অনলাইন ডেস্ক :
উড়িষ্যার ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। যে শ্রমিকরা রেলপথের পুরনো লেভেল ক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধক সংস্কার করছিল তারা রেল নেটওয়ার্কের স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতির সংযোগে ভুল করাতে দুই দশকের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে প্রাণঘাতী রেল বিপর্যয়ের ঘটনাটি ঘটেছিল বলে তদন্তে দেখতে পেয়েছেন তারা। রাজ্যটির বালেশ্বর জেলার বহানগা বাজার স্টেশনে গত ২ জুন এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। এতে ২৮৮ জন নিহত ও এক হাজার জনেরও বেশি আহত হয়েছিল। ওই দিন সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী যাত্রীবাহী করম-ল এক্সপ্রেস বহানগা বাজার স্টেশনে দাঁড়ানো একটি মালবাহী ট্রেনকে পেছনে থেকে পূর্ণ বেগে ধাক্কা দেয়। করম-ল এক্সপ্রেস ট্রেনটির এ স্টেশনের আপ লাইন ধরে সোজা চলে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কোনো একটা ক্রুটির কারণে সোজা লাইনে না গিয়ে এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনের লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দেয়।
এই সংঘর্ষের পাল্টা ধাক্কায় করম-লের কয়েকটি বগি ছিটকে গিয়ে পাশের ডাউন লাইনে পড়ে, ওই লাইন ধরে তখন বিপরীত দিক থেকে আসছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন; করম-লের বগিগুলোর আঘাতে হওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের পেছনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। রয়টার্সের দেখা ওই তদন্ত প্রতিবেদনে রেলওয়ের সেইফটি কমিশনের (সিআরএস) তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নিকটবর্তী লেভেল ক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধকে ঘন ঘন ঘটা সমস্যা সারাতে সিগন্যালিং সার্কিটে কিছুটা পরিবর্তন করা হয় আর এর কারণেই প্রথম সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, রেলওয়ের স্থানীয় কর্মীদের কাছে কোনো মান সার্কিট ডায়াগ্রাম ছিল না, এ কারণেই তারা মেরামতের জন্য বুম-ব্যারিয়ার সার্কিটটিকে অফলাইনে নেওয়ার চেষ্টাকালে সিগন্যালিং সিস্টেমের সংযোগে ক্রুটি ঘটে; এই ক্রুটিপূর্ণ সিস্টেম যাত্রীবাহী করম-ল এক্সপ্রেসকে সোজা লাইনে না পাঠিয়ে লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনের দিকে চালিত করে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত মাসে এক প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো জানিয়েছিল যে তদন্তকারীরা লেভেল ক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধকের সংস্কার কাজের দিকে এবং এর সঙ্গে সিগন্যালিং স্টিটেমের ম্যানুয়াল বাইপাসের সম্ভাব্য সংযোগের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক ভারতীয় রেলওয়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত একচেটিয়া কোম্পানি। এটি রেলওয়ে বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। এই বোর্ড রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে জবাবদিহি করে। এই রেল নেটওয়ার্ক তিন হাজার কোটি ডলারের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছেন। এ প্রকল্পের অধীনে রেলবহরে ঝাঁ চকচকে ট্রেন যুক্ত হচ্ছে, নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক রেলস্টেশন। কিন্তু এসব তোড়জোড়ের মধ্যে সুরক্ষার বিষয়টিতে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে কি না, উড়িষ্যার ট্রেন দুর্ঘটনার পর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিআরএসের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিগন্যাল ও টেলিকম বিভাগের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে বহু ত্রুটিবিচ্যুতি রয়ে গেছে এবং বহানগা বাজারের ওই লেভেল ক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধকের সংস্কার কাজ চলার সময় মান কার্য সূচী অনুসরণ করা হয়নি।
আরও পড়ুন
উত্তর প্রদেশে ভবন ধস, নিহত ১০
মিয়ানমারে ভয়াবহ বন্যায় ৭৪ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ৮৯
হাইতিতে ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ১৬, আহত ৪০