November 7, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 30th, 2022, 9:09 pm

আমদানিকৃত জ্বালানীর সিংহভাগ ঢুকছে পরিবহনের পাকস্থলীতে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করছে দক্ষতার সাথে। জিডিপির অগ্রগতি বলতে গেলে ঈর্ষণীয়। কিন্তু এখনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়ে গেছে। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি ভোগান্তিতে ফেলছে তা হলো জ¦ালানি। এই জায়গাটিতে বাংলাদেশ স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারছে না কিছুতেই।
জানা যায়, বাংলাদেশের জ্বালানির বিরাট একটি অংশ ব্যয় হয় পরিবহণ খাতে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট জ্বালানি তেলের ব্যবহার হয়েছে ৬২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩০ টন। এর মধ্যে যোগাযোগ বা পরিবহন খাতে ব্যবহার হয়েছে ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৫ টন, যা মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৬২ দশমিক ৯২ শতাংশ। কেবল গত অর্থবছরই নয়, বিগত চার অর্থবছরে সারা দেশে জ্বালানি ব্যবহারের অর্ধেকের বেশি ব্যবহার হয়েছে পরিবহন খাতে। সম্প্রতি গণপরিবহনের জ্বালানি ব্যবহারের তথ্য জানতে চেয়ে সুপারিশ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে পরিবহণের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত। রাস্তায় চলে প্রয়োজনের অধিক গাড়ি। ফলে জ্বালানি পরিবহনের পাকস্থলীতেই ঢুকছে বিপুল পরিমাণে।
সংসদীয় কমিটিতে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবহৃত জ্বালানির মধ্যে ডিজেল ২৯ লাখ ৬৪ হাজার ৬৪৩ টন, অকটেন ৩ লাখ ৮৮৯, পেট্রোল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯ এবং অন্যান্য ৩ লাখ ২৩ হাজার ১০৪ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যোগাযোগ খাতে জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৩৮ হাজার ৫১১ টন, যা মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৫১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যোগাযোগ খাতে জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৩৪ লাখ ৩২ হাজার ২৩৯ টন, যা মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৪৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যোগাযোগ খাতে জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ১০ হাজার ২১১ টন, যা মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৫৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যোগাযোগ খাতে জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৯ টন, যা মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৬৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
সড়কে যে পরিবহনগুলো চলে তা অধিকাংশই নিবন্ধিত নয়। যে কেউ রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোন প্রভাব খাটিয়ে সড়কে নামিয়ে দিচ্ছে পরিবহন। সূত্র জানায়, সারাদেশে নিবন্ধিত গণপরিবহন আছে ৪৯ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৫৩টি। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ২০ ধরনের যানের কোনটি কীসে চলে তার কোনও হিসাব নেই সরকারের কাছে। ফলে জ্বালানি পরিকল্পনা প্রণয়ন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে এ-সংক্রান্ত জরিপ করা হবে। জ্বালানি বিভাগ থেকে উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ আছে জ্বালানি বিভাগেও। জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, সম্প্রতি ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর সিএনজিচালিত বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে যাত্রী ও বাস মালিকরা পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। তবু কমছে না যাত্রী ভোগান্তি।
প্রতিবছর দেশে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি আমদানি করতে হয়। বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ ব্যয় হয়ে যায় এই জ্বালানি আমদানিতে। জানা যায়, দেশে যে পরিমাণ ডিজেল প্রতি বছর আমদানি করা হয় তার বেশিরভাগই পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে সরকারের যদি জানা না থাকে কোন পরিবহন কী জ্বালানিতে চলছে, তবে জ্বালানি পরিকল্পনা সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। এতে কোনও জ্বালানির আধিক্য সৃষ্টি হতে পারে, আবার সংকটও হতে পারে। ফলে জ্বালানি ব্যবহারের ভিত্তিতে পরিবহনের জরিপ জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কোন পরিবহন জ্বালানিতে চলে, আর কোন পরিবহন জ্বালানিতে চলে না এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পরিবহনে ডিজেল ছাড়াও সিএনজি, পেট্রোল, অকটেন, অটোগ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। পেট্রোল ও অকটেনচালিত কিছু গাড়ি জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা ভেবে অটোগ্যাসে রূপান্তর করছে। আবার সিএনজি দিয়ে যেসব গাড়ি চালানো যায়, সেগুলোও অটোগ্যাসে রূপান্তর করা হচ্ছে। সারাদেশে ব্যাপকভাবে সরকার অটোগ্যাসের সম্প্রসারণের কথা চিন্তা করছে। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে অটোগ্যাস স্টেশন নির্মাণ করছে। ফলে জ্বালানি ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তন আসছে বলে জানা গেছে।
জ¦ালানির ওপর চাপ কমাতে সরকার বিদ্যুৎ চালিত পরিবহন চালুর কথাও ভাবছে। জানা যায়, বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি আমদানিকৃত যানবাহনের জন্য চার্জিং নীতিমালা নিয়েও কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলছেন নীতিমালা চূড়ান্ত হলেই মোটরযান আমদানি শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা।
এদিকে, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন ভাড়াও বেড়ে গেছে। ফলে অনেক পরিবহন ডিজেল চালিত না হয়েও দাবি করছে ডিজেলচালিত। এভাবে তারা যাত্রীদের প্রতারিত করে বেশি ভাড়া আদায় করছে। এটিও একটি বড় সমস্যা। যাত্রীদের এভাবে প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য সুনির্দিষ্ট জরিপ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকেও এই দাবি করা হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সূত্রে জানা যায়, গণপরিবহন খাতে কোন ধরনের জ¦ালানি ব্যবহার হয়, সে বিষয়টির বিশদ জানাতে কমিটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন শুধু সুপারিশে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। বাস্তব পদক্ষেপ জরুরী। জ্বালানি চালিত গাড়িকে সুনির্দিষ্ট করার পদক্ষেপ কার্যকর হলে জ¦ালানির সুষম বণ্টন নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে একইসাথে যাত্রী হয়রানি বন্ধ হবে, এবং অন্যদিকে ডিজেলের নাম করে যাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার সুযোগ থাকবে না।