অনলাইন ডেস্ক :
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে তামিম ইকবালের সংবাদ সম্মেলন। কিন্তু প্রায় ১৫ মিনিটেরও বেশি সময় মাঠের বাইরের বিষয় নিয়েই কথা বলতে হলো বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ককে। তাই হয়তো মিডিয়া ম্যানেজারের তাগিদ, ‘সিরিজ সম্পর্কিত প্রশ্ন করা হোক।’ তবে এরপর যে প্রশ্নটি করা হলো, তাতেও মিশে থাকল মাঠের বাইরের প্রসঙ্গ। এ দিন বিভিন্ন প্রশ্নের তির দারুণভাবে সামলানো তামিম দল নির্বাচনের এই প্রশ্নও সামাল দিলেন দারুণভাবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণা করে হয়েছে অবশ্য বেশ আগেই। তবে পরে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। দল ঘোষণার পর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছিলেন, নাসুম আহমেদের জায়গায় তাইজুল ইসলামকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত টিম ম্যানেজমেন্টের। কিন্তু পরে বিসিবি সভাপতি সংবাদমাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অধিনায়ক তামিমের চাওয়ায় দলে নেওয়া হয়েছে তাইজুলকে। এমনিতে দল নির্বাচনী সভায় নির্বাচক, অধিনায়ক, কোচ, নানা পক্ষ থেকে নানা যুক্তি-তর্ক হয়। শেষ পর্যন্ত দল চূড়ান্ত হওয়ার পর তা সবার পছন্দের স্কোয়াড বলেই ধরে নেওয়া হয়। কার কে পছন্দে কে দলে, এই ব্যাপারগুলি সাধারণত প্রকাশ করা হয় না কখনোই। কিন্তু স্বয়ং বোর্ড সভাপতি যখন গোপনীয় কিছু এভাবে ফাঁস করে দেন, অধিনায়কের জন্য তা বিব্রতকর কি না, এই প্রশ্ন রোববার সংবাদ সম্মেলনে করা হলো তামিমকে। তিনি উত্তর দিলেন সরাসরিই। “প্রথমত, অবশ্যই (বিব্রতকর)ৃ দল বাছাইয়ের সভায় দরজার আড়ালে অনেক আলোচনা হয়। যেখানে আমি অনেক কিছুতে একমত হই, একমত হই না। নির্বাচকদের ক্ষেত্রেও তা-ই। তবে আমরা সবাই মিলে একটি দল। আমি, প্রধান কোচ, নির্বাচক… আমরা সবাই একটি দল। আমি এখানে বসে বলব না, এটা ওঁর কাজ বা ওটা তার কাজ। যদি ব্যর্থ হই, তাহলে আমরাই ব্যর্থ হব। ফলাফল পেলেও আমরা দল হিসেবে পাব। ওখান (সভা) থেকে কোনো কিছু বেরিয়ে আসা খুব স্বাস্থ্যকর নয়।” তাইজুলকে কেন স্কোয়াডে চেয়েছিলেন, সেই ব্যাখ্যাও দিলেন তামিম। ২০১৪ সালে অভিষেকের পর ওয়ানডেতে কখনোই খুব একটা নিয়মিত হতে পারেননি এই বাঁহাতি স্পিনার। সবশেষ গত জুলাই-অগাস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে সফরে ৩টি ওয়ানডেতে খেলার সুযোগ পান তিনি। এই ম্যাচগুলোয় তার পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২৮ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট। পরে জিম্বাবুয়ে সফরের ২ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে তার শিকার ৩ উইকেট। এরপর ঘরের মাঠে ভারত সিরিজের দলে রাখা হয়নি তাইজুলকে। বাদ পড়ার পর দলে ফেরার মতোও তেমন পারফরম্যান্স করেননি বাঁহাতি স্পিনার। তার অন্তর্ভুক্তি মূল প্রশ্ন সেখানেই। তবে তামিম বললেন, তাইজুলের বাদ পড়াটাও যৌক্তিক ছিল না। “একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে নিয়ে কথা হচ্ছে। সত্যি বলতে, আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম যে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ওকে নেওয়া হয়নি। কারণ, ছেলেটি সবশেষ ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট পেয়েছে।” “অধিনায়ক হিসেবে আমার মন্ত্র খুব স্বাভাবিক। আমি সবসময় পারফরম্যান্সকে প্রাধান্য দেব। আমি এমন কাউকে নেব না বা সমর্থন করব না যে, ৫ ম্যাচ খেলে কোনো উইকেট পাচ্ছে না।” নাসুম ও তাইজুলের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়া নেওয়ার পেছনে দলের চাহিদা ও পরিকল্পনার কথাই জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক। “এক্ষেত্রে বলতে হয়, নাসুমও (আহমেদ) দুর্দান্ত। টি-টোয়েন্টিতে সে দারুণ করছে। পাশাপাশি ওয়ানডেতেও সামান্য যতটুকু সুযোগ পেয়েছে, সে ভালো করেছে।” “যে কোনো সিরিজে সবার একটা চিন্তাধারা থাকে, বোলিং আক্রমণটা কেমন হবে। আমাদের মনে হয়েছে, তাইজুল বেশি মানানসই হবে। এখন এই সিদ্ধান্তে কাজ হতে পারে, নাও হতে পারে।” জাতীয় দলের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কোনো জায়গা নেই বলেও মনে করিয়ে দেন দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান। “আমি সবসময় পারফরম্যান্সকে প্রাধান্য দেব, সেটা যে-ই হোক। আমি যদি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ না করি, কিন্তু সে যদি পারফর্ম করে, আমি অবশ্যই তাকে নেব। এটা আমার দায়িত্ব।” “আমি যদি তামিম ইকবাল একাদশের অধিনায়ক হতাম, তখন হয়তো কে আমাকে পছন্দ করে বা কাকে আমি পছন্দ করি, এসব চিন্তা করতাম। কিন্তু আমি বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক। তাই এখানে অন্য কিছুর মূল্য নেই। যে পারফর্ম করবে, তার পাশে আমি থাকব।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা