October 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 17th, 2022, 9:45 pm

ঈদ ঘিরে মোটা মুনাফা হাতিয়ে নিতেই সিন্ডিকেটের কবলে আকাশপথের টিকিট

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিন্ডিকেটের কবলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আকাশপথের টিকিট। এয়ারলাইন্স মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশে ট্রাভেল এজেন্টগুলোর একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অধিকাংশ আন্তর্জাতিক গন্তব্যের টিকিট ব্লক করে রেখেছে। সংকট তৈরি করে যাত্রী চাহিদা বাড়িয়ে প্রতিটি টিকিট ৪-৫ গুণ বেশি দামে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়াই ওই সিন্ডিকেটের টার্গেট। ইতিমধ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ আকাশপথের টিকিটও উধাও হয়ে গেছে। বিমান, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ারের কাউন্টারে ঈদের আগের ১০ দিনের অগ্রিম টিকিট নেই। তবে এখন কিছু টিকিট পাওয়া গেলেও সেগুলোর দামও আকাশছোঁয়া। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অভ্যন্তরীণ কোনো কোনো বিমান রুটের ঈদের অগ্রিম টিকিট ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। দু-একদিনের মধ্যে আর কোনো টিকিট পাওয়া যাবে না। এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া একজন যাত্রী আগে সর্বনিম্ন ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকায় টিকিট পেলেও তাকে এখন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি দামে অগ্রিম টিকিট কাটতে হচ্ছে। আর যতোই দিন যাবে ওই দামও বাড়তে থাকবে। দেশের অভ্যন্তরীণ রুট এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্যে চিত্র একই। ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতের বিভিন্ন রুটে ঈদের অগ্রিম টিকিট নিয়ে হাহাকার চলছে। এখন পর্যন্ত ওই রুটগুলোয় কিছু কিছু টিকিট পাওয়া গেলেও ঈদের ১০ দিন আগের কোনো টিকিট নেই। সূত্র জানায়, ঈদকে কেন্দ্র করে আকাশপথে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটগুলোয় ভাড়া নিয়ে চরম অরাজকতা চলছে। অভ্যন্তরীণ রুট ও ভারতসহ আন্তর্জাতিক সব রুটেই ইতিমধ্যে ঈদের ১০ দিন আগের সর্বনিম্ন ক্লাসগুলোর টিকিট বিক্রি শেষ। বিমান সংস্থাগুলো জানিয়েছে, একটি রুটে টিকিটির মূল্য চার থেকে পাঁচ ধাপে নির্ধারণ করা হয়। যেমন- ঢাকা-চট্টগ্রামের সর্বনিম্ন ধাপের টিকিটের দাম সাড়ে ৩ হাজার টাকা আর সর্বোচ্চ ধাপের টিকিটের দাম ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। চাহিদা বেশি হলে সর্বোচ্চ ধাপ ২০ হাজার টাকায়ও চলে যায়। অর্থাৎ ভ্রমণের তারিখ যতোই কাছে আসবে ততোই মূল্যের ওই ধাপ বাড়তে থাকবে। আগামী মে পর্যন্ত ট্রাভেল এজেন্টগুলোর কাছে সৌদি আরবের টিকিট নেই। সরাসরি এয়ারলাইন্সগুলোকে ওই রুটের ভাড়া ২ গুণেরও বেশি দিতে হয়। ৪০ হাজার টাকা ঢাকা-রিয়াদ রুটের বিমান ভাড়া এখন ৯২ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। তাও মিলছে না। ৪৫ হাজার টাকার ঢাকা-দুবাইয়ের রিটার্ন ভাড়া এখন ৯০ হাজার থেকে ৯৫ হাজার টাকা। ঈদের ১০ দিন আগে ওসব রুটে টিকিট নিয়ে বড় ধরনের অরাজকতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব রুটের ভাড়া নিয়েই চলছে অরাজকতা। ফলে চিকিৎসা ও স্টুডেন্ট ভিসাধারী ভারতগামী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একদিকে টিকিট নেই, অপরদিকে টিকিটের দাম চার-পাঁচগুণ বেশি।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানসহ মোট ৩টি এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহণ করছে। বাকি দুটি হলো ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার। ওই ৩টি এয়ারলাইন্স প্রতিদিন গড়ে ৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে ৭৫ থেকে ৮৫টি ফ্লাইট অপারেট করছে। সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট করছে ইউএস-বাংলা ৩৫টি। তারপর নভো এয়ার ২৫টি, বিমান ২০ থেকে ২৫টি। অভ্যন্তরীণ রুটে বেশির ভাগ এয়ারলাইন্স ৭২ থেকে ৭৮ আসনবিশিষ্ট ছোট এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রী পরিবহণ করছে। তবে বিমান ও ইউএস-বাংলা ১২৫ এর বেশি আসনবিশিষ্ট বোয়িং ৭৩৭ মডেলের এয়ারক্রাফট দিয়ে কিছু কিছু ফ্লাইট অপারেট করছে। