নিজস্ব প্রতিবেদক:
অবৈধভাবে দেশে বিপুল পরিমাণ বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট। কম নিকোটিনের দোহাই দিয়ে এসব বিদেশি সিগারেট দেদার বাজারে ছাড়া হচ্ছে। তাতে সরকার হারাচ্ছে হাজার কোটি টাকার ওপর রাজস্ব। করোনা মহামারির পর বিদেশি সিগারেট আমদানি কয়েক গুণ বেড়েছে। আর শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা অবৈধ বিদেশি সিগারেট দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কম মূল্য, আকর্ষণীয় মোড়ক, ভিন্ন ভিন্ন ফ্লেভার ও সহজলভ্য হওয়ায় ওসব সিগারেটে ঝুঁকছে তরুণ প্রজন্মের ধূমপায়ীরা। যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি দেশ থেকে অর্থ পাচার ও রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে দেশে আমদানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বিদেশী সিগারেট। আর অবৈধ বিদেশি সিগারেটের দৌরাত্ম্যে সরকারের চলতি অর্থবছর গত অর্থবছরের তুলনায় তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অতি উচ্চস্তর ও উচ্চস্তরের সিগারেট থেকে ৫ শতাংশ রাজস্ব আয় কমেছে। প্রবৃদ্ধির ধারা অনুযায়ী বছরের বাকি ছয় মাসে তা আরো বাড়বে। বিষয়টি নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা সেল কাজ করছে। মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ যে সিগারেট আসছে তাতে সরকার শুধু চলতি অর্থবছরই অন্তত ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, শক্তিশালী চক্র মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্র ও বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে দেশে নিয়ে আসছে বিদেশি সিগারেট। ওসব সিগারেট চোরাকারবারিরা ফ্ল্যাট, বাসা ভাড়া নিয়ে মজুদ করছে। পরে তা সারা দেশের পাইকারি, মাঝারি ও ক্ষুদ্র দোকানিদের কাছে বিক্রি করছে। গত দুই বছরে শুধু চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে অবৈধভাবে আসা প্রায় ৯০ কোটি শলাকা বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেট জব্দ করা হয়েছে। সেগুলোর মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে শুল্ক গোয়েন্দাদের জালে ইতোমধ্যে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশি সিগারেট আমদানির সঙ্গে জড়িত কিছু প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে। সূত্র আরো জানায়, সরকার স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষে প্রতি বছরই সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি করছে। গত ৫ বছরে দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়েছে সিগারেটের দাম। এ সুযোগে বাংলাদেশ থেকে কম দামে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন দেশের সিগারেট কয়েক বছর ধরে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে। ওসব সিগারেট দেশীয় একই স্তরের সিগারেটের থেকে প্রায় অর্ধেক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। গত বাজেটে অতি উচ্চ স্তরের সিগারেটের দাম বেড়ে যাওয়ায় তুলনামূলক সস্তা বিকল্প হিসেবেও ওসব সিগারেট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আর তা অবৈধভাবে আমদানি করা হচ্ছে। তাতে প্রতি বছরই সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। এদিকে অবৈধ সিগারেট প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের মতে, মিথ্যা ঘোষণায় বিভিন্ন জরুরি পণ্যের আড়ালে অবৈধভাবে আসা বিদেশি সিগারেটে সরকার রাজস্বই হারানোর পাশাপাশি দেশ থেকেও পাচার হচ্ছে বিপুল টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে কঠোর হওয়া।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