একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপকরণ নিষ্পত্তি তথা নষ্ট করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে একটি আদেশ জারির জন্যও প্রস্তুতি চলছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনের উপকরণ মাঠ পর্যায়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকরা দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিধায় সেগুলো তাদের তত্ত্বাবধানেই আছে। প্রার্থীদের হলফনামা, মনোনয়নপত্র, নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব, ব্যালট পেপার, সিল, প্যাড ইত্যাদি রিটার্নিং কর্মকর্তার হেফাজতেই থাকে।
ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এগুলো সংরক্ষণে রাখা হয়। কেননা, নির্বাচন শেষ হলেও মামলা করেন অনেক সময় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। আর মামলায় আলামত হিসেবে নির্বাচনী উপকরণ আদালতে দাখিল করতে হয়। তবে একটি নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে বা আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলে বা কোনো মামলা না থাকলে তা নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। সে অনুয়ায়ী, কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বিশেষ মাসিক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্তটি হয়েছে বলে জানা গেছে। ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার স্বাক্ষরিত ওই সভার কার্যবিবরণীতে সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছে।
তিনি নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিবকে বলেন, মাঠ পর্যায়ে সংরক্ষিত গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী মালামালসমূহ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে মামলার বিষয়ে আইনগত মতামত সংগ্রহপূর্বক নির্বাচনী মালামালসমূহ নিষ্পত্তির জন্য এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করতে হবে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গাইবান্ধা-৩ আসনের একজন প্রার্থী ভোটের কয়েকদিন আগে মৃত্যুবরণ করায় সেখানে নির্বাচন হয় ২৭ জানুয়ারি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ৮ ও অন্যান্যরা ৪টি আসন পায়। নির্বাচনে ভোট পড়ে ৮০ শতাংশ। ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট নেওয়া হয়, এতে ভোট পড়ে ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ।
নির্বাচনের ফল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বর্জন করে। এমনকি তারা প্রথমে সংসদেও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্ট থেকে একটি পৃথক বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া হলেও তাতে খুব একটা মামলা হয়নি। এছাড়া অন্যান্য বিষয়েও তেমন মামলা নেই বলে জানা গেছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নির্বাচনী উপকরণ এক বছর সংরক্ষণ করার বিধান রয়েছে। এই এক বছরে ব্যালট পেপার ব্যতিত অন্য যেকোনো ডকুমেন্ট পৃষ্ঠা প্রতি ১০০ টাকা প্রাপ্তির পর যেকোনো ব্যক্তিকে সরবরাহ করতে পারেন তিনি। এক বছর পর হাইকোর্ট বা নির্বাচন কমিশনের আদেশে সকল ডকুমেন্ট নিষ্পত্তি তথা নষ্ট করে ফেলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
আরপিওর ৪২ অনুচ্ছেদের এই ক্ষমতা বলেই নির্বাচন কমিশন এখন একাদশ সংসদ নির্বাচনের উপকরণ নষ্ট করে ফেলার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। এক্ষেত্রে আদালতে কোনো মামলা আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখার জন্য ইসির আইন শাখাকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো মামলা সংক্রান্ত জটিলতা না থাকলে, শিগগিরই রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা জেলা প্রশাসকদের নথি নষ্ট করে ফেলার নির্দেশনা পাঠাবে ইসি।
আরও পড়ুন
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ
বিশ্বের ৫ কোটি মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন
ইরাকের উত্তরাঞ্চলে বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুন লেগে নিহত শতাধিক