November 14, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, July 28th, 2021, 8:03 pm

কক্সবাজারে পাহাড় ধস, জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত জনজীবন

জেলা প্রতিনিধি :

মহামারি করোনার সংক্রমণ দিনের পর দিন বেড়ে চলছে কক্সবাজারে। তার ওপর অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ধস আর পূর্ণিমার জোয়ারে প্লাবিত গ্রাম। এ যেন কক্সবাজারের মানুষের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এলাকার জনজীবন। জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গাণিতিক হারে বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আরও ৩৭টি করোনার বেড বাড়ানো হয়েছে। এই হাসপাতালে এখন করোনা বেডের সংখ্যা ১৮২। এদিকে গত মঙ্গলবার ভোর থেকে টানা বর্ষণে উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধস ও ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন শিশুসহ ছয় রোহিঙ্গা শরণার্থী। আহত হয়েছেন পাঁচ জন। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, বালুখালী ক্যাম্প-১০, জি-৩৭ ব্লকের শাহ আলমের স্ত্রী দিল বাহার (৪২), তার শিশু সন্তান শফিউল আলম (৯), জি-৩৮ ব্লকের মোহাম্মদ ইউসূফের স্ত্রী গুল বাহার (২৫), তার আড়াই মাসের শিশু সন্তান আবদুর রহমান ও তার কন্যা আয়েশা সিদ্দীকা (১)। বুধবার (২৮ জুলাই) রাত ২টার দিকে টেকনাফের হ্নীলায় পাহাড়ধসে আরও পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন তিন জন। নিহতরা হলেন, ভিলেজার পাড়ার সৈয়দ আলমের সন্তান আব্দু শুক্কুর (১৬) মো. জোবাইর (১২) আবদুর রহিম (৫) কুহিনুর আক্তার (৯) জয়নবা আক্তার (৭)। একই উপজেলায় হোয়াইক্যংয়ে ঘরের দেয়াল ধসে রকিম আলী (৫০) নামের আরেক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মহেশখালীতে পাহাড় ধসে দেয়ালচাপায় দুই জন মারা গেছেন। তারা হলেন, ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের উত্তর সিপাহী পাড়ায় আনসারুল করিমের মেয়ে মুর্শিদা আক্তার (১৪) এবং মহেশখালী হোয়ানক রাজুয়ারঘোনা এলাকার আলী হোসেন (৮০) এ নিয়ে কক্সবাজার জেলায় পাহাড় ধস ও পানিতে ডুবে ১৪ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে টেকনাফে ছয় জন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছয় জন এবং মহেশখালীতে দুই জন। এদিকে, ভারী বর্ষণে জেলার ৯ উপজেলায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানি ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে এবং জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান। উপকূলে দফায় দফায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিও অব্যাহত রয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় উখিয়া, টেকনাফ ও রামু উপজেলায় বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, হ্নীলা, বাহারছড়া, মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়ন, কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল, উত্তর ধুরুং, লেমশীখালী ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন এবং পেকুয়ার মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাগুলো এখনও সাগরের জোয়ার-ভাটায় একাকার। জোয়ারের পানিতে অনেক বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে বসতবাড়ির রান্নাঘরে কোমর সমান পানি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী জানান, টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা, সাবরাংয়ের বেশ কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৭ শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জোয়ারের পানি নেমে গেলে ক্ষয়-ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব জানা যাবে। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে বাহারছড়া ইউনিয়নে একদিকে পাহাড়ধস অন্যদিকে জোয়ারের পানিতে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ইউনিয়নের দক্ষিণে বসবাসকারী মানুষগুলো পাহাড়ধস ও জোয়ারের পানির আতঙ্কে রয়েছে। রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. ইসমাইল নোমান বলেন, ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম এখন পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এসব গ্রামের ৫০০ পরিবার পানিবন্দি। ঝূঁকিপূর্ণ স্থান থেকে লোকজনকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। নদীর পানি রাত ১০টার পরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আরও বেশী দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে। মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ও রাস্তা সংস্কার করা হবে। ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাময়িক অসুবিধা হলেও সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।