অনলাইন ডেস্ক :
আইনি পদক্ষেপের অভাবে পরিষ্কার করা রাজধানীর খালগুলো আবারো পুরনো রূপেই ফিরেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খাল পরিস্কার করলেও কিছুদিনের মধ্যেই খালের দুই পাড় আবারো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। মূলত খাল দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন রাজধানীর অন্যতম ৩টি খাল হচ্ছে শ্যামপুর, জিয়া সরণি ও কুতুবখালী খাল। বিগত ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর পরই ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ খালগুলো পরিষ্কারে অভিযানে নামে। গত আড়াই বছরে বেশ কয়েক দফায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলেছে। কিন্তু মাত্র কয়েক সপ্তাহের মাথায় আবার পুরনো রূপ ধারণ করেছে খালগুলো। যদিও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন রাজধানীর প্রতিটি খালই নিয়মিত পরিষ্কার করে। কিন্তু তারপরও সেগুলো দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। একবার পরিষ্কারের পর মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো খালগুলো দূষিত হয়ে পড়ছে। কিন্তু দূষণ রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। ফলে নগরবাসী খাল পরিষ্কারের সুফল পাচ্ছে না। বরং বছরের পর বছর ধরে ওই খাতে দুই সিটি করপোরেশনের ব্যয় বেড়েই চলেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ডিএসসিসির অধীনে ১১টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে ২৯টি খাল রয়েছে। খালগুলো পরিষ্কারের জন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনার পাশাপাশি বছরের বিভিন্ন সময় নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিশেষ করে ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুমে খালগুলোর আবর্জনায় যাতে এডিস মশা ডিম না পাড়ে সেজন্যও আলাদা করে খাল পরিষ্কার অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু তার কিছুদিন পর থেকেই খালগুলো আবারো দূষণের কবলে চলে যায়। মূলত সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে কিংবা আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে কখনই খালগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব নয়। আর খাল দূষণমুক্ত রাখার জন্য সিটি করপোরেশনগুলোকে অবশ্যই নিজস্ব আইনি ক্ষমতা প্রয়োগের চর্চা জরুরি। তাতে খাল দূষণ পুরোপুরি বন্ধ না হলেও জনসচেতনতা বাড়বে। সাধারণ মানুষ জানবে খাল দূষণ করলে শাস্তি পেতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, খাল দূষণ রোধে সিটি করপোরেশনের আইনি ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টির প্রচলন না থাকায় তা করা হয় না। তাছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে খাল দূষণ রোধে আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করা হলো সাধারণ মানুষ খাল দূষণ যে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ সে বিষয়ে সজাগ হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মাদ শফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া জানান, বহির্বিশ্বে খাল দূষণে জরিমানা করার উদাহরণ রয়েছে। দূষণ রোধে সিটি করপোরেশন জনসচেতনতা বাড়াতে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা, জরিমানা, শাস্তি দেয়াও জনসচেতনতা বৃদ্ধিরই অংশ। বিষয়টা শুরু করলে ফল মিলবে এবং মানুষের মাঝে খাল দূষণের প্রবণতাও কমে আসবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা জানান, খাল দূষণ রোধে সিটি কর্পোরেশন কাজ করছে। খালে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। খালের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু খাল দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনি প্রয়োগ একটু জটিল। ওই কারণেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় না।
খাল দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের প্রয়োগের অভিমত ব্যক্ত করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, সিটি করপোরেশন আইনে খাল দূষণকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও শাস্তির কথা বলা আছে। কিন্তু ওই চর্চাটা এখনো শুরু হয়নি। তবে এখন জোরালোভাবে আইনি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি