October 14, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, August 27th, 2023, 7:34 pm

ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনের মৃত্যু হয়েছে বিমান দুর্ঘটনায়: রাশিয়া

এপি, মস্কো :

ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের মৃত্যু বিমান দুর্ঘটনায় হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার তদন্ত কমিটি।

কমিটির মুখপাত্র স্বেতলানা পেট্রেনকো রবিবার (২৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বলেছেন, ফরেনসিক ও জেনেটিক পরীক্ষার পরে দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ১০ জনের লাশের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।

তবে বিবৃতিতে দুর্ঘটনার কারণ কী হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়নি।

রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এই সপ্তাহের শুরুতে জানায়, প্রিগোজিনসহ তার ছয়জন শীর্ষ লেফটেন্যান্ট এবং তিনজন ক্রু নিয়ে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। মস্কো এবং তার নিজ শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের মাঝামাঝি একটি জায়গায় বিমানটি আকাশ থেকে আছড়ে পড়লে বিমানের ১০ আরোহী নিহত হন।

তবে এই দুর্ঘটনাকে একটি ‘পরিকল্পিত হত্যা’ বলে মনে করছেন অনেকেই।

কারণ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহের মাত্র দুই মাস পরেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৩-২৪ জুন বিদ্রোহের অবসান করা চুক্তিতে অভিযোগ প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছিলেন, পুতিন দীর্ঘদিন প্রিগোজিনের দিকে নজর রাখবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘আসলে কী ঘটেছে আমি তা জানি না। তবে আমি অবাক হইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়ায় খুব কম কাজই পুতিনের ইশারা ছাড়া হয়।’

প্রিগোজিন সমর্থকরা প্রো-ওয়াগনার মেসেজিং অ্যাপ চ্যানেলে দাবি করেছেন, বিমানটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিধ্বস্ত করা হয়েছে।

কীভাবে তা করা হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত দিয়েছেন তারা।

বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক প্রিগোজিনের মৃত্যুকে পুতিনের ২৩ বছরের শাসনকালে তার কর্তৃত্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ করার শাস্তি বলে মনে করছেন।

কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের একজন সিনিয়র ফেলো তাতিয়ানা স্ট্যানোভায়া টেলিগ্রামে বলেছিলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনার কারণ যাই হোক না কেন, সবাই এটিকে ক্রেমলিনের প্রতিশোধ বলে মনে করবে।’

স্ট্যানোভায়া টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, ‘প্রিগোজিনের মৃত্যু পুতিনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর সম্ভাব্য বিদ্রোহকারীদের জন্য দেওয়া একটি শিক্ষা হতে পারে।’

গত ২৩ জুন ওয়াগনার সেনাদের শুরু করা বিদ্রোহ ২৪ ঘণ্টারও কম সময় স্থায়ী হয়েছিল। প্রিগোজিনের ভাড়াটে সৈন্যরা দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্তভ-অন-ডন শহরে প্রবেশ করে এবং একটি গুলিও না চালিয়ে সেখানকার সামরিক সদর দপ্তর দখল করে।

এরপর ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যরা মস্কো অভিমুখে রওনা দেয়, যেটিকে প্রিগোজিন শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতাদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ‘মার্চ অব জাস্টিস’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

পুতিন এই বিদ্রোহকে ‘বিশ্বসঘাতকতা’ এবং ‘পিঠে ছুরিকাঘাত’ বলে নিন্দা করেছিলেন এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্ততায় পুতিন ও প্রিগোজিন একটি চুক্তি করেছিলেন।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রিগোজিন ও তার ভাড়াটে সৈন্যদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অপরাধে আনা ফৌজদারি মামলাগুলো তুলে নিয়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। বিনিময়ে প্রিগোজিন বিদ্রোহের অবসান করে বেলারুশে চলে যাবেন।

বিদ্রোহ সত্ত্বেও প্রিগোজিনের ভাড়াটে সৈন্যরা আফ্রিকায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে।

এই সপ্তাহের শুরুর দিকে, প্রিগোজিন তার প্রথম ভিডিও প্রকাশ করেন।

যেখানে তিনি জানান তিনি আফ্রিকার কোনো একটি জায়গা থেকে কথা বলছিলেন।

ভিডিওতে তিনি বলছিলেন, ওয়াগনার ‘সব মহাদেশেই রাশিয়াকে আরও ক্ষমতাবান করবে এবং আফ্রিকাকে আরও মুক্ত করে তুলবে।’

প্রিগোজিনের বিদেশি কার্যকলাপ রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে বিরক্ত করেছে।

তারা আফ্রিকায় ওয়াগনার সৈন্যদের বদলে রাশিয়ান সামরিক কর্মী পাঠাতে চাচ্ছিলেন।