অনলাইন ডেস্ক :
ভারতের উত্তরাখন্ডে নির্মাণাধীন একটি হাইওয়ে টানেল ধসে চারদিন ধরে ভূগর্ভে আটকা পড়ে আছেন ৪০ জন শ্রমিক। তাদের উদ্ধারে নতুন এক ধরণের ড্রিল মেশিন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, রাজধানী দিল্লি থেকে গত বুধবার নতুন এই ড্রিল মেশিনটি আনা হয়। এর আগে আরো একটি মেশিন দিয়ে ধসে পড়া ধ্বংসাবশেষের ভেতর দিয়ে ড্রিল করে আটকে পড়া শ্রমিকদের বের করে আনতে একটি সুড়ঙ্গ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বিশাল বিশাল বোল্ডারের কারণে ওই মেশিনটি ড্রিল করতে ব্যর্থ হয়। শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য প্রথমে ধ্বংসাবশেষের ভেতর দিয়ে ড্রিল করে একটি সুড়ঙ্গ তৈরি পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তারপর ওই সুড়ঙ্গ দিয়ে একটি পাইপ ঢুকিয়ে দেওয়া হবে এবং শ্রমিকরা পাইপ বেয়ে উপরে উঠে আসবেন। গত রোববার স্থানীয় সময় ভোর ৫টার দিকে ওই টানেলটি ধসে পড়ে। ওই দিন সকালেই একটি পাইপের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাছে খাবার, পানি ও অক্সিজেন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, শনিবার রাতের পালায় ওই টানেলে ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। ধসের পর যারা টানেলের বেরিয়ে যাওয়ার মুখে কাজ করছিলেন তারা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। কিন্তু মাটির প্রায় ২০০ মিটার গভীরে কর্মরত শ্রমিকরা আটকা পড়ে যান। টানেলটি প্রায় ৪ হাজার ৫৩১ মিটার লম্বা। মাটি ধসে সেটির বেরিয়ে যাওয়ার মুখটি বন্ধ হয়ে গেছে।
আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে ওয়াকি-টকির মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন উদ্ধারকর্মীরা। কয়েকটি গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে কারো কারো মাথাব্যথা, উদ্বেগ এবং বমি বমি ভাব দেখা দিয়েছে। তবে বিবিসি এ বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, শ্রমিকরা কেউই আহত নন। নতুন যে মেশিনটি আনা হয়েছে সেটি ঘণ্টায় পাঁচ মিটার ড্রিল করতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন পরিকল্পনা হলো, ড্রিল করে একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করা এবং সেই সুড়ঙ্গে একটি ৯০০ এমএম চওড়া ধাতব পাইপ ঢুকিয়ে দেওয়া। যাতে ওই পাইপ বেয়ে শ্রমিকরা উপরে উঠে আসতে পারেন। তবে বিষয়টি বলা যত সহজ, কাজ করা অতটা সহজ নয়। কারণ, আরেকটি মেশিন বুধবার একই কাজ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ধসে পড়া ধ্বংসাবশেষের কারণে মেশিনটি বেশিদূর এগুতে পারেনি।
তাছাড়াও, ড্রিল করার সময় ঝুরঝুরে মাটি এবং পাথর দিয়ে টানেলের ফাঁকা অংশ ভরে যাচ্ছিল। তার উপর বার বার ভূমিধসের কারণে কাজটি আরো বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। ড্রিল না করে এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি খুঁড়ে ধ্বংসাবশেষের ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরির চেষ্টাও করেছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। নতুন মেশিন দিয়ে কতক্ষণে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করা সম্ভব হবে সে বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাইছেন না বলে বিবিসিকে জানান কর্মকর্তারা। এদিকে, সময় যত গড়াচ্ছে, আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। ধসে পড়া টানেলটি উত্তরাখন্ড রাজ্যে একটি জাতীয় মহাসড়কে নির্মিত হচ্ছিল। যা চারধাম হিন্দু তীর্থযাত্রা পথের অংশ।
এই টানেলটি উত্তরাখন্ডের উত্তর কাশীর সিল্কিয়ারাকে দন্দলগাঁও এর সঙ্গে সংযুক্ত করবে। যার ফলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান উত্তর কাশীর থেকে যমুনাত্রী ধামের মধ্যেবর্তী সড়ক পথের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার কমে যাবে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলোর একটি এই চারধাম হাইওয়ে। যার লক্ষ্য উত্তরাখন্ডে হিন্দুদের চারটি তীর্থস্থানকে জুড়ে দেওয়া। ৮৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারতের পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখন্ডে প্রায়ই ভূমিধসের ঘটনা ঘটে।
এটি ভূমিকম্প এবং বন্যা প্রবণ এলাকাও বটে। তার মধ্যে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে দ্রুত নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার কারণেই টানেল ধসের এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন ভূতত্ত্ববিদ, স্থানীয় বাসিন্দা এবং কর্মকর্তারা। ২০১৮ সালে টানেলটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২২ সালের জুলাই মাসে সেটির নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। পরে তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের মে মাস করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু