November 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, April 6th, 2023, 10:08 pm

আবাসিক সংযোগে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে প্রচলিত প্যাডেল রিকশায় ব্যাটারি চালিত মোটর স্থাপন করে অটোরিকশায় রূপ দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে বিদেশ থেকে আমদানি করা অটোরিকশাও রাস্তায় চলছে। অনেক আগেই সরকার ব্যাটারিচালিত গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু তারপরও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী খুচরা যন্ত্রাংশের নামে অবৈধভাবে গাড়ি আমদানি করছে। ফলে ওই খাতেও বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। রাজধানী সহ সারাদেশের অলিগলি ও প্রধান সড়ক গুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইক। এসব যানবাহনে কোনোটিতে দুটি, কোনোটিতে চারটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। একটি ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতিদিন বিদ্যুৎ লাগে কমপক্ষে পাঁচ ইউনিট। এসব অটোরিকশা ও ইজিবাইকের ব্যাটারি প্রতিদিনই চার্জ দিতে হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গৃহস্থালি সংযোগের পাশাপাশি চোরাই সংযোগ থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ চুরির কারণে বড় ধরনের অপচয় হয় সরকারের। চুরি যাওয়া বিদ্যুৎ সিস্টেম লসে হিসেবে দেখানো হয়। দেশে বর্তমানে আবাসিকে বিদ্যুৎ ইউনিটে ৬ টাকা ৬৬ পয়সা। আর বাণিজ্যিক ও অফিসের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ১০ টাকা ৮২ পয়সা। আবাসিক সংযোগে এসব অটোরিকশা চার্জ দিলে সরকার প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার বেশী রাজস্ব হারাচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানিসহ বাংলাদেশের এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। সেই সঙ্গে আমদানি হয় এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু বাংলাদেশে গরমের সময় পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ চাহিদা ওঠে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। দিনে বা রাতে প্রায় ৭/৮ ঘণ্টা লাগে একেকটি অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ হতে। ফলে লক্ষ লক্ষ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংকটের এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মহামান্য হাইকোর্ট ব্যাটারি চালিত এইসব যানবাহন অবৈধ ঘোষণা করলেও মহাসড়কসহ অলিগলি এমনকি গ্রামেও দেদারসে চলছে এইসব অবৈধ ব্যাটারি চালিত যানবাহন। সারাদেশে ঠিক কতগুলো অটোরিকশা বা ইজিবাইক আছে নিবন্ধ না থাকায় সেই সংখ্যা বলা কঠিন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে ৪০ লাখেরও বেশী অটোরিকশা ও ইজিবাইক আছে। এসব অটোরিকশার পেছনে হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। অটোরিকশা চার্জে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ খাচ্ছে তার সঠিক কোন হিসেব নেই। কোনো নিয়মনীতি না থাকায় কেউ চাইলেই রাস্তায় নামাতে পারছেন ব্যাটারিচালিত নতুন অটোরিকশা। খরচ সাশ্রয়ের কারণে সড়কগুলোতে দিন দিন বেড়ে চলেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা। সড়ক-মহাসড়কে উচ্চ গতিতে চলা ফিটনেসবিহীন এসব বাহনের কারনে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে সড়ক। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে থেকে পরিবেশবান্ধব এসব বাহনকে বরাবরই উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়, এর ২০ শতাংশই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়। ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুর্ঘটনাও কম না। ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা বা নসিমন যেন শহরের প্রধান সড়কগুলোতে উঠতে না পারে তার জন্য আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তবুও তারা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। আমাদের চোখে পড়লে তাদের ব্যবস্থা নিচ্ছি। মুগদার অটোরিকশা চালক মো. জাহাঙ্গীর উদ্দিন বলেন ‘রিকশা চালানো আমাদের কর্ম। এটা করে আমাদের পরিবার নিয়ে খেতে হয়। আমার মতন অনেক অটোরিকশা চালক আছে যারা রিকশা চালিয়ে পরিবার চালায়। আপনারা যদি এগুলো বন্ধ করে দেন তাহলে আমরা কীভাবে চলব? কাজ করতে না পারলে তো মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে খেতে হবে। আর প্যাডেল রিকশা চালানোর মতো শক্তিও আমার নেই।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব অবৈধ যান বন্ধ না হওয়ার পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা, পুলিশ ও চাঁদাবাজরা জড়িত বলেও অভিযোগ উঠেছে। একাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক জানিয়েছেন, তারা টোকেন নিয়েই সড়কে চালান। প্রতিমাসে টোকেন খরচ ৭শ থেকে ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়। বিনিময়ে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে টোকেন ধরিয়ে দেওয়া হয়। টোকেন থাকলে এসব রিকশা পুলিশ ধরে না। আর টোকেন না থাকলেই ধরে নিয়ে যায়, একেকটি রিকশা ছাড়াতে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ফিটনেস ঠিক করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বৈধতা দেওয়ার কাজ প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। বুয়েটের প্রকৌশলীদের দিয়ে হাইড্রলিক ব্রেক, ব্যাকলাইটসহ অটোরিকশার একটা স্ট্রাকচার ডিজাইনও ঠিক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।