December 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, March 13th, 2022, 6:59 pm

ইউক্রেনের সামরিক ঘাঁটিতে রুশ বিমান হামলায় নিহত ৩৫

অনলাইন ডেস্ক :

পশ্চিম ইউক্রেনের একটি সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে রুশ বিমান হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছে। রবিবার একজন স্থানীয় কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

লাভিভের গভর্নর ম্যাকসিম কোজিটস্কি বলেছেন, লাভিভ শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং ইউক্রেনের সঙ্গে পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইয়াভোরিভ সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে রুশ বাহিনী ৩০টিরও বেশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এখানে ইউক্রেনের সামরিক কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নিয়মিত প্রশিক্ষক পাঠায়। এটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা কেন্দ্র নামেও পরিচিত।

এছাড়া রুশ সেনারা স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরির সঙ্গে ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরের পশ্চিম ইউক্রেনের শহর ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্কের বিমানবন্দরেও গুলি চালায়।

শহরটির মেয়র রুসলান মার্তসিনকিভ বলেছেন, রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল ‘আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি করা।’

এর আগে শনিবারও রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বোমাবর্ষণ করেছে। দক্ষিণে মারিউপোলে গুলি চালিয়েছে,রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে গোলা বর্ষণ করেছে।

রুশ হামলার পর থেকে মারিউপোল শহরটির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। চার লাখ ৩০ হাজার জনসংখ্যার এই বন্দর নগরীতে খাদ্য,পানীয় ও ওষুধ সরবরাহের এবং বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা অবিরাম আক্রমণের কারণে ব্যাহত হয়েছে।

শহরটির মেয়রের কার্যালয়ের দেয়া তথ্যানুসারে, অবরোধের সময় মারিউপোলে এক হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। এবং গোলাগুলির কারণে লাশগুলো গণকবর পর্যন্ত দেয়া সম্ভব হয়নি। পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অভাব তীব্র হয়ে উঠেছে। জ্বালানির অভাবে শীতল এই অঞ্চলের বাসিন্দারা একটু গরম পানির অভাবে ধুঁকছে। এইড গ্রুপ ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, শহরটির বাসিন্দারা ওষুধের অভাবেও মারা যাচ্ছে।

একজন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রুশ সেনারা একটি মানবিক সাহয্যের গাড়ি আটক করেছে, যেটিতে করে মারিউপোলের অধিবাসীদের জন্য সহায়তা পৌঁছানো হচ্ছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, রুশ বাহিনী অন্তত দুই ডজন হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে আঘাত করেছে।

এদিকে শনিবার আবারও যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে শুরু করা আলোচনা ব্যর্থ হয়। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র কেনার জন্য ইউক্রেনকে আরও ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে।

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ অন্যান্য দেশকে সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য অস্ত্র-সরঞ্জাম পাঠানো ‘তাদের হামলাকে বৈধ পরিণত করে।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, পুতিন তার দেশকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে, সেইসঙ্গে মারিউপোলের পশ্চিমের একটি শহরের একজন মেয়রকে আটক করে ‘সন্ত্রাসের একটি নতুন পর্যায়’ শুরু করেছেন।

জেলেনস্কি শনিবার জাতির উদ্দেশে তার রাতের ভাষণে বলেছেন, ইউক্রেন এই পরীক্ষায় লড়বে। আমাদের দেশে যে যুদ্ধদানব এসেছে তাকে হারাতে আমাদের সময় এবং শক্তি দরকার।

শনিবার জেলেনস্কি জানান যে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৩০০ জন ইউক্রেনীয় সেনা মারা গেছে।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, রুশ বাহিনী মারিউপোলের পূর্ব উপকণ্ঠ দখল করেছে। তাই তারা তাদের কৌশলগত বন্দরের নিরাপত্তা আরও কঠোর করেছে। আজভ সাগরের তীরবর্তী মারিউপোল এবং অন্যান্য বন্দরগুলো দখলের মাধ্যমে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে একটি স্থল করিডোর স্থাপনের অনুমতি দিতে পারে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেন খেরসন শহরটি হারায়। দুই লাখ ৯০ হাজার বাসিন্দার এই শহরটি কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর।

শনিবার জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ানরা স্থানীয় কর্মকর্তাদের দক্ষিণ খেরসন অঞ্চলে একটি ‘ছদ্ম-প্রজাতন্ত্র’ গঠন করতে বাধ্য করতে ব্ল্যাকমেল ও ঘুষ দিয়েছে। অনেকটা পূর্বাঞ্চলের ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্কের মতো, যেখানে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে লড়াই শুরু করেছিল সেই ২০১৪ সাল থেকেই। রুশ বাহিনী এই অঞ্চলকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার অজুহাত দিয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করে।

জেলেনস্কি আবারও ইউক্রেনের উপর নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করতে ন্যাটোর অস্বীকৃতির নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন যে ইউক্রেন বিমান প্রতিরক্ষা সম্পদ সংগ্রহের উপায় খুঁজছে। যদিও তিনি বলেননি যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের জন্য আরও ২০০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য ঘোষণা করেছেন।

জেলেনস্কির দাবির বিপরীতে ন্যাটো বলেছে, নো-ফ্লাই জোন আরোপ করলে রাশিয়ার সঙ্গে বিস্তৃত যুদ্ধ শুরু হতে পারে।

ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, শনিবার ১৪টি অনুমোদিত করিডোরের মধ্যে মাত্র নয়টি খোলা ছিল এবং সারা দেশ থেকে মাত্র ১৩০০ লোককে তারা সরিয়ে নিতে পেরেছে।

জেলেনস্কি শনিবার বলেন, রাশিয়া যদি কিয়েভকে দখল করতে চায়, তবে তাকে কার্পেট বোমা ফেলে শহরটি দখল করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে হত্যা করেই তাদের এখানে আসতে হবে। যদি এটাই তাদের মূল লক্ষ্য হয়, তবে তাদের আসতে দিন।’

শনিবার ফরাসি ও জার্মান নেতারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর আলোচনায় ব্যর্থতার কথা বলেছেন। ক্রেমলিনের মতে, পুতিন যুদ্ধের অবসানের জন্য যে শর্তাদি দিয়েছিলেন, ইউক্রেন সেগুলো মেনে নিলেই কেবল যুদ্ধ বিরতি সম্ভব। মস্কো দাবি করেছে, ইউক্রেন যেন ন্যাটোতে যোগদানের জন্য তার চুক্তি বাতিল করে এবং একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে; ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয় এবং নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হয়।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, অন্তত ২৫ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ইউক্রেনের সরকার জানিয়েছে, অন্তত ৭৯ জন ইউক্রেনীয় শিশুসহ অনেক বেসামরিক নাগরিকসহ উভয় পক্ষের কয়েক হাজার সেনা নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।