রহণের সমস্যাও চিহ্নিত করা প্রয়োজন। একই সাথে ওসব ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রম বাড়ানোও প্রয়োজন। আর শুধু তদারকি বাড়ালে হবে না, অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংকার, গ্রাহক ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর দক্ষতা বাড়ানো ও খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে যারা ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া।
আরও পড়ুন
জাতীয় গ্রিডে ৬১৮ এমএমসিএফডি গ্যাস যোগ করতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা
৪ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ
যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে বিমানে ৮৪ জন গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