নিজস্ব প্রতিবেদক:
আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের সকল সেবায় ফি আরোপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে বাড়বে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সনদ (আইআরসি-ইআরসি) নেয়ার খরচ। বর্তমানে ২০১৫-১৮ মেয়াদের আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী আমদানি-রপ্তানি সনদের ফি আদায় করা হয়। ওই ফি যুগোপযোগী করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটির সভা হয়েছে। ওই সভায় ফি পুননির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা শিগগিরই প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হতে পারে। আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক দপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে আইআরসি (আমদানি নিবন্ধন সনদ) এবং পণ্য রপ্তানি করতে ইআরসি (রপ্তানি নিবন্ধন সনদ) নিতে হয়। আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর (সিসিআইএন্ডই) ওই সনদ দেয়। একজন আমদানিকারক বছরে কত টাকার পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী ওই টাকার অঙ্ক অনুযায়ী সনদের নিবন্ধন ও নবায়ন ফি ধার্য করা হয়ে থাকে। আমদানি সনদের শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্যাটাগরি আছে। বর্তমানের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আমদানি সনদের নিবন্ধন ও নবায়ন ফি আগের মতোই যথাক্রমে ৫ হাজার ও ৩ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। এখন ৫ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নতুন স্তর বানিয়ে তার নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৮ হাজার ও ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আর ১৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিবন্ধন ও নবায়ন ফি ১২ হাজার ও ৬ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আর আগে নিবন্ধন ফি ১০ হাজার টাকা ছিল। ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ২৪ হাজার ও ১২ হাজার টাকা করা হচ্ছে, আগে ছিল যথাক্রমে ১৮ হাজার ও ১০ হাজার টাকা। তাছাড়া ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৪০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে, আগে ছিল যথাক্রমে ৩০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা। এক কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৬০ হাজার ও ৩০ হাজার টাকা করা হচ্ছে, আগে ছিল যথাক্রমে ৪৫ হাজার ও ২২ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, ৫ কোটি টাকার বেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নতুন ৪টি স্তর করা হচ্ছে। ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত সনদ নিবন্ধন ও নবায়নের ফি যথাক্রমে ৮০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকা; ১০ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত এক লাখ ও ৫০ হাজার টাকা; ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার ও ৬০ হাজার টাকা; ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত দেড় লাখ ও ৭৫ হাজার টাকা এবং ১০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের সনদ নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ২ লাখ ও এক লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া রপ্তানিকারক ইআরসি (রপ্তানি নিবন্ধন সনদ) নিবন্ধন ও নবায়ন ফি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৭ হাজার ও ৫ হাজার টাকা রয়েছে। তা বাড়িয়ে ২০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। ইনডেনটিং সার্ভিসের ইআরসির ফি বাড়িয়ে যথাক্রমে ৬০ হাজার ও ৩০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আগে ছিল ৪০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইআরসি-ইআরসি নবায়নে ব্যর্থতার সারচার্জও বাড়ানো হচ্ছে। আমদানি সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ সীমা এক থেকে তিন বছর পার হলে ২ হাজার টাকা, রপ্তানি