এফএনএস:
মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে পরিবহন ধর্মঘট। গত বৃহস্পতবিার ভোর ৬টা থেকে রাজশাহী থেকে দূরপাল্লা বা আন্তঃজেলা রুটের কোনো বাস ছাড়েনি। এতে সড়কপথে রাজধানী ঢাকাসহ পুরো দেশের সঙ্গে রাজশাহীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পুরো রাজশাহী বিভাগ। আর এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দুদিন থেকে গন্তব্যে যেতে নানান ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। এর মধ্যে শুক্রবার (২রা ডিসেম্বর) থেকে নতুন করে শুরু হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও থ্রিহুইলারের ধর্মঘট। শুক্রবার (২রা ডিসেম্বর) ভোর ৬টা থেকেই সড়কে অবাধ চলাচল ও হয়রানিমুক্ত রেজিস্ট্রেশনের দাবিতে রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য চলছে এ ধর্মঘট। এদিকে বাস বন্ধের পর একমাত্র পরিবহন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তিন চাকার যান। ভোর থেকে সেসব যান চলাচল বন্ধ আছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চললেও বেলা বাড়ার সঙ্গে তার সংখ্যা একেবারে কমে এসেছে। ফলে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে রাজশাহী। এখন একমাত্র ট্রেনই যোগাযোগের মাধ্যম। সব পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বেশ বেকায়দায় পড়েছে যাত্রীরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকদের হেঁটে রাজশাহী নগরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এদিকে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে হেঁটে আসছেন নেতাকর্মীরা হেঁটে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন মহিদুল ইসলাম নামের এক যুবক। তিনি বলেন, কোনো গাড়ি চলছে না। প্রায় ৩০ কিলোমিটার হেঁটে রাজশাহীতে এসেছি। এখনো হাঁটছি। হয়তো আর কিছুক্ষণের মধ্যে সমাবেশস্থলে পৌঁছাবো। সিরাজগঞ্জ বিএনপির প্রচার সম্পাদক মকবুল বলেন, পরিবহন ধর্মঘট আমাদের সমাবেশে যোগদানে বাধা দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার যতই বাড়াবাড়ি করুক, ক্ষমতা এবার ছাড়তেই হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাধ্যমে আমাদের কর্মসূচি থামবে। সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিদার হোসেন ভুলু বলেন, সরকার বৈধভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আমদানি করে। সেই সিএনজি বিক্রি করে সরকার লাভও করে। তবে আমাদের লাইসেন্স পেতে কেন ভোগান্তি হবে। প্রধান প্রধান সড়ক বাদে সব সড়কেই চলাচলে অনুমতি আছে। তবে কেন আমাদের হয়রানি করা হবে। লাইসেন্স ও হয়রানি মুক্তির দাবিতে ভোর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছি। ভুলু আরও বলেন, বিএনপির সমাবেশর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি বাস মালিক সমিতির সঙ্গেও নয়। আমরা আমাদের যৌক্তিক কিছু দাবিতেই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। পরিবহন নেতাদের দাবি, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার ও পুলিশ হয়রানি বন্ধে বারবার বলা হলেও সরকার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। তাই সেবামূলক পেশা হলেও দাবি আদায়ে তারা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়েছেন। রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল করছে। এগুলো বন্ধসহ ১০ দাবি রয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, শনিবারের গণসমাবেশে বাধা দিতেই এ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। আর কেবল তাই নয়, বিকল্প পরিবহনে বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা এলেও পথে পথে গাড়িতে তল্লাশি করছে পুলিশ। রাস্তায় গাড়ি আটকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশের সমন্বয়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই এ পরিবহন ধর্মঘট। তিনি আরও বলেন, এরপরও রাজশাহী বিভাগের আট জেলা থেকেই তাদের নেতাকর্মীরা বিকল্প পরিবহনে রাজশাহী আসছেন। সরকার যতভাবেই চেষ্টা করুক তাদের গণসমাবেশে জন¯্রােত নামবেই। শত বাধা উপেক্ষা করে বিএনপি নেতাকর্মীরা গত বুধবার রাত থেকেই রাজশাহীতে আসছেন। তারা গণসমাবেশস্থলের পাশে ঈদগাহ মাঠে এ শীতের মধ্যেও খোলা আকাশের নিচে রাত্রী যাপন করছেন। তবে গত বৃহস্পতবিার রাত থেকে পুলিশ রাজশাহীর প্রবেশ পথে ঢুকতে বেশি বাধা দিচ্ছে পুলিশ। যানবাহন থেকে নামিয়ে দিয়ে নেতাকর্মীদের নিদারুণ কষ্ট দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন- এ বিএনপি নেতা। নিত্যপণ্য ও জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের প্রত্যেক বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লার পর ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ করবে দলটি। রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের আয়োজন চলছে। এটি বিএনপির নবম বিভাগীয় গণসমাবেশ। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি