November 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, February 23rd, 2024, 7:51 pm

আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে মিয়ানমার জান্তা: জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক :

মিয়ানমারে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জয়যাত্রা থামাতে দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন জান্তা। প্রায় চার মাস আগে সংঘাত বাধার পর থেকে দেশটির বেসামরিক লোকজনদের ওপর জান্তা বাহিনীর হামলার হার দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ডরুজ বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর রয়টার্স। এদিকে রাখাইনের মুসলিমদের জোর করে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করছে জান্তা। এ ছাড়া গণহারে নিয়োগ দিতে সেনা ইউনিফর্মের উৎপাদন ব্যাপক বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সংঘাতে বেশ কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঘটনা জান্তাকে আরও বেপরোয়া-বিপজ্জনক করে তুলছে। তথ্য অনুযায়ী, গত তিন-চার মাসে মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর জান্তা বাহিনীর হামলার হার বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পরপরই ফুঁসে উঠেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি জনতা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে দেশ জুড়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। কিন্তু মিয়ানমারের পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভ দমনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করার পর ২০২২ সালের দিকে গণতন্ত্রপন্থিদের একাংশ জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দেওয়া শুরু করে।

২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ)। পিডিএমভুক্ত তিন গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই তিন গোষ্ঠী একত্রে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামেও পরিচিত। গত প্রায় চার মাসের সংঘাতে মিয়ানমারের অন্তত ৪০টি শহর ও গুরুত্বপূর্ণ শান প্রদেশসহ অন্তত পাঁচটি প্রদেশ দখল করে নিয়েছে পিডিএফ।

অন্যদিকে এসব শহর ও প্রদেশের দখল হারানোর পাশাপাশি ব্যাপকসংখ্যক সেনাসদস্য ও কর্মকর্তাকেও হারিয়েছে জান্তা। জনবল সংকট দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি সাধারণ নাগরিকদের সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জান্তার এই পদক্ষেপকে নাগরিকদের ওপর জুলুম চালানোর নতুন পদক্ষেপ হিসেবে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন টম অ্যান্ডরুজ। বিবৃতিতে সাবেক এই মার্কিন আইনপ্রণেতা বলেন, সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করার পর থেকে মিয়ানমারের তরুণরা রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন শত শত তরুণ সীমান্ত পথে মিয়ানমার ছেড়ে পালাচ্ছেন। সামনের দিনগুলোতে এই হার আরো বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে টম অ্যান্ডরুজ বলেন, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে মিয়ানমার।

দেশটির সাধারণ জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে তৎপরতা চালানো প্রয়োজন। রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছের অঞ্চল বুচিডং থেকে প্রায় ১০০ মুসলিমকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। তাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হবে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা নিউজ। ওই ১০০ জনের মধ্যে পা জুন চং গ্রামের ১৫ জন, তাত মা চং গ্রামের ৫৫ জন, নাগা কায়িং তাওক গ্রামের ৩৩ জন এবং কায়ুক ফিউ তং গ্রামের ১০ জন রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি গ্রামে প্রবেশ করে জান্তা বাহিনী। এরপর তারা প্রায় ১০০ জনকে ধরে নিয়ে যায়। বয়স্ক এক মুসলিম ব্যক্তি বলেন, সেনারা গ্রামে এসে তাদের আটক করে। আটককৃতদের বেশিরভাগই তরুণ।

তাদের ৫৩৫তম এবং ৩৫৩তম ব্যাটালিয়নে নিয়ে যাওয়া হয়। সেনারা আরও গ্রামবাসীকে আটকের হুমকি দিয়ে গেছে। এতে গ্রামবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বয়স্ক ব্যক্তি নারিনজারা নিউজকে আরও বলেছেন, আরও মানুষকে আটকের হুমকি দেওয়ায় গ্রামের তরুণরা সব পালিয়ে যাচ্ছে। জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করার মাধ্যমে এসব গ্রামবাসীর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এজন্য জান্তা বাহিনীর বিচার দাবি করেছেন এই মুসলিম বৃদ্ধ। এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল মংডুর মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর কমান্ডাররা। ওই বৈঠকে সেনা কমান্ডাররা মুসলিম নেতাদের প্রস্তাব দেন, যদি তারা জান্তা বাহিনীর হয়ে কাজ করেন; তাহলে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে। মংডুর ময়ো থু গি গ্রামের ৫নং বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বৈঠকটি হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন জান্তার ডিভিশন কমান্ডার থুরেন তুন এবং বিভাগীয় প্রশাসক নায়ো ও। তাদের আয়োজিত এ বৈঠকে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই মুসলিম নেতা বলেন, ‘বৈঠকে কমান্ডার থারুন তুন আমাদের বলেছেন, রাখাইনের মানুষের (বৌদ্ধ আরাকান আর্মি) কারণে আমরা মুসলিমরা ভুগছি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র তুলে নেওয়া উচিত। এমনকী এই কমান্ডার আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন, যদি আমাদের গ্রামের কাছে যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে সেনারা আমাদের গ্রামে হামলা চালাবে না। তারা শুধু রাখাইনের গ্রামে হামলা চালাবে। এজন্য আমরা যেন জান্তার হয়ে কাজ করি।’ এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাত প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা একের পর এক ঘাঁটি হারাচ্ছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করেছিল দেশটির জান্তা সরকার। আর এরপরই দেশটিতে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মের ব্যাপক উৎপাদন শুরু করা হয়েছে।