November 3, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, February 10th, 2023, 9:06 pm

আবারও বাধ্যতামূলক হচ্ছে যানবাহনের তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে যানবাহনের জন্য তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা চালু ছিল। এ বিমার আওতায় থাকা কোনো গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হলে ওই গাড়ির চালক বিমা দাবির টাকা না পেলেও গাড়িটির যাত্রী অথবা পথচারী মৃত্যুবরণ করলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যেত। আবার এ বিমার আওতায় থাকা একটি গড়ি যদি অন্য গাড়ি বা সম্পত্তির ক্ষতি করে তাহলে যে গাড়ি বা সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ পাওয়া যেত। বাংলাদেশে তৃতীয়পক্ষের যে ঝুঁকি বিমা চালু ছিল তার আওতায় মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ছিল ২০ হাজার টাকা। আর গাড়ি বা সম্পত্তির সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ ছিল ৫০ হাজার টাকা। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং এর অধীনে ১৫৫ ধারায় দন্ডের বিধানও ছিল। তবে নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে তৃতীয়পক্ষের বিমা তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যানবাহনের বিমা ছেড়ে দেওয়া হয় মালিকের ইচ্ছার ওপর। অর্থাৎ, একজন ইচ্ছে করলে তার যানবাহনের বিমা করতে পারেন, আবার না করলেও কোনো সমস্যা নেই। এ বিষয়ে ২০২০ সালের অক্টোবরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এরপর ওই বছরের ডিসেম্বরে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা তুলে দেয় বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই মূলত মালিকরা পরিবহনের বিমা করা প্রায় বন্ধ করে দেন। বর্তমানে যেসব পরিবহন চলাচল করছে তার সিংহভাগেরই কোনো বিমা নেই। বিশেষ করে বিমা ছাড়াই চলাচল করছে মোটরসাইকেল। তবে বিমা মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আবারও যানবাহনের বিমা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর সংশোধন করে কীভাবে মোটরযানের বিমা বাধ্যতামূলক করা যায় সে বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে আইডিআরএ চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এ মোটরযানের ক্ষেত্রে কম্প্রিহেনসিভ ইন্স্যুরেন্সে অথবা অ্যাক্ট লাইবেলিটি ইন্স্যুরেন্স (থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স) বিমার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। আইনে বর্ণিত বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে অনুরোধ করা হবে। এ লক্ষ্যে মোটরযানের বিমা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যথাযথ যৌক্তিকতাসহ সুস্পষ্ট প্রস্তাব প্রয়োজন। আইডিআরএ থেকে প্রস্তাবনা পাওয়ার পর সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে সুপারিশ পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৃথিবীর কোথাও বিমা ছাড়া পরিবহন চলাচল করে না। সব দেশেই তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। কিন্তু হুট করেই আমাদের দেশে সড়ক পরিবহন আইন পরিবর্তন করে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা তুলে দেওয়া হয়েছে। এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যে নাম দিয়েই হোক পরিবহনের ক্ষেত্রে তৃতীয়পক্ষের বিমা ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে এই বিমার প্রিমিয়াম এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব মো. জাহিদ হোসেন বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী এখন মোটরযান বিমা বাধ্যতামূলক নেই। মোটরযান বিমা বাধ্যতামূলক করতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে। কীভাবে এটি করা যায়, সে বিষয়ে আইডিআরএর কাছে প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে। আইডিআরএ থেকে প্রস্তাবনা পেলে আমরা সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে অনুরোধ জানাবো। আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। একটা আইন হয়েছে, যে আইনে তৃতীয়পক্ষের বিমা তুলে দেওয়া হয়েছে। এটা এখন চাইলেই হুট করে আবার চালু করা যাবে না। আমরা একটা বিকল্প প্রোডাক্ট (বিমা পণ্য) ডেভেলপ করতে চাচ্ছি। আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, যানবাহনের বাতিল করা তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা নতুন করে চালু করতে তারা কাজ করছে। নতুন উদ্যোগে বাড়ানো হচ্ছে প্রিমিয়ামসহ দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত বিমা দাবির পরিমাণও। এই বিষয়টি কার্যকর হলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার স্বজনরা একটি উল্লেখযোগ্য অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পাবেন। পাশাপাশি বিমা কোম্পানির আয় ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে আশা করছেন এই খাতের কর্তাব্যক্তিরা। বাতিল হওয়া তৃতীয় পক্ষের যে বিমায় প্রিমিয়াম দিতে হতো ৩০০ টাকা, সেটির বিপরীতে দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে বিমা দাবি পরিশোধ করা হতো সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রচার ও সচেতনতার অভাবে এই দাবির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিষ্পত্ত অবস্থায় থাকত। আইডিআরএর প্রাথিমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইডিআরএ নতুন উদ্যোগে প্রিমিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রিমিয়াম বাড়লে গাড়ির মালিকরাও সাবধান থাকবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।