অনলাইন ডেস্ক :
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে নিউ জিল্যান্ড সরকার লকডাউন ও কোভিড-১৯ টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দেশটির পার্লামেন্টের সামনে হাজারো জনতা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর পার্লামেন্ট ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাজধানী ওয়েলিংটনে বিক্ষেভ সমাবেশে অংশ নেওয়া নাগরিকদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই। সংক্রমণ ঠেকাতে পার্লামেন্ট ভবনের প্রবেশপথ বিহাইভের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ এই গণবিক্ষোভে অংশ নেওয়া নাগরিকরা প্ল্যাকার্ডে নানা বার্তা লিখে নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারা লিখেছেন ‘স্বাধীনতা’, কেউ লিখেছেন ‘কিউইরা ল্যাবের গিনিপিগ নয়’। লকডাউন ও বাধ্যতামূলক টিকার নির্দেশনা তুলে নিতে স্লোগান দিচ্ছেন তারা। করোনা প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার পর এক তরুণী মারা যাওয়ার পর তার ভাই প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন, ‘টিকা আমার বোনকে মেরে ফেলেছে। টিকা নেওয়ার পর আমার বোনের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরে সে মারা যায়।’ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাস্ক পরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওয়েলিংটনের বিক্ষোভ থেকে তার সমর্থনেও স্লোগান এসেছে। সমাবেশে অংশ নেওয়া তরুণরা সংবাদমাধ্যমকে গালমন্দ করছেন। তাদের অভিযোগ, করোনা মহামারীর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যম ভুলভাল ও মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করছে। সমাবেশে বিক্ষুব্ধদের একজন রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার শরীরে কিছু একটা প্রবেশ করানো হবে, সেটা তো আমি নাও চাইতে পারি। আমাকে জোর করে টিকা দেওয়া হবে, সেটা আমি হতে দেব কেন? আমি বাধা দেবই। আমরা সরকারকে বলতে চাই, আমাদের সেই ২০১৮ সাল ফিরিয়ে দিন। আমরা আমাদের চলাচলের স্বাধীনতা ফিরে পেতে চাই।’ মধ্যবয়সী আরও এক বিক্ষুব্ধ নাগরিক বলেন,‘ কী যে শুরু করেছে সরকার! এরা যা কিছু করছে সবই নাগরিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি।’ বড় দিনের আগে কঠোর লকডাউন আরোপ করা হলে তারা সেটা মেনে নেবেন না বলেও জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে। চলতি বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতির পর কিউই প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন কঠোর লকডাউন ও গণটিকা কর্মসূচি আরও জোরদার করবেন বলে জানান। গত অক্টোবর মাসে আরডার্ন বলছেন, নিউ জিল্যান্ডে সব শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের সবাইকে তারা দ্রুত টিকা দেওয়া হবে। বিক্ষোভের পর নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ‘এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধরা কিন্তু নিউ জিল্যান্ডের অধিকাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন না।’ নিউ জিল্যান্ডের আরেক শহর অকল্যান্ডে ইতোমধ্যেই লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন সেই শহরটি সফরে যাবেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেও জনগণের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারীতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সর্বনিম্ন রাখতে পেরেছে নিউ জিল্যান্ড। মহামারী শুরুর পর ৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৩২ জন। মঙ্গলবার দেশটির স্বাস্থ্যবিষয়ক বার্তায় জানা যায়, ১২৫ জন নাগরিক নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির নাগরিকদের ৮০ শতাংশ টিকার দুটি ডোজ নিয়েছেন।
আরও পড়ুন
শিশুদের করোনার পরীক্ষামূলক টিকাদান শুরু ১১ আগস্ট
চীনে কঠোর লকডাউনের কারণে আটকা পড়েছেন ৮০ হাজার পর্যটক
পদত্যাগ করলেন অ্যামনেস্টির ইউক্রেন প্রধান