December 3, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 22nd, 2022, 9:01 pm

আন্দোলন প্রত্যাহারের পরও চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ; সড়ক অবরোধ, তোপের মুখে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ চা শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চা শ্রমিক ইউনিয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দদের উপর ক্ষোভ ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে। চা বাগানে উদ্ভুত শ্রম অসন্তোষ নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত রোববার রাত ৯ টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সাথে জরুরী বৈঠক বসে। সোমবার সকালে কমলগঞ্জের মৃর্ত্তিঙ্গা, দেওঢ়াছড়া, কুরমা চা বাগানে কিছু শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। তবে চা বাগানে ইউনিয়ন নেতাদের রাতের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে সোমবার সকাল থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর, ফুলবাড়ি, পাত্রখোলা, মাধবপুর, দলইসহ বিভিন্ন চা বাগানের বিক্ষুদ্ধ চা শ্রমিকরা কমলগঞ্জ উপজেলা টৌমুহনীতে এসে প্রায় ৪ ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা বলেন, ‘রোববার রাতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। শমশেরনগর চা বাগানে আমার বাসা ঘেরাও করে আমাদের প্রতিপক্ষের নারী শ্রমিকরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাছাড়া চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাখাইছড়া চা বাগানের পঙ্কজ কন্দের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।’
চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলাকালে লাখাইছড়া চা বাগানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পঙ্কজ কন্দ তোপের মুখে পড়েন। এসময় তার উপর কিছু হামলার ঘটনাও ঘটে। একইভাবে সোমবার দুপুরে চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনুÑদলই ভ্যালী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকার বাসা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন চা শ্রমিকরা। তারা ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন ও মালিকপক্ষের সাথে ইউনিয়ন নেতাদের দালালি চলবে না এমন নানা স্লোগান দেন শ্রমিকরা।
এদিকে রোববার রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরী সভা শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তাঁর সম্মানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিনং-বি ৭৭) তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ২২ আগষ্ট সোমবার কাজে যোগদান করবেন। আপাতত চলমান মজুরি ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে পরবর্তী মজুরির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার পর চুড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে মর্মে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ দাবি জানান। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আবেদন করেছেন। যা জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থাপিত হবে। চা শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি সমুহ লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করলে জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য তাঁর কার্যালয়ে উপস্থাপিত হবে। বাগান মালিকগণ বাগানের প্রচলিত প্রথা/দস্তুর মোতাবেক ধর্মঘটকালীন মজুরি শ্রমিকগণকে পরিশোধ করবেন। যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম এবং চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালেঞ্জি, মনু-ধলাই ভ্যালীর সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা, শ্রমিক নেতা কমল চন্দ্র বুনার্জি, মো: সহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
জেলা প্রশাসনের সাথে চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের এই সিদ্ধান্ত চা বাগানের সাধারণ শ্রমিকরা মেনে নেননি। সোমবার সকাল থেকেই কমলগঞ্জের ফুলবাড়ি, আলীনগর, শমশেরনগর, পাত্রখোলাসহ বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। তারা ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন না করে ঘরে ফিরবেন না বলে স্লোগান দেন।
আলীনগর চা বাগানের নারী নেত্রী গৌরী রানী কৈরি, দয়াশংকর কৈরী, ইউপি সদস্য কিরন বৈদ্য, শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন বলেন, নেতারা আমাদের সাথে কোন পরামর্শ না করেই নিজেরা সমঝোতা করে আসছেন। সেটি আমরা মেনে নিতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ^স্থ করলে আমরা সেটি মেনে নেবো। এতোদিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও আমাদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে কেন এতো গড়িমসি করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। টানা আন্দোলনে চা শ্রমিকদের ঘরে ঘরে খাদ্য সঙ্কটও দেখা দিচ্ছে। আধপেটা খেয়ে না খেয়ে ধর্মঘট পালন করছেন। তাদের ন্যায়সঙ্গত ৩০০ টাকা মজুরির দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও মালিক পক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান।
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার মৃত্তিঙ্গা, দেওড়াছড়া, কুরমা চা বাগানের কিছু চা বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও পরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় তারাও কাজ থেকে ফিরে আসেন। বিভিন্ন চা বাগানে সাধারণ চা শ্রমিক ও চা ছাত্র যুব সমাজ ৩০০ টাকা মজুরিসহ বিভিন্ন দাবিতে মিছিল ও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।
সোমবার দুপুরে আলীনগর, ফুলবাড়ি, পাত্রখোলা, মাধবপুর, দলইসহ কয়েকটি চা বাগানের শতশত শ্রমিকরা উপজেলা চৌমুহনা চত্বরে বিক্ষোভ করে উপজেলা প্রশাসন চত্বরে গিয়েও বিক্ষোভ করেন। এ সময় মনু-দলই ভ্যালীর চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়নের জন্য একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। দুপুর ১টা থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনা চত্বরে বিক্ষুদ্ধ চা শ্রমিকরা সড়ক অবরোধও করেন।
এব্যাপারে শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, রোববার রাতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন বাগানে কাজ শুরু হয়েছে। তবে সব বাগানে কাজ শুরু হয়নি। ইউনিয়ন নেতারা পঞ্চায়েত নেতাদের অবগত করে শ্রমিকদের কাছে ম্যাসেজ দেয়ার পর সবাই স্বাভাবিকভাবে কাজে ফিরবেন। শ্রমিকরা এই ম্যাসেজ একটু সময় লাগতে পারে। চা শ্রমিকদের সিদ্ধান্তটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই আসবে এবং শ্রমিকরাও সেটি মেনে নেবেন বলেই নেতৃবৃন্দরা আশ্বস্থ করেছেন। তিনি আরও বলেন, সোমবারের বিক্ষোভে মূলত চা শ্রমিক সন্তানরাই দাবি জানাচ্ছে। সেটি কিন্তু আইনানুগ নয়।
চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথা অনুযায়ী প্রতি দুবছর পরপর চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদ এবং বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হয়। দর-কষাকষি করে চা-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রায় প্রতিবারই চুক্তির মেয়াদের অনেক পরে নতুন চুক্তি করা হয়ে থাকে। এবারও মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। ১৯ মাসেও মজুরির সমাধান হয়নি। চা-শ্রমিক ইউনিয়ন দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকার দাবি করেছে। মালিকপক্ষ তা না মানায় ৯ আগস্ট থেকে চা-শ্রমিকরা কর্মবিরতির আন্দোলনে আছেন। এদিকে গত শনিবার (২০ আগস্ট) সরকারপক্ষ থেকে এক বৈঠক শেষে ১৪৫ টাকা মজুরির সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা বৈঠকে সিদ্ধান্ত মেনে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণাও দেন। কিন্তু চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন ভ্যালি (কয়েকটি বাগান নিয়ে একটি ভ্যালি) কমিটি, চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটিসহ সাধারণ শ্রমিক এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করে ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরী সভা শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তাঁর সম্মানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিনং-বি ৭৭) তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে সোমবার (২২ আগষ্ট) কাজে যোগদান করবেন। আপাতত চলমান মজুরি ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে পরবর্তী মজুরির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার পর চুড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে মর্মে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ দাবি জানান। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আবেদন করেছেন। যা জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থাপিত হবে। চা শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি সমুহ লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করলে জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য তাঁর কার্যালয়ে উপস্থাপিত হবে। বাগান মালিকগণ বাগানের প্রচলিত প্রথা/দস্তুর মোতাবেক ধর্মঘটকালীন মজুরি শ্রমিকগণকে পরিশোধ করবেন।