October 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 7th, 2023, 8:49 pm

উন্মোচন হলো ‘কাঁটা’র টাইপো-লোগো

অনলাইন ডেস্ক :

‘কাঁটা’র লোগো চূড়ান্ত, উন্মোচিত হলো। ছবির শুটিংয়ের আগেই ভাবনা ছিল- কী রকম হতে পারে এ গল্পের টাইপো-লোগো? তখন অবশ্য ভাবতাম, মানুষের শরীরের হাড় দিয়ে বানানো বর্ণমালায় লেখা হবে কাঁটা। তাছাড়া স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের বাংলা হরফ তো হতেই হবে, আরও ভেবেছি যে, নামলিপির মধ্যেই ছবির ঐতিহাসিক পটভূমি যেন উঁকি দেয়। স্মর্তব্য, কাঁটা, ইটস নট অ্যা ফিল্ম, ইটস ট্র্যাজেডি। এটা একটা পিরিওডিক্যাল জার্নি। বাংলা কথাসাহিত্যের খুবই শক্তিমান রূপকার শহীদুল জহিরের ‘কাঁটা’ গল্পটি রচিত ১৯৯৫ সালে। প্রথমে গল্পের নাম ছিল ‘মনোজগতের কাঁটা’। পরে জনাব জহির শুধু ‘কাঁটা’ নামেই সামাজিক এ আখ্যানের নামকরণ করে যান। অকৃতদার শহীদুল জহির আকস্মিক মারা যান ২০০৮ সালে। এখন ২০২৩ সমাপনীতে পৌঁছেছে।

‘কাঁটা’র পোস্ট-লেভেলের কাজ চলছে। এবং দর্শক ছবিটি আর কিছুদিন পরই দেখতে পাবেন- এ কথা এখন বলা যায়। দেরি যা হলো, তার কিছু কারণের প্রধান একটি কারণ বাজেট। মনে রাখা দরকার, আমি তো কোনো কালাবাজারি বা ব্যবসায়ী প্রযোজক কেউ নই, কবিতা লিখিয়ে প্রয়োজক। এরকম একটি ব্যয়বহুল ছবির প্রযোজনা সহজ কিছু নয়। আমার কি অঢেল টাকা আছে? না। তাইলে? তাইলে কি? ছবি বানাব না? আমার ইচ্ছাতে আমি ছবি বানাব। আপনার ইচ্ছাই আপনি দেখবেন বা দেখবেন না, তাই তো? আমার কাজটা আমাকে করতে দেন। যারা আমাকে ফান্ডিং সাপোর্ট করেছেন, এ ব্যাপারে তাদের কোনো প্রশ্ন নেই, প্রশ্ন নেই কাঁটা টিমেরও।

কারণ, তারা বাস্তবতাটা জানে। প্রশ্ন কিছু আছে যারা পত্রিকার বিনোদন খবর পড়ে সিনেমার খবর রাখতে চান, আর বিনে পয়সায় ইউটিউব দেখতে চান। তবে কথা এখন ওদিকে না, কথা হবে লোগো নিয়ে। বলেছি, শুরু থেকেই এ ছবির লোগো নিয়ে ভাবনা ছিল। সচরাচর আমার লেখা বইগুলোর প্রচ্ছদ বেশিরভাগ করেছেন ধ্রুব এষ। তবে প্রথম বইটার প্রচ্ছদ ও টাইপো ছিল কাইয়ুম চৌধুরীর আঁকা। সব্যসাচী হাজরার করা ছিল দুই তিনটা বইয়ের প্রচ্ছদ ও টাইপো ডিজাইন। দিনে দিনে ডিজাইনে ম্যানুয়াল পিরিয়ড পেরিয়ে এখন আমরা এসে পড়েছি একেবারে একটা ডিজিটাল পিরিয়ডে।

আনিসুজ্জামান সোহেল কিংবা সব্যসাচী হাজরার লোগো-টাইপোতে দারুণ কিছু থাকে! মামুন হোসাইনের ডিজাইনেও নিজস্ব এক ছন্দ পরিস্ফুটিত হয়। মাসুক হেলাল, উত্তম সেন বা মোস্তাফিজ কারিগরের কাজও খেয়াল করি। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের শিক্ষক ছিলেন, তাঁর টাইপোগ্রাফি বাংলা বর্ণমালার এক সম্পদ, একটা সংযোজন। শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য ফ্রি হ্যান্ড টাইপোতে করেছেন জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’ ছবিটির লোগো। কী সুন্দর! এমন কি আমিও ফ্রি হ্যান্ড বাংলা টাইপোগ্রাফি করতে ভালোবাসি, নানান ক্ষেত্রে কিছু করেছিও। কিন্তু ‘কাঁটা’র লোগো ফ্রি হ্যান্ড টাইপো না হোক, এটাই মাথার মধ্যে ক্রমশ গেঁথে গেল। ভাবতে ভাবতে একদিন একটা মশার কয়েল আমাকে ফর্মটা দৃশ্যমান করে দিল।

কী চাচ্ছিলাম তবে লোগোতে? ঘূর্ণাবর্ত সময়ের চক্রাকার মাপঝোঁক সাপেক্ষে জ্যামিতিকভাবে আসুক? এবং চাচ্ছিলাম যে, নামলিপির মধ্যেই যেন ছবির ঐতিহাসিক পটভূমিটা হালকা উঁকি দেয়। আমার ছবি করিয়ে বন্ধুরাও ওদের ছবির নামের টাইপোতে দারুণ সচেতন। নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ টাইপোটি দেখলাম, দেখলাম মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’র টাইপো লোগো। স্বতন্ত্র প্রয়াস লক্ষণীয়। একদা চারুকলা ইন্সটিটিউটের পড়িয়ে ছিলাম বলে এদেশের চিত্রশিল্পী সমাজের প্রায় সকলেই আমার বা আমাদের ঘরবাড়ি-উঠোনের জ্ঞাতিগোষ্ঠীর মানুষ, এই অনুভব থাকেই সবসময়।

আকস্মিক প্রয়াণের পর কবি অমিতাভ পাল স্মরণ সভার ডায়াসে দাঁড়িয়ে হঠাৎই একদিন দেওয়ান আতিকুর রহমানের টাইপোগ্রাফির দক্ষতা ও নতুনত্ব খেয়াল করলাম। পরে ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে আতিকের সঙ্গে ‘কাঁটা’র টাইপো-লোগো নিয়ে বিস্তারিত ভাবনা বিনিময় শুরু হলো এবং দিনে দিনে একাধিক লোগো তৈরি হতে লাগল। হয়তো এগারতম ভার্সনে এসে মনে হলো, যা প্রয়োজন, তা এসে গেছে। কাঁটা ছবি নির্মাণে চারুকলার শিল্পী যুক্ত আছে ১০/১২ জন। টাইপো-লোগো ধরেই দেওয়ান আতিকুর রহমানও টিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল। এই লগ্নে আতিককে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সাযুজ্য বজায় রেখে ছবির বাংলা ও ইংরেজি লোগোও চূড়ান্ত হলো। আতিকের করা কাঁটার লোগোর বাংলা ভার্সনে একটুখানি আমার ফ্রিহ্যান্ড টাইপোও ব্যবহৃত হলো, সে আতিকের আগ্রহের কারণেই। দি সার্কেল অফ হেল্পলেসনেস, সেলফ রিপ্রোচ এ- ডিলিউশন কিংবা অসহায়ত্ব, আত্মগ্লানি ও বিভ্রান্তির চক্র কাঁটা। কাঁটার মধ্যে তিনটি অধ্যায়।

প্রথমত, ১৯৮৯-৯০ সাল বাস্তবতা, দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ বাস্তবতা এবং তৃতীয়ত, ১৯৬৪ সাল বাস্তবতা। ‘অতীত, বর্তমানের ভেতর দিয়ে ভবিষ্যতে প্রবিষ্ট হয়, কাঁটা ছবিতে ভবিষ্যৎ, বর্তমানের ভেতর দিয়ে অতীতে অনুপ্রবিষ্ট হবে’। এটাই অ্যাট অ্যা গ্লান্স কাঁটা। দারুণ ম্যাজিক্যাল স্টোরি। ছবির নির্মাণ টিম মেম্বররা যে যার জায়গায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন ক্যামেরার পেছনে এবং ক্যামেরার সামনে কাজ করেছেন প্রায় পাঁচশো মানুষ। অকৃত্রিমভাবে কিছু স্বজনের নেপথ্য অর্থনৈতিক সাপোর্টেই ব্যয়বহুল এই পিরিওডিক্যাল ছবিটি নির্মাণ সম্পন্নের দিকে এখন। সে-সব মানুষের কাছে অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা আমার। দেওয়ান আতিকুর রহমানের ডিজাইনে কাঁটার লোগো-টাইপো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হলো। এখন থেকে কাঁটা-কার্যক্রমে বাংলা ও ইংরেজি এই লোগোটিই ব্যবহৃত হবে। এবং অবশ্যই কিছুদিনের মধ্যে কাঁটা আপনার চোখের সামনে উন্মোচিত হবে। অপেক্ষা শুধু আর ক’টা দিন। যদিও আমরা জানি, অপেক্ষা কষ্টকর, মধুরও।