সনদের ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা এবং ইনডেনটিং সনদের ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকা ধার্য করা হচ্ছে। একইভাবে ৪ থেকে ৫ বছর পার হলে ৫ হাজার টাকা, রপ্তানি সনদের ক্ষেত্রে ৪ হাজার টাকা এবং ইনডেনটিং সনদের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা এবং ৬ বছরের ঊর্ধ্বে সনদ নবায়ন করা না হলে আমদানি সনদের জন্য এক লাখ টাকা, রপ্তানি সনদের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং ইনডেনটিং সনদের জন্য এক লাখ টাকা সারচার্জ আরোপের বিধান প্রস্তাব করেছে কমিটি।
সূত্র আরো জানায়, প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ২ হাজার টাকা; মনোনীত ব্যাংক পরিবর্তনের জন্য ২ হাজার টাকা; ৩ বছরের বেশি অনবায়িত সব ধরনের নিবন্ধন সনদের নবায়নের অনুমতির জন্য ২ হাজার টাকা; আমদানি সনদের আমদানি সীমা/শ্রেণি/লিমিট পরিবর্তনের (হ্রাস/বৃদ্ধি) জন্য ২ হাজার টাকা; শিল্প আমদানি নিবন্ধন সনদের আমদানি স্বত্ব পরিবর্তনের জন্য (হ্রাস/বৃদ্ধি) ২ হাজার টাকা ফি ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া স্থায়ী ভিত্তিতে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের মালামাল আনার আইপি নিতে ২ হাজার টাকা; সরকারি প্রকল্পের মালামাল খালাসের জন্য ৫ হাজার টাকা; বিনামূল্যে নমুনা, বিজ্ঞাপন ও উপহারসামগ্রীর জন্য ২ হাজার টাকা; ইক্যুইটি মূলধনী যন্ত্রপাতি ছাড়করণে ৫ হাজার টাকা; পূর্বানুমতিপত্রের ভিত্তিতে আমদানি করা ছাড়করণে ৫ হাজার টাকা; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল খালাসে ৫ হাজার টাকা; জ্যান্ত প্রাণী খালাসে ৫ হাজার টাকা; গ্যাস সিলিন্ডার/গ্যাসাধারের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা; সব ধরনের আমদানি পারমিটের মেয়ার বৃদ্ধির জন্য ২ হাজার টাকা; সব ধরনের আমদানি পারমিট সংশোধনের জন্য ২ হাজার টাকা; ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য ২ হাজার টাকা; ব্যাগেজ রুলের জন্য ২ হাজার টাকা; অনুদানের বিপরীতে আমদানি পারমিটের জন্য ২ হাজার টাকা; বিনামূল্যে প্রেরিত পণ্যের ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকা; হাসপাতাল, এনজিও এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুই হাজার টাকা ফি ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়াও ফেরতের ভিত্তিতে পণ্য আমদানির আইপি নেওয়ার ক্ষেত্রেও ফি ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের মালামাল আনার আইপি নিতে ২ হাজার টাকা; সরকারি প্রকল্পের মালামাল খালাসের জন্য ৪ হাজার টাকা; পূর্বানুমতিপত্রের ভিত্তিতে আমদানি করা ছাড়করণের জন্য ২ হাজার টাকা; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল খালাসের জন্য ৫ হাজার টাকা এবং অন্য আমদানি পারমিটের জন্য ২ হাজার টাকা ফি ধার্য করা হচ্ছে। একইভাবে রপ্তানি পারমিটের জন্য সেবার বিপরীতে এক হাজার টাকা ফি ধার্য করা হচ্ছে। আর যেসব সেবার বিপরীতে ফি ধার্য করা হচ্ছে সেগুলো হলো- ফ্রাস্ট্রেটেড কার্গো পণ্য, দেশীয় পণ্যের নমুনা, ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ, উপহারসামগ্রী প্রেরণ, রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে, জ্যান্ত প্রাণী, খালি কনটেইনার/সিলিন্ডার, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবহৃত পণ্য, টেস্টিং পণ্য রপ্তানি, রপ্তানি কাম আমদানি সনদ জারি, সব ধরনের রপ্তানি পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি, রপ্তানি পারমিট সংশোধন এবং অন্য রপ্তানি পারমিটের জন্য এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে। তাছাড়া ঋণপত্র খোলার সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য ২ হাজার টাকা; জাহাজীকরণের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য ২ হাজার টাকা; ক্লিয়ারেন্স পারমিটের জন্য ৫ হাজার টাকা; আইআরসি থেকে অব্যাহতির জন্য ৫ হাজার টাকা এবং অন্য আমদানির পূর্বানুমতির জন্য এক হাজার টাকা ফি ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