October 11, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 28th, 2021, 7:55 pm

ই-কমার্স সাইটগুলো সরাসরি কেনার সুযোগ করে দিচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের পশু

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে অনলাইনে কোরবানীর পশু কেনাবেচা বিগত ২০১৫ সাল থেকেই শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে তা এখন সবচেয়ে বড় মার্কেটে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে গত বছর থেকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অনলাইনে পশু কেনাবেচা জনপ্রিয় হচ্ছে। পশুর হাটের নানা ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে অনেকেই অনলাইনে কোরবানীর পশু কিনতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে পশুর হাট আয়োজন করা হচ্ছে। আর প্রতিটি জেলাতেই সরকারি উদ্যোগে একই রকম আয়োজন থাকছে। তাছাড়া কোরবানী উপলক্ষে বিভিন্ন খামারি, ফার্ম নিজেদের নামেও পৃথক পৃথকভাবে অনলাইনে পশু বিক্রি করছে। মূলত গতবছর থেকেই সারাদেশে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগেও অনলাইনে বসছে পশুর হাট। ওসব হাটে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের পশু সরাসরি কেনার সুযোগ করে দিচ্ছে ই-কমার্স সাইটগুলো। এবারের কোরবানি ঘিরে ইতিমধ্যে ডিজিটাল ওসব হাট প্রস্তুত হয়েছে। বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তাদের সাইটে পশুর ছবি, বর্ণনা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছে। খামারি, কৃষকরাও ফেসবুকসহ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিক্রির জন্য তুলে ধরছে তাদের গরু, ছাগল, ভেড়াসহ কোরবানির পশু। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি দেশে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর লকডাউনের পথে হাঁটছে। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসছে কোরবানির ঈদ। আর ঈদ ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশেই বসে লক্ষাধিক পশুর হাট। ওসব হাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষক, খামারি ও ব্যবসায়ীরা পশু নিয়ে আসে। পাশাপাশি পশু কিনতে হাটে ক্রেতারাও ভিড় করেন। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এবার ওসব পশুর হাটের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে। তাদের মতে, যে কয়টি জেলা থেকে রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি পশু আসে তার মধ্যে- চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, রাজবাড়ী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর উল্লেখযোগ্য। ওসব জেলায় সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কোরবানির পশুর হাটে আগের মতো ভিড় হলে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেজন্য তারা রাজধানীসহ সব জেলা শহরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পশুর হাটে কেনাবেচা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, অনলাইন হাট থেকে গতবছর ২৭ হাজার গরু-ছাগল ও অন্যান্য পশু বেচাকেনা হয়েছে। আর অনলাইন থেকে ছবি দেখে পরে সরাসরি কৃষকের বাড়ি ও খামার থেকে ৯০ হাজারের বেশি গরু ক্রেতারা কিনেছে। তার মধ্যে ডিজিটাল হাট এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ও ই-ক্যাব সদস্যদের অনলাইনে প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হওয়া গরু, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৬ হাজার ৮০০টি। আর জেলাভিত্তিক সরকারি প্ল্যাটফর্মে কমপক্ষে ৫ হাজার ৫০০ গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত কোম্পানির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রায় ৯ হাজার এবং ফুড ফর নেশন থেকে ৪ হাজার কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। তাছাড়াও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে আরো ৫০০ গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানা যায়। এবার করোনা পরিস্থিতির অবনতি, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়া, ভারতের সাথে সীমান্ত বন্ধের কারণে অনলাইনে কোরবানীর পশু বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা করছে। অনলাইনে পশুর ছবি, বর্ণনা ও দাম উল্লেখ করার পাশাপাশি পছন্দ হলে স্বশরীরে ক্রেতাদেরকে পশু দেখে কেনার সুযোগও রাখা হচ্ছে। রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন খামারী ও ফার্ম নিজস্ব নামে ফেসবুকে পেজ ও অনলাইনে হাটের আয়োজন করে পশু বিক্রি করছে। নামিদামি কোম্পানিগুলোও নিজেদের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকের গরু নিয়ে সাজিয়েছে পশুর হাট।