October 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 10th, 2022, 8:53 pm

‘উন্মাদ গোতাবায়া, গদি ছেড়ে দাও’ স্লোগানে মুখরিত কলম্বো

অনলাইন ডেস্ক :

প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শ্রীলঙ্কা। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়া দেশটির রাজধানী কলম্বোতে হাজার হাজার মানুষ এই দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। তারা বলছেন, রাজাপাকসে বা তার পরিবারের কাউকেই আর দেশ পরিচালনার ভার দিতে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। রোববার (১০ এপ্রিল) কলম্বোর ওয়াটারফ্রন্টে গালে ফেসে জড়ো হয়েছেন ছাত্র, শিক্ষক, আইনজীবী, অভিনয় শিল্পী, প্রকৌশলীসহ নানা পেশার মানুষ। তাদের অনেকেই প্রথমবারের মতো আন্দোলন করতে পথে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে জনতা ‘উন্মাদ গোতাবায়া, গদি ছেড়ে দাও গোতা’ বলে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে ফেলে পুরো এলাকাটি। এ সময় তাদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। হাতে হাতে দেখা গেছে ‘দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদের থাবা মুক্তি চাই’, ‘পাকসের পরিবারের হাত থেকে শ্রীলঙ্কাকে বাঁচাও’ লেখা প্ল্যাকার্ড। আন্দোলনে যোগ দেয়াদের একজন ২৯ বছর বয়সী বুদ্ধি করুণারত্নে। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন তিনি। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, এখন জীবন-মরণ সময়। প্রথমবারের মতো দলমত, শ্রেণিপেশা নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে পথে নেমেছে। সবারই এক দফা এক দাবি, গোতাবায়া কখন যাবি? তিনি বলেন, এখন যোগ্যতাসম্পন্ন এমন প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, যারা এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারেন। ২০১৯ সালে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার দল এক বছরের কম সময়ে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। এর ফলে গোতাবায়া তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ পান। এ ছাড়া অর্থ, কৃষি এবং ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে গোতাবায়া তার পরিবারের আরও তিন সদস্যকে মন্ত্রিসভায় যুক্ত করেন। ২০১৯ সালে বোমা হামলায় অন্তত ২৫০ জন নিহত হওয়ার সেই ভয়াবহ সময়ে ভোটাররা বলেছিলেন, রাজাপাকসে দেশকে স্থিতিশীল করবেন ও নিরাপত্তা বাড়াবেন বলে তারা বিশ্বাস করেন। জনগণের এই বিশ্বাস ও আশাবাদের পেছনে কারণও ছিল। সেটি হলো, ২০০৯ সালে গোতাবায়া ও মাহিন্দার তত্ত্বাবধানে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সামরিক পরাজয় হয়েছিল। এর মাধ্যমে দেশটিতে দীর্ঘ ২৬ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সমাপ্তি হয়েছিল। সে সময় মাহিন্দা ছিলেন প্রেসিডেন্ট আর গোতাবায়া প্রতিরক্ষা সচিব। কিন্তু আজ র‌্যালিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারী বলছেন, রাজাপাকসে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। একটি দেশ চালানোর কোনো যোগ্যতাই তিনি রাখেন না। এই ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলার মতো ঘিলু রাজাপাকসের মাথায় নেই। ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশটিতে এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও তেলসহ নিত্যপণ্যের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ৪ এপ্রিল মন্ত্রিসভা থেকে একযোগে ২৬ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অজিত নির্ভাদও পদত্যাগ করেন। চরম অর্থনৈতিক সংকটে গণ-অসন্তোষের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন জোটেও ভাঙন দেখা দেয়। তাতে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন জোট। মার্চ মাস শেষে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৯৩ বিলিয়ন ডলারে। চলতি বছর দেশটির মোট ঋণের পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করছেন জেপি মরগান বিশ্লেষকরা। এদিকে, ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়া দেশটির অর্থমন্ত্রী আলী সাবরি জানিয়েছেন জরুরি ভিত্তিতে তিন বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ দরকার শ্রীলঙ্কার। শনিবার রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তেল, বিদ্যুৎ, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আগামী ছয় মাসের মধ্যেই এই অর্থ প্রয়োজন। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বসব। আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। তিনি জানান, সরকার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং বিশ্বব্যাংক থেকেও সহায়তা চাইবে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যকেও পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সহায়তা চাওয়া হবে। এ ছাড়া জ¦ালানির জন্য ভারতের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চাইবে শ্রীলঙ্কা। যা দিয়ে প্রায় পাঁচ সপ্তাহ চলা যাবে।
শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড পুনর্গঠন করতে চায় জানিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, জুলাই মাসে বন্ডের এক বিলিয়ন ঋণ শোধের উপর একটি স্থগিতাদেশ চাইবে দেশটি। এজন্য বন্ডহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় সরকার। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দল এনপিপির এমপি অনুরা কুমারা দিশানায়েকে বলেছেন, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ছাড়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার হাতে আর মাত্র একটিই পথ রয়েছে। তা হলো পদত্যাগ করা। এটি ছাড়া আর কোনো প্রস্তাব মানতে আমরা রাজি নই। দেশের জনগণও এখন প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চায়। তারা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।