April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, July 17th, 2021, 5:49 pm

শিগগিরই দুই দেশের সীমান্তে মারণাস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সীমান্তে হত্যাকা- কমানোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শিগগিরই সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীদের মারণাস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ হবে। দুই দেশের সীমান্তে যে কমিটমেন্ট রয়েছে তা মেনে চললে সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে পারব বলে আশা করি। শনিবার (১৭ জুলাই) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিএন্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, অনেক সময় সীমান্তে ভুল বোঝাবুঝির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। এ কারণে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে ও বিজিবি-বিএসএফ পর্যায়েও আলোচনা চলছে। শিগগিরই সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মারণাস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে আমরা আরও তৎপর হয়েছি। সীমান্তে শুধু বিওপির সংখ্যায়ই বাড়ানো হয়নি, আমরা বর্ডার সার্ভেইলেন্স সিস্টেম উন্নত করেছি। শুধু তাই নয়, মোটরযান বলুন আর আধুনিক প্রযুক্তি বলুন সবই আমরা সংগ্রহ করেছি এবং বিজিবিকে আরও সমৃদ্ধ করেছি। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে যে ধরনের চোরাচালান ছিল সেগুলো এখন আর নেই। সব ধরনের চোরাচালান আমরা শূন্যের কোঠায় নেয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সীমান্তে হত্যাকা-ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের এমনও কিছু বাড়ি আছে, যারা সীমান্তের খুব কাছাকাছি। অনেক সময় দেখা যায়, সীমান্ত এলাকার ওই লোকজনের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক থাকে এবং তাদের সবসময় ভারতে যাতায়াত রয়েছে। এ কারণেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। সীমান্তে গরু নিয়ে আসার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের গরুর খামারিরা যথেষ্ট উন্নতি করেছে। গত বছরে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশকে গরু দেয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার উত্তরে বলেছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ! ভারত গরু না দিলে আমরাও আর গরু নিতে চায় না। কারণ আমাদের খামারিরা যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়েছে। তারপরও অতিলোভী দুই-একজন ব্যবসায়ী সীমান্তে সেগুলো করে, এজন্যই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। তবে এ বিষয়ে আমাদের বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
এর আগে শনিবার সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিএন্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিজিবি মহাপরিচালকসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হলে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিএন্ডসি) কমান্ড্যান্ট তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি এই বাহিনীতে অত্যাধুনিক এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন সংযোজন করা হয়েছে। বিজিবির প্রশিক্ষণ কর্মকা-ের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চুয়াডাঙ্গায় আরেকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশে বলেন, আজ নারীরা বিভিন্ন অঙ্গনে যথাযথ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তোমরা বিজিবির সার্বিক কর্মকা- পরিচালনায় আরও গতিশীল ভূমিকা রাখাসহ বাহিনীর সুনাম ও সুখ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করবে। তিনি বিজিবির নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং নবীন সৈনিকদের নতুন জীবনে পদার্পণের শুভলগ্নে তাদের স্বাগত জানান। একই সঙ্গে নবীন সৈনিকদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের নিদর্শন তুলে ধরার জন্য বিজিবি মহাপরিচালক, বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের কমান্ড্যান্ট এবং সংশ্লিষ্ট সকল প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, জাতির পিতার হাতে গড়া এই বাহিনী আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দেশের চার হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ যেকোনো ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমন সর্বোপরি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখ-তা রক্ষার মহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সঙ্গে পালন করে আসছে। এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানসহ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিশ্বস্ততা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সেবা ও কর্তব্য পরায়ণতার মাধ্যমে সমগ্র জাতির শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার অঞ্চলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সেনাবাহিনী ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় অসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত থেকে এ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের প্যারেড কমান্ডার হিসেবে মনোজ্ঞ এ প্যারেড পরিচালনা করেন ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের কর্মকর্তা ইনচার্জ মেজর মো. শাহরিয়ার ইফতেখার এবং প্যারেড অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, বিজিবির ত্রিমাত্রিক আধুনিকায়নের ফলে অনেক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব সীমান্ত পিলারের কাছে আগে যেতে পারতাম না, সেসব পিলারের কাছে আমরা এখন নিয়মিত টহল দিতে পারছি। সীমান্তে পারাপার আগের তুলনায় অনেক কমেছে। উল্লেখ্য, ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়। বিজিটিসিএন্ডসিতে প্রশিক্ষণ নেয়া মোট ৭৮৪ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৫৬ জন পুরুষ এবং ১২৮ জন নারী। বিজিটিসিএন্ডসি ছাড়াও বিজিবির অন্যান্য আরও আটটি প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়। সর্বমোট শপথ নেবেন দুই হাজার ৭৩৬ জন সৈনিক। তাদের মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৬০৮ জন এবং নারী ১২৮ জন। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো। ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বিভিন্ন উপদেশ ও দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর বিশেষ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ, শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ এবং মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ বাহিনীর আটজন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিডিআরের তৃতীয় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চোরাচালান বিরোধী ও প্রেষণামূলক মূল্যবান বক্তব্যের কথা স্মরণ করে চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকদেরকে পেশাগত দক্ষতা অর্জনসহ ব্যক্তিগতভাবে সুদৃঢ়, সুশৃঙ্খল, নির্লোভ ও নির্ভীক সর্বোপরি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়ার উপদেশ দেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা স্মরণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর ৪০২ রিক্রুট (জিডি) নয়ন এবং অন্যান্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।