November 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 18th, 2022, 9:55 pm

এলএনজি টার্মিনাল সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার না হলেও গুনতে হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের দুটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালের সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত জাতীয় গ্যাস গ্রিডে ৪৫০-৫০০ এমএমসিএফডি এলএনজি সরবরাহ হয়েছে। আর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭৫০-৮০০ এবং আগস্ট থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়ে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়েছে। গত ১২ মাসে গ্রিডে গড়ে দৈনিক ৫৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো ছিল এলএনজি সরবরাহ। আর বসে ছিল বাকি ৪৩০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি ক্যাপাসিটি। কিন্তু এলএনজির বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করা না গেলেও খরচ কমেনি। কারণ সক্ষমতা বসে থাকলেও পেট্রোবাংলাকে তার টার্মিনাল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে ক্যাপাসিটি চার্জ ঠিকই গুনতে হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে আমদানিকৃত গ্যাস সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। দৈনিক এক হাজার এমএমসিএফ সক্ষমতার দুটি ভাসমান টার্মিনালের একটির মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেটেড এনার্জি ও অন্যটির মালিকানায় রয়েছে সামিট। এলএনজি সরবরাহ চুক্তি অনুযায়ী মোট সক্ষমতার এলএনজি সরবরাহ দিতে না পারলেও পেট্রোবাংলাকে অব্যহৃত সক্ষমতার জন্য টার্মিনাল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। কিন্তু বিশ্ববাজারে এলএনজির অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে আমদানি সঙ্কটে দুটি টার্মিনালেরই মোট সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিশেষত চলতি বছরের জুলাই থেকে স্পট এলএনজি আমদানি বন্ধ থাকায় ৫৫০-৬০০ এমএমসিএফডির বেশি এলএনজি সরবরাহ হয়নি। এলএনজি টার্মিনাল সক্ষমতার বিষয়টি পুরোপুরি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। তখনই পুরো সক্ষমতার গ্যাস আমদানি করা সম্ভব হলেই ক্যাপাসিটির পূর্ণ ব্যবহার করা সম্ভব হবে। আর তা নাহলে বসিয়েই রাখতে হবে সক্ষমতা।
সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) অস্বাভাবিক দাম থাকায় এশিয়ার অনেক দেশই এলএনজি টার্মিনালের পুরো সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেনি। তবে তার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে। অব্যবহৃত আছে এলএনজির রিগ্যাসিফিকেশনে মোট সক্ষমতার ৫০ শতাংশেরও বেশি। চলতি বছরের জুলাই থেকে স্পট এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে ওই সময় থেকে জাতীয় গ্রিডে ১৫০-২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ কমেছে। তাছাড়া চলতি বছর দীর্ঘমেয়াদি উৎস থেকেও কার্গো সরবরাহ কমে যায়। মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী এলএনজির বাজারদরে শুরু হয় তীব্র প্রতিযোগিতা। বিশেষত ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ কমে গেলে বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি সংগ্রহে তীব্র প্রতিযোগিতায় নামে ইউরোপীয় দেশগুলো। ফলে পণ্যটির দর বেড়ে যায়। বিশেষ করে এশিয়ার আমদানিকারক দেশগুলোয় এলএনজি সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় খোলাবাজারে পণ্যটির দাম আকাশচুম্বী হয়। তবে এখন তা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে নেমেছে। আর এলএনজির ঊর্ধ্বমুখী দরে টিকতে না পেরে এশিয়ার অনেক দেশ বাজার থেকে ছিটকে পড়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবরে এলএনজির দাম ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর বৈশ্বিক বাজারদরে জ্বালানি সংস্থান করতে গিয়ে রিজার্ভ সঙ্কটের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের গভীরে নিমজ্জিত হচ্ছে।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, এলএনজি অবকাঠামো পুরো ব্যবহার না হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ সক্ষমতা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করা যায়নি। বিশ্ববাজারে এলএনজির অস্বাভাবিক দাম। দাম বাড়লে আমদানি করার মতো যে টাকা প্রয়োজন তা নেই। তবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে ক্যাপাসিটি চার্জের মতো আর্থিক ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হতো।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান জানান, উচ্চমূল্যের কারণে স্পট থেকে এলএনজি আমদানি করা যাচ্ছে না। পেট্রোবাংলা দাম সহনীয় পর্যায়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। আর এ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ নয় বরং তা এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণকারী কোম্পানির বিনিয়োগ। গ্যাস রিগ্যাসিফিকেশনের সঙ্গে ওই চার্জ টার্মিনাল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান তুলে নেয়। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ অনুযায়ী তাদের ওই অর্থ দিতেই হবে।