October 13, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, September 1st, 2023, 10:34 pm

করের চাপে ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রিতে ধস নামায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করের চাপে ফ্ল্যাট-প্লট কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছে ক্রেতারা। ফলে আবাসন খাতে নেমেছে ধস। আগে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার ফ্ল্যাট হস্তান্তর হতো। তার মধ্যে ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বিক্রি হতো ৮ হাজার। কিন্তু এখন ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। মূলত চলতি বছর ফ্ল্যাট ও জমি নিবন্ধনে কর দ্বিগুণ বৃদ্ধির কারণে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় কমেছে ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধন। ফলে কমেছে সরকারের রাজস্ব আয়ও। আর শুধু ঢাকা শহরেই আবাসন খাত থেকে আয়কর আদায় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আবাসনসংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ ব্যক্তি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে জমি নিবন্ধনের সময় চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ কর দিতে হয়। আর ফ্ল্যাট নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ৮০০ টাকা বা চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ কর হিসেবে দিতে হবে। এর ফলে জমির দাম চলে গেছে নাগালের বাইরে। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারা, ডিওএইচএস, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট বেশি কেনাবেচা হয়। তাছাড়া ঢাকা শহরের আশপাশে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে বেশি জমি বা প্লট বিক্রি হয়। রাজধানী ও এর আশপাশের ১৭টি সরকারি নিবন্ধন কার্যালয়ে জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধন করা হয়।

এসব নিবন্ধন কার্যালয়ে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের সময় এনবিআরের কর কেটে রাখা হয়। এনবিআর ওই ১৭টি কার্যালয় থেকে করের হিসাব নিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে মাত্র ৩২ কোটি টাকা নিবন্ধন কর পাওয়া গেছে। অথচ ২০২২ সালের জুলাই মাসে নিবন্ধন করের পরিমাণ ছিল ১০১ কোটি টাকা।

গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে এ বছরের জুলাইয়ে নিবন্ধন বাবদ ৬৯ কোটি টাকা কম কর আদায় হয়েছে। আগস্ট মাসেও একই ধারা অব্যাহত আছে। গত বছর আগস্টে সব মিলিয়ে ১২৬ কোটি টাকা কর পেয়েছিল এনবিআর। সূত্র জানায়, চলতি বছরে নিবন্ধন কর আদায়ে লক্ষ্য ধরা হয়েছে চার হাজার ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু এক মাস ২৪ দিনে আদায় হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যের মাত্র সোয়া ২ শতাংশ। বিষয়টি নিয়ে এনবিআরের নীতিনির্ধারকরা চিন্তিত। এজন্য প্রতি সপ্তাহেই এ খাতের কর আহরণের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে প্লট কিনতে কাঠাপ্রতি ন্যূনতম ২০ লাখ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর দিতে হচ্ছে।

গুলশান ও বনানী এলাকায় প্রতি কাঠায় ২০ লাখ টাকা কিংবা দলিলমূল্যের ৮ শতাংশ, যেটি বেশি, তা কর হিসেবে আদায় করা হয়। এই কর সারা দেশের যেকোনো আবাসিক এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ। গুলশানে কেউ যদি পাঁচ কাঠার একটি প্লট কেনে, তাহলে তাকে কমপক্ষে এক কোটি টাকা কর দিতে হয়। একইভাবে প্রতিটি এলাকায় চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ন্যূনতম করের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে এনবিআর।

যেমন কারওয়ান বাজার, উত্তরা, সোনারগাঁও জনপথ, শাহবাগ, পান্থপথ, বাংলামোটর, কাকরাইলে কাঠাপ্রতি ১২ লাখ টাকা; গুলশান ও বনানীর কিছু অংশ, ধানমন্ডি, বারিধারা ডিওএইচএস, বনানী ডিওএইচএস, মহাখালী ডিওএইচএস, বসুন্ধরা (ব্লক এ থেকে আই), নিকেতন, বারিধারায় ১০ লাখ টাকা; বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা, গেন্ডারিয়া, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ও সিডিএ এভিনিউয়ে কাঠাপ্রতি ৮ লাখ টাকা; নবাবপুর, ফুলবাড়িয়ায় ৬ লাখ টাকা কাঠাপ্রতি ন্যূনতম কর নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া উত্তরা (১ থেকে ৯ নম্বর সেক্টর), খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকা, আজিমপুর, রাজারবাগ, চটগ্রামের আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাঁচলাইশ, নাসিরাবাদ, মেহেদীবাগে কাঠাপ্রতি নূন্যতম ৩ লাখ টাকা; পূর্বাচল, বসুন্ধরা (ব্লক কে থেকে পি) ও ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় ৩ লাখ টাকা; কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, ইস্কাটন, গ্রিন রোড, এলিফ্যান্ট রোড, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মগবাজার, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, শেরেবাংলানগর, লালমাটিয়া, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা এবং চট্টগ্রামের খুলশীতে কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকা; কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, ইস্কাটন, গ্রিন রোড, এলিফ্যান্ট রোডের (মূল রাস্তার ১০০ ফুটের বাইরে) আড়াই লাখ টাকা; উত্তরা (সেক্টর ১০ থেকে ১৪ নম্বর), নিকুঞ্জ, বাড্ডা (কিছু অংশ), গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, টঙ্গী শিল্প এলাকায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা; শ্যামপুর শিল্প এলাকা ও জুরাইনে এক লাখ টাকা; রাজারবাগের কিছু অংশ দেড় লাখ টাকা; খিলগাঁওয়ে দেড় লাখ টাকা, গোড়ান ও হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায় ৬০ হাজার টাকা কাঠাপ্রতি ন্যূনতম কর ধার্য রয়েছে।

ওসব এলাকা ছাড়া রাজউক ও চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (সিডিএ) অন্যান্য এলাকায় জমি বেচাকেনা হলে চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ; গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা (রাজউক ও সিডিএ এলাকা ছাড়া) এবং অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও জেলা সদর পৌর এলাকায় চুক্তিমূল্যের ৬ শতাংশ কর ধার্য রয়েছে। দেশের অন্যান্য পৌরসভা এলাকায় চুক্তিমূল্যের ৪ শতাংশ এবং অন্য এলাকায় চুক্তিমূল্যের ২ শতাংশ কর নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন জানান, নতুন কর চালুর পর ফ্ল্যাট নিবন্ধন এক-তৃতীয়াংশে নেমে গেছে। এমন অবস্থায় রিহ্যাব থেকে আগে-পরে বারবার বলা হয়েছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে। এনবিআর সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে কর বাড়িয়েছিল। কিন্তু ফল উল্টো হয়েছে। তাই করারোপ আগের অবস্থায় দ্রুত ফিরিয়ে নিলে রাজস্ব আয় বাড়বে। একই সঙ্গে চিন্তামুক্ত হবেন আবাসন খাতসংশ্লিষ্ট।