নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকার একাধিকবার বন্ধ ঘোষণার পরও দেশের সহাসড়কগুলোতে বিপুলসংখ্যক অবৈধ যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অর্ধযুগেও সরকারি সিদ্ধান্তের যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটেনি। দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে থ্রি-হুইলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন চলাচল একাধিকবার বন্ধ ঘোষণা করলেও মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক) ও মোটরচালিত রিকশা। ফলে, সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। বরং উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততা এবং কার্যকর তদারকির অভাবে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা যুক্ত রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওসব যান নিয়মিত চাঁদা দিয়েই সড়কে চলাচল করছে। পরিবহন খাত এবং হাইওয়ে পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে বিগত ২০১৫ সালে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তার আগে সরকার মহাসড়কে অটোরিকশা ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রয়োজনে মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের জন্য আলাদা লেন চিহ্নিত করে দেয়া হবে। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রথম দিকে পুলিশি তৎপরতায় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলও কমে এসেছিল। ফলে ওই সময় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমে এসেছিল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বাড়তে থাকে। বর্তমানে সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে অবাধে নিষিদ্ধ ঘোষিত তিন চাকার যানগুলো চলাচল করছে। মাঝে একাধিবার মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের চেষ্টা করা হলেও সরকারি সিদ্ধান্ত বান্তবায়ন করা যায়নি।
সূত্র জানায়, মহসড়কে ধীরগতির ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন দুর্ঘটনার বড় কারণ। মহাসড়ক সব সময় অবারিত থাকা জরুরি। আর ওসব ছোট গাড়ির জন্য আলাদা লেন করতে পারলে সুফল পাওয়া যেত। বর্তমানে থ্রি-হুইলার নিষিদ্ধ মহাসড়কগুলো হচ্ছে- এন ১-কাঁচপুর সেতু (ঢাকা)-মদনপুর-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম-রামু (কক্সবাজার), এন ২-কাঁচপুর সেতু (ঢাকা)-ভেলানগর (নরসিংদী)-ভৈরব-সরাইল-মাধবপুর-মিরপুর-শেরপুর-সিলেট বাইপাস, এন ৩-জয়দেবপুর চৌরাস্তা-ময়মনসিংহ বাইপাস পয়েন্ট, এন ৪-জয়দেবপুর চৌরাস্তা-টাঙ্গাইল-জামালপুর, এন ৫-আমিনবাজার সেতু (ঢাকা)-মানিকগঞ্জ- পাটুরিয়া ঘাট-খয়েরচর ঘাট-কাশিনাথপুর- হাটিকুমরুল-বগুড়া বাইপাস-রংপুর বাইপাস-সৈয়দপুর বাইপাস-দশমাইল (দিনাজপুর)-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা, এন ৬-কাশিনাথপুর (পাবনা)-পাবনা বাইপাস-দাশুড়িয়া-নাটোর বাইপাস-রাজশাহী বাইপাস-নবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ-বালিয়াদীঘি স্থলবন্দর, এন ৭- দৌলতদিয়া-ফরিদপুর (রাজবাড়ী মোড়)-মাগুরা-ঝিনাইদহ বাইপাস-যশোর বাইপাস-খুলনা সিটি বাইপাস-মংলা, এন ৮-তেঘরিয়া মোড় (ঢাকা)-মাওয়া-কাওড়াকান্দি-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী, এন ১০২-ময়নামতি (কুমিল্লা)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাইপাস-সরাইল, এন ১০৫-মদনপুর-ভুলতা-মিরেরবাজার-ভোগড়া-কড্ডা (ঢাকা বাইপাস), এন ৪০৫-এলেঙ্গা-নলকা-হাটিকুমরুল, এন ৫০২-বগুড়া-নাটোর, এন ৫০৬-রংপুর-বড়বাড়ি-কুড়িগ্রাম, এন ৫০৭-হাটিকুমরুল-বনপাড়া, এন ৫০৯-বড়বাড়ি-লালমনিরহাট-বুড়িমারী, এন ৫৪০-নবীনগর- ইপিজেড- চন্দ্রা, এন ৭০২-যশোর-মাগুরা, এন ৭০৪ ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-দাশুড়িয়া, এন ৭০৬-চাঁচড়া মোড় (যশোর)-বেনাপোল, এন ৮০৪ ও ৮০৮-ভাঙ্গা-ফরিদপুর বাইপাস-রাজবাড়ী মোড়, এন ৮০৫ ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া-মোল্লাহাট-ফকিরহাট-নোয়াপাড়া এবং এন ৮০৬-ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর।
সূত্র আরো জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও বর্তমানে মহাসড়কে অবাধে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভটভটিসহ থ্রি-হুইলার চলছে। ব্যস্ততম মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচলের কারণে দুর্ঘটনাও বেড়েছে। বলতে গেলে মহাসড়কগুলো এখন থ্রি-হুইলারের দখলে। পুলিশের সামনে দিয়ে অবাধে চলাচল করছে শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি, লেগুনা। এমনকি কোনো কোনো মহাসড়কের ওপরই অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অটোরিকশা, অটো টেম্পো স্ট্যান্ড। তবে হাইওয়ে পুলিশের দাবি- মহাসড়কে নিষিদ্ধ যান পেলেই আটক করে মামলা দিয়ে সরাসরি ডাম্পিং এ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ জানান, মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিন চাকার গাড়িগুলো অনেক সময় গোপনে চলতে চায়। ওসব গাড়ির বিরুদ্ধে সারা বছরই ব্যবস্থা চলছে। হাইওয়ে পুলিশ ওসব গাড়ি আটক করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি