December 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, June 27th, 2023, 10:09 pm

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও ঈদ ঘিরে সক্রিয় জাল টাকার চক্র

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও ঈদ ঘিরে সক্রিয় জাল টাকার চক্র। তাদের মূল টার্গেট কোরবানীর পশুর হাট। নিত্যনতুন কৌশলে জাল টাকার চক্রগুলো রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ১০০, ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোটের পাশাপাশি ২০ ও ৫০ টাকার জাল নোটও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল টাকার নোট দেশে ঢুকছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায়ও তৈরি হচ্ছে জাল টাকা। পাশাপাশি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকও জাল টাকা আনছে ও তৈরি করছে। পুলিশ ওই প্রতারক চক্রের অনেক সদস্যকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করলেও পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি ঘটছে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাল টাকার চক্রগুলো দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা এখন ফেসবুকে পেজ খুলে প্রকাশে জাল টাকা কেনাবেচার প্রচারণা চালাচ্ছে। এমনকি হোম ডেলিভারিও দিচ্ছে। চক্রটির প্রধান টার্গেট ঈদ।

জাল টাকার সঙ্গে জড়িতরা গ্রেপ্তার হলেও তাদের আটকে রাখা সম্ভব হয় না। এদের অধিকাংশই এখন মুক্ত। গত ১৫ বছরে জাল টাকা সংক্রান্ত সাড়ে ৫ হাজার মামলা হলেও আসামিদের সাজা হয়নি। যে কারণে জাল টাকার ব্যবসা বেড়েই চলছে। সূত্র জানায়, জালিয়াত চক্রের বিশাল সিন্ডিকেট দেশব্যাপী নিয়ন্ত্রণ করছে জাল টাকার ব্যবসা। এর সঙ্গে বিদেশি নাগরিকও জড়িত রয়েছে। এ চক্রের একাধিক সদস্য কয়েক বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জাল টাকা ও তৈরির সরঞ্জামসহ ধরা পড়লেও বন্ধ হয়নি তাদের তৎপরতা। জাল টাকার নোট নিজেদের মধ্যে লেনদেন করতে প্রতারকরা বিভিন্ন ধরনের সংকেত ব্যবহার করে থাকে। জাল এক হাজার টাকার নোটকে জুব্বা, ৫০০ টাকার নোটকে পাঞ্জাবি এবং ১০০ টাকার নোটকে ধোপা বলে ডাকা হয়। জাল টাকা গ্রামগঞ্জে এজেন্টদের কাছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করছে সংঘবদ্ধ চক্র। ১০০ টাকার জাল নোট ৪০ টাকায়, ৫০০ টাকার জাল নোট ২০০ টাকায় এবং এক হাজার টাকার জাল নোট বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। এমনকি প্রতারক চক্রের পক্ষ থেকে জাল নোট বিক্রির জন্য ফেসবুকে এ গ্রেড জাল নোট, টাকা চাই, জাল নোট, জাল টাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয়কেন্দ্র, রিয়েল সেলস্, টাকা বিজনেসসহ বিভিন্ন নামে পেজ ও গ্রুপ খুলে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এরপর জাল টাকা কিনতে আগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে জাল টাকা ডেলিভারি দেয়।

বিভিন্ন স্থানে যেসব জাল নোট ধরা পড়ে তার সঠিক পরিসংখ্যান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে জাল নোট ধরা পড়লে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর বিধান থাকলেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাশ কর্মকর্তারা তা নষ্ট করে ফেলেন। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যন্ত জাল নোটের হিসাব পৌঁছে না। বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকেও ইদানীং জাল নোট বেরিয়ে আসছে। বুথ থেকে জাল নোট বেরিয়ে এলে গ্রাহকের পক্ষে তা আর বদলে নেয়া সম্ভব হয় না। ঢাকার বাইরে জাল টাকার চিত্র উদ্বেগজনক। প্র

তারক চক্র রাজধানীতে জাল টাকা চালাতে খুব বেশি সুবিধা না করতে পারায় গ্রামাঞ্চলকে বেছে নিচ্ছে। জাল টাকা সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় সেখানের সহজ-সরল মানুষ খুব বেশি প্রতারিত হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর কদমতলীর রাজবাড়ি, ডেমরার বাঁশেরপুল ফরমান খাঁ মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকার কারখানার সন্ধান মেলে। এ ছাড়া রামপুরা, মোহাম্মদপুর, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল নোটের কারখানায় অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রুপ। এর বাইরে আছে আরো অর্ধশতাধিক জাল টাকার ডিলার। প্রত্যেক ডিলারের সঙ্গে কমপক্ষে পাঁচ-ছয়জন বাজারজাতকারী আছেন। এসব কারখানায় ভারতীয় রুপিসহ বিভিন্ন দেশের জাল মুদ্রা তৈরি হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-বিদেশে। জাল টাকা তৈরি ও বিপণনের কাজে জড়িত চক্রের সদস্যরা তিন ভাগে বিভক্ত। একটি গ্রুপ অর্ডার অনুযায়ী জাল নোট তৈরি করে, অপর গ্রুপ টাকার বান্ডিল পৌঁছে দেয়, আরেক গ্রুপ এসব টাকা বাজারে ছড়িয়ে দেয়। জালিয়াত চক্র প্রথমত অনলাইন থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন নোটের ছবি ডাউনলোড করে ল্যাপটপে সংরক্ষণ ও প্রিন্টারের সাহায্যে প্রিন্ট করে। পরবর্তীতে সেসব ছবিগুলো এ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে এপিঠ-ওপিঠ সমন্বয় করে লিপি গোল্ডের মোটা ও পিচ্ছিল অফসেট কাগজের উপর এক পাতায় চারটি নোট প্রিন্ট করে। এরপর সেই কাগজে তারা গোল্ডেন কালার মার্কার দিয়ে নিরাপত্তা সুতার আদলে মার্কিং করে।

সবশেষে তারা স্টিলের স্কেল এবং এন্টিকাটার এর সাহায্যে জাল নোটগুলো কেটে বান্ডেল করে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করে। আর মাঠপর্যায়ে জাল নোট চালাতে এজেন্টরা লোক নিয়োগ করে থাকে। প্রতারক চক্র জাল টাকা চালানোর জন্য নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। জাল নোট বাজারে ছাড়ার জন্য একটি গ্রুপে দু-তিনজন করে থাকে। একজনের কাছে জাল টাকার বান্ডিল রাখা হয়। অন্যজন মাত্র একটি নোট নিয়ে পণ্য ক্রয়ের নামে জাল টাকা চালানোর চেষ্টা করে। জাল নোট ধরা পড়লে এ প্রতারক নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে শরীর চেক করে যেন অন্য কোনো জাল নোট না পাওয়া যায় সে জন্য দ্বিতীয় কোনো জাল নোট তার কাছে থাকে না। এভাবে একেক এলাকায় কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর দ্রুত তারা অন্য এলাকায় চলে যায়। এদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ জানান, ঈদকে সামনে রেখে জালিয়াত চক্র সক্রিয়। জাল নোট কারবারিরা দেশের অর্থনীতির জন্য অভিশাপ।

তাদের রুখতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এ ছাড়া আইনের ফাঁক-ফোকরে যাতে তারা কারাগার থেকে না বেরোতে পারে সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। জাল নোট প্রতিরোধ এবং এর সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ডিবি সক্রিয় রয়েছে। অন্যদিকে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান টার্গেট করে জাল টাকার কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাল নোট তৈরি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযানও চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক অনলাইনে নজরদারি করছে। অনলাইনে জাল নোট বিক্রি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে র‌্যাব।