October 14, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, October 13th, 2021, 7:05 pm

আফগানিস্তানে বিপর্যয় এড়ানোর অঙ্গীকার জি২০ নেতাদের

অনলাইন ডেস্ক :

তালেবানের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন করে সঙ্কটে পড়া আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার এসেছে বিশ্বের প্রধান ২০টি অর্থনীতির জোট জি২০ নেতাদের তরফ থেকে। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বলেছেন, আফগানিস্তানকে বিশৃঙ্খলার দিকে যেতে দেওয়া উচিত হবে না। মানবিক সংকট এড়াতে আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে ৬০০ মিলিয়ন ডলার যোগানোর জন্য জাতিসংঘের আহ্বানের মধ্যেই গত মঙ্গলবার এই ভার্চুয়াল সম্মেলনে মিলিত হন জি২০ নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আফগানিস্তানকে সহায়তা করতে হবে স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে; ক্ষমতায় থাকা তালেবানের মাধ্যমে নয়। বিবিসি লিখেছে, আফগানিস্তানের জন্য এ পর্যন্ত সহায়তার যেসব প্রতিশ্রুতি এসেছে, তার বেশিরভাগটাই জরুরি খাদ্য ও চিকিৎসার জন্য। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লাইয়েন আফগানিস্তানের জন্য ১.১৫ বিলিয়ন ডলার সহয়াতার ঘোষণা দিয়েছেন, যার একটি অংশ আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া প্রতিবেশী দেশগুলোও পাবে। জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর মের্কেল তার দেশের ৬০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আফগানিস্তানের আর্থিক ব্যবস্থা যদি ধসে পড়ে, তাহলে সেটা কারও জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তখন মানবিক সহায়তাও আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। সহায়তার ক্ষেত্রে এই ভেদ রেখা টানা সহজ নয়, সেটা সত্যি। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে ৪ কোটি মানুষ সেখানে খাদের কিনারে পৌঁছে গেছে, কারণ সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না, বাস্তব কোনো আর্থিক ব্যবস্থা আর কাজ করছে না। নিশ্চয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এরকম একটি পরিস্থিতি দেখতে চায় না। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর সেনা প্রত্যাহারের সুযোগে দুই দশক পর আবারও আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে কট্টর ইসলামিক গোষ্ঠী তালেবানের হাতে। গত অগাস্টে কাবুলের দখল নেওয়ার পর সেপ্টেম্বরে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে তারা, তবে সেই সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পায়নি। আফগানিস্তান তালেবানের দখলে যাওয়ার আগে থেকেই দেশটির ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা বলছে, খরা, নগদ অর্থের স্বল্পতা ও খাবারের সঙ্কটের কারণে এখন আরও বেশি মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মাসে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির চালানো এক জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৯৩ শতাংশ আফগান টাকার অভাবে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না। রাজধানী কাবুলের অধিকাংশ ব্যাংক এখন নগদ অর্থের অভাবে কার্যক্রম চালাতে পারছে না। মালিকরা দেশ ছাড়ায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ। যাদের এখনও চাকরি আছে, তাদের অনেকে মাসের পর মাস বেতন পান না। বাজারে নগদ অর্থের সঙ্কটে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। কাবুলের রাস্তায় তাঁবু খাটিয়ে যারা বসবাস করেন, তাদের সামনে চোখ রাঙাচ্ছে শীত। আফগান সরকারের পতনের আগে দেশটি কয়েকশ কোটি ডলার বিদেশি সহায়তা পেয়ে আসছিল। তালেবান আসার পর সেসব তহবিল এখন অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যারা কাজ করতেন, কার্যত তারাও এখন কর্মহীন। জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, জাতিসংঘের সব সংস্থা যাতে আফগানিস্তানে জরুরি ত্রাণ তৎপরতা চালাতে পারে, সেই সুযোগ তালেবানকে অবশ্যই দিতে হবে। সেই সঙ্গে মানবাধিকার ও নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে তাদের। জি২০ সম্মেলনে মের্কেলের কথার সুরই প্রতিধ্বনিত হয়েছে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগির কথায়। তিনি বলেছেন, তালেবানের সঙ্গে জোটের দেশগুলোকে অবশই যোগাযোগ রাখতে হবে। তার মানে এই নয় যে ওই গোষ্ঠীর কর্মকা-কেও জি২০ স্বীকৃতি দিচ্ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন নিজেরা উপস্থিত না থাকলেও তাদের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নেন। জোটের সব দেশের প্রতিনিধিরাই আফগানিস্তানে আরও বেশি সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।