October 7, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, August 15th, 2021, 8:09 pm

অধিকাংশ দোকানই ক্রেতা থেকে ভ্যাট আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের অধিকাংশ দোকানের বিক্রেতাই ভ্যাট যোগ করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে। আর বেশির ভাগ ক্রেতাই তা না জেনেই পণ্যমূল্যের সঙ্গে ভ্যাট পরিশোধ করে থাকে। কিন্তু আদায়কৃত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে অনেক দোকানের মালিকই তা নিজের পকেটে রেখে দিচ্ছে। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জনবলের অভাবে ওসব ভ্যাট ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। দেশের প্রায় ৮৮ শতাংশ দোকানই সরকারি কোষাগারে ভ্যাট জমা দিচ্ছে না। পাশাপাশি ওসব দোকান অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধনও গ্রহণ করেনি। তাছাড়া ভ্যাট প্রদানকারী ১২ শতাংশ দোকানের মধ্যে আবার ৮০ শতাংশই হিসাবের চেয়ে কম ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। মোট আদায়কৃত মোট ভ্যাটের প্রায় ৬০ শতাংশ দেশের বড় মাপের ১৫৭টি প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করে থাকে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা বাড়লে ওসব প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ বাড়ে। মূলত রাজধানীর চেয়ে বাইরের দোকান মালিকরাই ভ্যাট প্রদানে বেশি অনীহা দেখাচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে ব্যবসারত দোকানগুলো থেকে মোট আদায়কৃত ভ্যাটের ৬০ শতাংশ দিচ্ছে সিরামিক, জ্বালানি, আবাসন, নির্মাণ, সিমেন্ট, মোবাইল ফোন খাতের ১৫৩টি প্রতিষ্ঠান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের গত তিন মাসের (মে-জুলাই) এক জরিপকালে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেনি এমন দোকানকে তাৎক্ষণিকভাবে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে। আর হিসাবের চেয়ে কম ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভ্যাট পরিশোধ না করলে হিসাব জব্দ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও তাদের জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নিবন্ধিত ৩০ লাখ দোকান রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভারের এক হাজার ২৪টি দোকান জরিপ করে দেখা যায় মাত্র ১২০টি দোকান অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেছে। বাকি ৯০৪টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয়া তো দূরের কথা, ভ্যাট নিবন্ধনই গ্রহণ করেনি। আর ভ্যাট নিবন্ধিত ওই ১২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাসে মাত্র ৫ হাজার টাকার ওপরে ভ্যাট দেয় ৪৫টি দোকান। বাকি ৭৫টি প্রতিষ্ঠানই ৫ হাজার টাকার নিচে ভ্যাট দেয়। আর ভ্যাট দেয়া ১২০টি দোকানের ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খরচ ও মুনাফা হিসাবে কষে দেখা যায় ওসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটের পরিমাণ আরো বেশি হয়। নরসিংদীর দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেট স্টেশন রোডের ইনডেক্স প্লাজা ও জামান শপিং কমপ্লেক্সের ২৩৭টি দোকানের একটিও ভ্যাট দেয় না। নারায়ণগঞ্জের মার্ক টাওয়ারে মোট ৩০টি দোকানের মধ্যে মাত্র একটি, সায়েম প্লাজায় ৫০টি দোকানের মধ্যে ৫টি, সমবায় নিউ মার্কেটের ৮০টি দোকানে মধ্যে একটি, আল হাকিম সেন্টারের ১৪টির মধ্যে একটি অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন করেছে। তাছাড়া রাজধানীর সিটি সেন্টারের ১৯৮টি দোকানের মধ্যে ১০টি, ট্রপিক্যাল আলাউদ্দিন টাওয়ারের ৮৩টি দোকানের মধ্যে ৫০টি, আরএকে শপিং কমপ্লেক্সের ৩৩টি দোকানের মধ্যে ২৬টি এবং সুভাস্তু নজর ভ্যালির ৫২৬টি দোকানের মধ্যে ২৬টি অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেছে। তবে সুভাস্তু নজর ভ্যালিতে ঢাকা উত্তর কমিশনারেট থেকে জরিপকালেই তৎ্ক্ষণিকভাবে ৫০০ দোকানকে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন দিয়ে তা মার্কেটের নিচে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকেন দোকান মালিকদের ভ্যাট না দেয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, ভালো-মন্দ সব জায়গায় আছে। অনেকেই সাধারণ ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট নিয়ে সরকারকে দেয় না। আবার ভালো ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দেন বলেই সরকার ভ্যাট পায়।
অন্যদিকে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, অনেক দোকান ভ্যাটযোগ্য হয়েও ভ্যাট পরিশোধ করছে না। এমনকি নিবন্ধনই নেয়নি। অনেকে পরিশোধ করলেও হিসাবের চেয়ে কম দেয়। তারপরও কিছু সৎ এবং ভালো প্রতিষ্ঠান হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধ করছে বলেই এনবিআরের আয় হচ্ছে। ভ্যাট ফাঁকিবাজ দোকান চিহ্নিত করতে জরিপ চালাবে এনবিআর।