April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, September 20th, 2021, 8:15 pm

সুন্দরবনে ঘন ঘন অগ্নিকান্ডের কারণ কী

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখ- বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।
বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দরি বনভূমি। এই বনভূমির প্রধান বৃক্ষ হলো সুন্দরী। এই সুন্দরী গাছের প্রাচুর্যের কারণেই এই বনভূমির নাম সুন্দরবন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সুন্দরবন ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বস্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখ-ের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে; যথাক্রমে ‘সুন্দরবন’ ও ‘সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান’ নামে। এই সুরক্ষা সত্ত্বেও, আইইউসিএন রেড লিস্ট অফ ইকোসিস্টেম ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে ২০২০ সালের মূল্যায়নে ভারতীয় সুন্দরবনকে বিপন্ন বলে মনে করা হয়েছিল। সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক  স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল।[৪] বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ১০৬ বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
মাছ এবং কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণী ছাড়া অন্য বন্যপ্রাণী হত্যা বা দখলের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, মনে হচ্ছে বিংশ শতাব্দীতে হ্রাসপ্রাপ্ত জীববৈচিত্র্য বা প্রজাতির ক্ষতির একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাটার্ন রয়েছে, এবং বনের পরিবেশগত গুণমান হ্রাস পাচ্ছে।পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বন অধিদপ্তর। বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে বন সংরক্ষণের জন্য একটি বন চক্র তৈরি করা হয় এবং এরপর থেকে প্রধান বন সংরক্ষকদের নিযুক্ত করা হয়েছে। উভয় সরকারের কাছ থেকে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সুন্দরবন প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণে হুমকির মুখে রয়েছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভূমিধ্বসের কারণে প্রায় ৪০% সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং স্বাদুপানির সরবরাহ হ্রাসের কারণে বনটি বর্ধিত সালিনিটিতেও ভুগছে। আবার ২০০৯ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আইলা ব্যাপক হতাহতের সাথে সুন্দরবনকে বিধ্বস্ত করে।
তবে সুন্দরবনে বারবার আঘাত হেনেছে আগুন। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এ নিয়ে ২৩ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটলো। সর্বশেষ এই বছর আটই ফেব্রুয়ারি ধানসাগর এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। এর আগের ২২ বারের আগুনের ঘটনায় সুন্দরবনের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বন বিভাগ হিসাব করেছে।
সুন্দরবন শুধু আমাদের জাতীয় সম্পদই নয়, এটি হলো একটি বৈশ্বিক ঐতিহ্য। সুন্দরবন হলো উপকূলীয় মানুষের ঢালস্বরূপ। সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্থ হলে দুর্যোগ কবলিত উপকূলের মানুষ যে আরও প্রভূত দুর্যোগের শিকার হবে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এমন গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যমন্ডিত একটি বনাঞ্চলে কেন বারবার আগুন লাগছে এ বিষয়ে আজও কোন সদুত্তর পাওয়া যায় না। এসব আগুনের পেছনে বন ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা, বন সংলগ্ন নদ-নদী মরে যাওয়া, অসচেতনতা, নাশকতা, ফেলে দেয়া বিড়ি-সিগারেটের আগুনকে দায়ী করা হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব অগ্নিকান্ডের পেছনে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে।
সর্বশেষ অগ্নিকান্ডে মৌয়ালিদের দায় কতটুকু: সর্বশেষ অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটে সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে নদীর  স্রোতের মতো তা দ্রুত দৌড়াতে থাকে। বাগেরহাটের শরণখোলার সোনাতলা গ্রামের সেলিম জানালেন, আগুন গাছ থেকে গাছে ছড়িয়েছে, তবে নিচের স্তূপ করা পাতায় সূত্রপাত বলে গতি ছিল ভূমিতে। বাতাসে ওপরের দিকে পাতায় ছড়ালে দাবানলে রূপ পাওয়া অসম্ভব ছিল না।
আগুনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সন্দেহ থাকে মৌয়ালদের মশাল নিয়ে। প্রতিবার অগ্নিকান্ডের পর দোষটা তাদের ঘাড়েই চাপানো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভেতরের শুকনো পাতা বেঁধে বাইরের দিক কাঁচা পাতা দিয়ে বানানো হয় মশাল। স্থানীয় মানুষ ডাকে ‘কারু’ নামে। ভেতরের শুকনো পাতার সংখ্যা বেশি হলে পাঁচ থেকে সাতটি। সাধারণত আগেই সেটা পুড়ে কাঁচা পাতাকে ধরতে চেষ্টা করলে তখন ধোঁয়া ছড়ায়। এই কারু একটি চাক কাটতে কাটতেই নিভে যায়। যদি অবশিষ্ট থাকেও, তাহলে তা পানি বা ভেজা মাটিতে গুঁজে নিভিয়ে দেওয়া হয়। মশাল বা বিড়ি-সিগারেট থেকে আগুন তখনই লাগতে পারে, যখন এই জেলে মৌয়ালরা অসচেতন থাকেন। কিন্তু নিজের একমাত্র জীবিকার স্থানে কেউ অসচেতন হয় না, আর বনজীবীদের পক্ষে তা বনকে অপমানের শামিল। প্রথমত, একই জায়গায় তাঁদের আবার মধু বা মাছ সংগ্রহের জন্য আসতে হয়। দ্বিতীয়ত, অপরাধ প্রমাণিত হলে বন আইনের কঠোর শাস্তি থেকে পরিত্রাণের সহায়তা তাঁদের নেই।
করোনার জন্য তিন মাস বন বন্ধ থাকাকালে বনজীবী অনেকের ঘরেই দুই বেলা খাবার থাকত না। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে বনের গাঙ, খাল বা ভারানিতে গোপনে মাছ ধরতে গিয়েছেন। কয়েকটা মাছের বিনিময়ে কিনেছেন দুই কেজি চাল। বিষ দিয়ে মাছ ধরার ঘটনাও যে ঘটে না, তা নয়। তবে এ সংখ্যা অনুল্লেখযোগ্যই। বড় খালের মুখ আটকে বিষ দিয়ে মাছ ধরার ঘটনা বড় শিকারিদের, যারা সংঘবদ্ধ চক্র। তাদের নিরাপত্তার দায় ক্ষমতাসীনদের। তাদের পুলিশও ধরে না, সেই জেলে-মৌয়ালদের হাঁড়ির গহ্বরে থাকে না হা হা করা শূন্যতা।
উল্লেখ্য যে, এ পর্যন্ত ২৪টি তদন্ত প্রতিবেদনে আগুনের সূত্রপাত হিসেব ১৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে অসাবধানতাবশত জেলে-মৌয়ালদের ফেলে দেওয়া আগুনই সম্ভাব্য কারণ। এই কারণের সঙ্গে ৫ বার সংযুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, মাছ মারার সুবিধার জন্য দুষ্কৃতকারীরা আগুন দিয়ে থাকতে পারে।
অগ্নিকান্ডের সাথে নদীর সম্পর্ক: সুন্দরবন সংলগ্ন ভোলা নদী কয়েক বছর আগেও ছিল এক কিলোমিটারের বেশি চওড়া। এই নদী এখন মরে গেছে। মৃত ভোলা নদীর ওপর দিয়ে এখন ভাটার সময় হেঁটেই যাওয়া যায় সুন্দরবনে। সোনাতলা গুচ্ছগ্রাম থেকেও সুন্দরবন এখন পায়ে চলাচলের পথ। কখনোসখনো বাঘ চলে আসে লোকালয়ে। বনসংলগ্ন বাসিন্দারা গরু-মহিষ চরাতে চলে যান বনে। বাঘও চিনে রাখে লোকালয়ের পথ। অবাধ যাতায়াত বন এবং লোকালয় উভয়ের জন্যই সমান ক্ষতির আয়োজন। মানুষের উপস্থিতিতে বন্য প্রাণী নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বিপরীতে লোকালয়ে বাঘের প্রবেশে স্থানীয় মানুষ বিপন্নতায় পড়ে আরও বিরূপ হতে শুরু করে বন্য প্রাণীর ব্যাপারে।
মে মাসের অগ্নিকান্ডের সময় দাসের ভারানিতে শুকনা পাতা পড়ে পচে কয়েক ইঞ্চি পুরু হয়েছিল। এখানে প্রমত্তা ভোলা নদী শুকিয়ে হারিয়েছে বন আর লোকালয়ের সীমানা। শুষ্ক মৌসুমে এই দাসের ভারানিতে জোয়ারের পানিও আর এখন ওঠে না। ২০০৭ সালের মার্চে চাঁদপাই রেঞ্জের পচাকুড়ালিয়া বিলের আগুনের কারণ ছিল ভোলা নদীর আড়ুয়া বেড় খালটির নাব্যতা কমে জোয়ার ভাঁটা না হওয়া। এতে গাছের মরা ডাল, লতাপাতা জমে তৈরি হয় আগুন লাগার পরিবেশ। সুন্দরবনের আগুনের ঘটনার অধিকাংশ পূর্ব বন বিভাগে। ধানসাগর আর চাঁদপাই রেঞ্জের এ জায়গাগুলো দ্রুত নাব্যতা হারিয়ে পরিণত হয়েছে শুষ্ক অঞ্চলে। সামান্য আগুনই এখন দ্রুত ছড়ায়।
পানির প্রবাহ না থাকায় ভবিষ্যৎ অগ্নিকান্ডে বনকে কতখানি রক্ষা করা যাবে, তা একটি বড় প্রশ্ন। অপরিকল্পিত নদী খনন, অবৈধ বালু উত্তোলন আর বাঁধ-ব্যারাজ দিয়ে নদীশাসনের ফলাফলে প্রকৃতি চরম বৈরি রূপ নিচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনো প্রকার শিল্পকারখানা নির্মাণ করা যাবে না। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে অনুমোদিত ১৯০টি ব্যবসা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে ২৪টি প্রকল্প মারাত্মক দূষণকারী হিসেবে ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এই শিল্পকারখানার মালিকদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে কি না, তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। শিল্পকারখানা দ্রুত সরিয়ে আইন অমান্যকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে সুন্দরবন রক্ষা সম্ভব নয়।
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলো আর আগের মতো খরস্রোরােতা নয়। একসময় সুন্দরবনের মাঝিদের জোয়ার-ভাটার হিসাব অনুপুঙ্খ জানতে হতো। এখন আর তার দরকার পড়ে না। দ্রুত বদলে যাচ্ছে তাদের চেনা নদীপথ। সুন্দরবনের নদী বাঁকে বাঁকে বড় হতো। এখন স্থানীয় লোকজন বলেন, বাঁকে বাঁকে শুষ্ক হয় নদী।
সুন্দরবনের অগ্নিকান্ডের তদন্ত: সুন্দরবনে সংগঠিত অগ্নিকা-ের ঘটনায় গঠিত প্রতিটি তদন্ত কমিটিই গঠন করা হয় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে। সেখানে পরিবেশবিদ, স্থানীয় বনজীবী বা সুন্দরবন সংরক্ষণ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারও উপস্থিতি প্রয়োজন কি-না, তা আলোচনার দাবি রাখে। জীববৈচিত্র্যময় সুন্দরবনে দুই দশকের সব আগুনের ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করা হয়েছে ২৩ লাখ ৫৩৩ টাকা। এর মধ্যে পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ হয় ধারণার মাধ্যমে। বিপন্ন জীববৈচিত্র্য বা অণুজীব ও প্রাণিজগতের ক্ষতির হিসাবের কোনো সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদনে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ প্রয়োজন। ২০০২ সালের কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় ১০ একর জমিতে ২০টি সুন্দরীগাছ, ৩০টি গেওয়া ও সাড়ে চার শ হেঁতালগাছ পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় কোনো কারণ জানা যায়নি এবং সম্পদের হিসাব থাকলেও ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ নেই। ২০০৪ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনে ৯ শতক জায়গার শণ পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২৩০ টাকা মাত্র। ২০০৬ সালে চাঁদপাই রেঞ্জে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ এলাকা পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ ৫৫০ টাকা মাত্র। সম্পদ নষ্টের সাড়ে ২২ লাখ টাকার মধ্যে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকাই হচ্ছে এ বছরের মে মাসের অগ্নিকান্ডের ঘটনার ক্ষতির হিসাব।
দুই ডজন প্রতিবেদনের মধ্যে জেলে-মৌয়ালদের ফেলে আসা আগুন থেকে অগ্নিকা- হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ বার। এই ১৫ বারের মধ্যে প্রচন্ড দাবদাহের কথা সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ আছে ৪ বার, মাছ ধরার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে হতে পারে উল্লেখ ৪ বার, আক্রোশবশত ইচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগের সম্ভাবনার উল্লেখ ৪ বার।
প্রচন্ড দাবদাহ ও শুষ্ক আবহাওয়াসহ অধিকাংশ সুপারিশে গুরুত্ব পেয়েছে দাহ্য পদার্থ নিয়ে বনে প্রবেশের বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা, নদী খননের প্রস্তাব এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার চালানোর কথা। এই পুনরাবৃত্তির ধারা স্পষ্ট হয় যে আগের পরামর্শ বাস্তবায়নে ঘাটতি অব্যাহতভাবেই থাকছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, মে মাসে আগুনের ঘটনার সময় জেলে-মৌয়ালেরা বনে ছিল। প্রতিটি আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটিতে স্থানীয় মানুষের নাম না থাকলেও তদন্ত ও সুপারিশমালা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই তৈরি করা হয়। অতীত থেকেই রেওয়াজ আছে, কোনো সূত্র না পেলে বন বিভাগের ওপর দায় চাপানো হয়। খাল খননের প্রজেক্ট পাস হতে চার থেকে পাঁচ বছর লেগেছে। ওয়াচ টাওয়ারের প্রস্তাব পাস হয়েছিল অস্থায়ীটা। এ কারণে পূর্বের ওয়াচ টাওয়ার যতবারই হয়েছে, তা বাঁশ-খুঁটি দিয়ে বানানো, যা দ্রুত ভেঙে যায়। স্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের প্রস্তাব এখন প্রক্রিয়াধীন।
আগুন থেকে রক্ষা বা বন্য প্রাণী বাঁচাতে হলেও প্রয়োজন দায়িত্বরত মন্ত্রণালয় ও কর্তাব্যক্তিদের জবাবদিহির মধ্যে আনা। প্রতিটি আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটির দেওয়া সুপারিশমালায় পুনরাবৃত্তি সত্ত্বেও সেটুকুই যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলেও আপাতত কিছুটা নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়। নানামুখী অত্যাচারে সুন্দরবন যে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হার্যে ফেলছে, এবং পরবর্তীতে ছোট আগুন লাগলেই যে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে না এ ব্যাপারে নিঃশঙ্ক হওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা কতটুকু প্রস্তুত আছেন?