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অনলাইনে কোরবানির গরু ক্রয় করার একমাত্র ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বা ওয়েবসাইট ডিজিটাল হাট ডট নেট। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)-র উদ্যোগে আইসিটি বিভাগ ও এটুআই-এর কারিগরি সহযোগিতায় অনলাইনে কোরবানির গরু ক্রয় বা বিক্রয়ের এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ই-ক্যাব সদস্য প্রতিষ্ঠানই পশু বিক্রি করতে পারবেন। ডিজিটাল হাট হতে গরু বা কোরবানির পশু কিনতে ওয়েবসাইটে পশুর জাত, রঙ ও ওজন দিয়ে পেমেন্ট করতে হবে। ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে পেমেন্ট করা যাবে। এমনকি গ্রাহক কর্তৃক চাইলে কেনা পশু জবাই করে কেটে মাংস হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেজন্য ব্যবহৃত কসাই সার্ভিস হিসেবে অতিরিক্ত ২৩ শতাংশ টাকা পেমেন্ট করতে হবে। তাছাড়াও রয়েছে হোম ডেলিভারি সার্ভিস। যার জন্যও পেমেন্ট করতে হবে।
এদিকে অনলাইনে ক্রেতাদের পণ্য কেনার ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ অনেক পুরনো। প্রতিদিনই ওই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে অর্ডার করা প্রত্যাশিত পণ্য না পাওয়া, পেমেন্ট নেয়ার পর পণ্য ডেলিভারিতে বিলম্ব, পণ্য দিতে ব্যর্থ হলে পেমেন্ট ফেরত পেতে অনিশ্চয়তাসহ ক্রেতাদের নানা অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গত একবছরে ওই সংক্রান্ত ৫ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন ক্রেতাদের সুরক্ষায় আগামী মাসেই একটি নীতিমালা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। যেখানে পণ্যের মূল্য পরিশোধ, পণ্য প্রদানে ব্যর্থ হলে মূল্য ফেরত এবং নির্ধারিত সময়ে পণ্য ডেলিভারির নিশ্চয়তা বিধান করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, কিন্তু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য ডেলিভারি না করার অভিযোগ আছে। অনেক ক্রেতা তাদের পরিশোধিত মূল্য যথাসময়ে ফেরতও পাচ্ছেন না। বিষয়টি মাথায় রেখে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সাথে সভা করে একটি খসড়া গাইডলাইন প্রস্তুত করেছে। যা ভ্যাটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় আগামী মাসে তা প্রকাশ করা সম্ভব হবে। গাইডলাইনে ক্রেতাদের পণ্য অর্ডারের ক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধ পদ্ধতি, পণ্য দিতে না পারলে সর্বোচ্চ ৭ দিনের মধ্যে অর্থ ফেরত, নির্ধারিত সময়ে ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছে দেয়া, ক্রেতাকে টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করার বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। আশা করা যায় এর মাধ্যমে ক্রেতাদের কেনাকাটায় সুরক্ষা এবং প্রতারণা থেকে মুক্তি মিলবে।
অন্যদিকে অনলাইনে কোরবানির পশুর হাটের প্রস্তুতি সম্পর্কে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল জানান, গতবছরের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে অনলাইন পশুর হাট বসছে। এবার এর পরিধি আরো বাড়ানো হয়েছে। এবছর ডিজিটাল হাটে শতাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যুক্ত হচ্ছে। যেখানে ক্রেতারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারির পালিত পশু ঢাকায় বসে কিনতে পারবেন।
একই প্রসঙ্গে ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার জানান, নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ই-ক্যাব ক্রেতাদের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ক্রেতাদের সুবিধা এবং উদ্যোক্তাদের সুবিধা দুটোই দেখা হচ্ছে। শুধুমাত্র ডিজিটাল হাট প্লাটফর্ম ঘিরে বেশ কিছু নতুন অনলাইন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।