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩টি এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণ করছে। ঈদের আগে কিছু কিছু রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করলে আরো ১ হাজার যাত্রী বাড়ার কথা রয়েছে। ওই হিসাবে ঈদের ১০ দিন আগে থেকে আকাশপথে মোট ৮০ হাজার যাত্রী ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। আবার সমপরিমাণ যাত্রী ঢাকায় ফিরবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গন্তব্যের মধ্যে আকাশপথে ভারতে যাওয়ার টিকিট নিয়ে এখনো নৈরাজ্য কাটেনি। স্থলপথে যাত্রী পরিবহণ শুরু হলেও ওই রুটে আকাশপথের চিত্র আগের মতো। উলটো একটি বিদেশি এয়ারলাইন্স এখনো আকাশচুম্বী ভাড়া আদায় করে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি রুটেও একই অবস্থা চলছে। আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে চীনের বিভিন্ন গন্তব্যে আগস্ট পর্যন্ত কোনো আসন খালি নেই। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সপ্তাহে একটি ফ্লাইট করছে। ওই ফ্লাইটে শুধু চীনের নাগরিকদের পরিবহণ করা হচ্ছে। তারপরও আগস্ট পর্যন্ত কোনো আসন খালি নেই। এদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, কোনো কারণ ছাড়া বিমান সংস্থাগুলোর একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এখনো ভারতের বিভিন্ন রুটে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছে। ভারতের সব রুটে ৩-৪ গুণ বেশি ভাড়া বেড়েছে। ঈদের আগে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-দিল্লি ও ঢাকা-চেন্নায় রুটে টিকিটের দাম ৬০-৭০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আর যাত্রার এক সপ্তাহ আগে টিকিট না কাটলে দাম পড়ে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এমন অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া যাত্রীরা। বিমান সংস্থা সংশ্লিষ্টদের মতে, আকাশপথের অনেক রুটেই ঈদের অগ্রিম টিকিট শেষ। ফলে এখন সবচেয়ে বেশি দামের টিকিট বিক্রি চলছে। এবার ঈদে বাসে ভয়াবহ যানজট হতে পারে। ট্রেনের টিকিট পাবে না অনেক যাত্রী। লঞ্চের চিত্রও হবে ভয়াবহ। তাছাড়া ২ বছর ধরে মানুষ বাড়ি যেতে পারছে না। ওই কারণে আগেভাগে যারা বাড়ি যাবে তারা আকাশপথের টিকিটের জন্য হন্য হয়ে ছুটছে। রোজার প্রথম দিন থেকেই আকাশপথে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। অন্যদিকে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শল এম মফিদুর রহমান বলেছেন, এভাবে কোনো কারণ ছাড়া আকাশপথের ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনা দুঃখজনক। কমার্শিয়াল ইস্যুতে বেবিচকের হস্তক্ষেপ করার তেমন সুযোগ নেই। তারপরও বেবিচক এয়ারলাইন্সগুলোকে ডেকে ভাড়া কমানোর নির্দেশ দিয়েছে। কারণ নেপাল, ভারত, পাকিস্তানসহ আশপাশের কোনো দেশ থেকে অন্য আন্তর্জাতিক গন্তব্যে বিমান ভাড়া বাড়েনি। শুধু ঢাকা থেকে কেন এতো ভাড়া বাড়বে এমন যুক্তি দেখিয়ে কৈফিয়ত চাওয়ার পরও তারা কোনো সাড়া দেয়নি। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জানান, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাতে রানওয়ে বন্ধ থাকায় ফ্লাইট সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ওই কারণে যাত্রী চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। আকাশপথের টিকিট নিয়ে সংকট কাটানোর জন্য একাধিকবার বিভিন্ন এয়ারলাইন্স সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও বৈঠক হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ টিকিটের মূল্য না কমালে এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। তারপরও সংকট কাটেনি। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানের জন্য একটি সিলিং করে দেয়া হয়েছে। তার বাইরে আর দাম বাড়ানো যাবে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন অনুযায়ী সরকার কোনো এয়ারলাইন্সকে বাধ্য করাতে পারে না, অনুরোধ করতে পারে। আগামী মে মাস থেকে রাতে ফ্লাইট খুলে দেওয়া হবে। তখন আর এই সংকট থাকবে না। তবে ইতিমধ্যে সংকট কমতে শুরু করেছে।