April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 23rd, 2021, 8:21 pm

নৌপথে যানবাহন পারাপারকারী অর্ধেক ফেরিই মেয়াদোত্তীর্ণ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশে ৬টি রুটে বর্তমানে মোট ৫৩টি ফেরি চলাচল করে। তবে এখন মোট ৪৮টি ফেরি চলাচল করছে। বাকি ৫টি মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। চলাচলরত ফেরিগুলোর মধ্যে ২৬টিই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। দেশে প্রতিটি ফেরি চলাচলের জন্য আইনে অনুমোদিত মেয়াদ ৩০ বছর। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর (ডিওএস) থেকেও ফেরিগুলো এ মেয়াদে চলাচলের শর্তেই অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন আইন ১৯৭৬ অনুযায়ী নির্ধারিত এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সংস্কার সাপেক্ষে দুই মেয়াদে (পাঁচ বছর করে) আরো ১০ বছর পর্যন্ত ফেরির নিবন্ধন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তবে বর্ধিত ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফেরিটি আর কোনোভাবেই চালানো যাবে না বলে আইনে উল্লেখ রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চালানো দ-নীয় অপরাধ। কোনো অভ্যন্তরীণ নৌযানের মাস্টার মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চালালে তাকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। তারপরও নৌরুটগুলোয় মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চলাচল করছে। কিন্তু ওসব ফেরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে ফেরির মাস্টার বা চালকরা ওয়াকেফহাল নন। বিআইডব্লিউটিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একাধিক ফেরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে দেখা যায় ওই ফেরিগুলো ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। বর্তমানে দেশে বিআইডব্লিউটিসির সচল ফেরিগুলোর প্রায় অর্ধেকই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। কিন্তু আইনে নিষিদ্ধ হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ ওসব নৌযান দিয়েই সংস্থাটির ফেরি পারাপার কার্যক্রম চলছে। কিন্তু মাস্টাররা মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চালানোর আইনি দিক সম্পর্কে কোনো কিছুই জানে না। তাদের কথা- কর্তৃপক্ষ মাস্টারদের সচল ফেরি দেয় আর মাস্টাররা ওই ফেরি চালায়। তার বেশি কিছু মাস্টারদের জানা নেই। তবে দীর্ঘদিনের পুরনো ফেরি চালানো নিয়ে মাস্টারদের মধ্যে বেশ ক্ষোভ রয়েছে। সম্প্রতি পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কার ঘটনায় মাস্টারদের অবহেলাকে দায়ি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। অথচ কোনো মাস্টারই ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটায় না। কিন্তু দীর্ঘদিনের পুরনো ফেরি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হলে মাস্টারদেরই দায়ী করা হয়। কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই উদ্যোগ নিলে মাস্টারদের ঘাড়ে অযথা দোষ চাপানোর প্রয়োজন পড়তো না।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরিগুলোর মধ্যে ৮টি বড় ফেরি রয়েছে। সেগুলো হলো- আমানত শাহ, এনায়েতপুরী, শাহ আলী, খানজাহান আলী, শাহ পরান, শাহ মখদুম, কেরামত আলী ও শাহজালাল। আর মধ্যম ও ছোট ফেরিগুলোর মধ্যে রয়েছে কুমারী, কাকলী, কপোতী, কস্তরী, করবী, কামিনী, কেতকী, কিশোরী, ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর, কর্ণফুলী, আইটি ৮-৩৯০, আইটি ৮-৩৯১, আইটি ৮-৩৯৪, আইটি ৮-৩৯৫, আইটি ৮-৩৯৬ ও আইটি ৮-৩৯৭। তাছাড়া মেয়াদ রয়েছে এমন ফেরিগুলোর মধ্যে রো রো বা বড় ফেরি ৬টি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ বরকত, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও গোলাম মাওলা। তার মধ্যে জাহাঙ্গীর ও বরকত ফেরি দুটির ৩০ বছর পূর্ণ হতে আর মাত্র এক বছর বাকি রয়েছে। তবে চলতি বছরে বিআইডবি¬উটিসির বহরে ৪টি নতুন ফেরি যোগ হয়েছে। সেগুলো হলো বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামাল, কদম ও কঞ্জুলতা।
সূত্র আরো জানায়, মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চলাচলের ঝুঁকির বিষয়টি অবহিত করে ডিওএস কর্তৃপক্ষকে ধারাবাহিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরেই মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরির ব্যাপারে দুই-তিন মাস পরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আজও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ বদরুল হাসান লিটন জানান, এদেশে বিশেষ বিবেচনায় কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চলছে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম হলো ৪০ বছরের পর কোনো নৌযানকেই ফিটনেস না দেয়া।
অন্যদিকে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চেšধুরী জানান, গত ১২ বছরে সরকার ২৩টি নতুন ফেরি যুক্ত করেছে। নৌ অধিদপ্তর ফেরির ফিটনেস পরীক্ষা করে। তারা যদি মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো ফেরির ফিটনেস পরীক্ষার পর চলাচলের উপযুক্ত মনে করে, তাহলে সচল রাখতে পারে। অন্যথায় সচল রাখার সুযোগ নেই।