অনলাইন ডেস্ক :
চলতি মেয়াদ শেষে বিসিবি সভাপতির দায়িত্বে আর থাকবেন না বলে ইঙ্গিত দিলেন নাজমুল হাসান। তবে দায়িত্ব শেষ করার আগে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে হলেও বাংলাদেশ দলকে ঠিক করে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। গুলশানের নিজ বাসবভনে সোমবার তামিম ইকবালের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন নাজমুল হাসান। বিতর্কিত ঘটনার জের ধরে বিশ্বকাপ দল থেকে তামিমের নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া ও এরপর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপর্যয়ের পর এই প্রথম দেখা হলো দুজনের। সোমবার দুপুরে লম্বা সময় একান্তে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি ও জাতীয় দলের বাইরে থাকা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তাদের সেই বৈঠকে ছিলেন না আর কেউ। দুজনের সেই সাক্ষাত-পর্বের প্রেক্ষাপট পরে সংবাদমাধ্যমকে জানান বিসিবি সভাপতি।
সেখানে তুলে আনেন নিজের দায়িত্বের প্রসঙ্গও। “তামিম দুই-তিন দিন আগে থেকেই বলছিল যে, ও আসবে। সবশেষ ওর সঙ্গে যখন কথা হয়েছিল, তখন ও বলেছিল যে, ‘আপনি অনেক কিছু জানেন না, আপনাকে বলতে চাই।’ এদিন যে সে সব বলে গেছে, তা নয়। কারণ সময় খুব কম। আমি ওকে ওই কথাই বলেছি যেটা, আপনাদেরকে অনেক আগে বলেছিৃ এবার আমি বোর্ডে আসতে চাইনি। অনেকেই বলে, ‘কেন? কোনো চাপ আছে কি না…।’ আমি তখন বলেছি যে, দুটো কারণ- একটা হচ্ছে, আমার সময় নাই। দ্বিতীয়টা হচ্ছে যে, এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেটা মানুষ পছন্দ করবে না। ওখানেই কিন্তু ইঙ্গিতটা ছিল।” “এখনও তামিমকে আমি সেটাই বলেছি, ‘তুমি তো জানো আমি তোমাদের সঙ্গে আর আগের মতো নাই।
প্রথম দুই টার্ম দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এখন আমি ছেড়ে দিয়েছি। যাদের দায়িত্ব দিয়েছি, তারা পালন করবে। তাদেরকে বলেছি, সমস্যা থাকলে আমি সবসময় সহায়তা করব।” তামিমের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নিশ্চয়তা দিলেন বিসিবি সভাপতি। তবে এখনই নয়, জাতীয় নির্বাচন ও বিপিএল শেষে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। “তারপরও তামিম কিছু কথা বলল। এমন একটা সময় বলেছে, যখন আমার হাতে একদম সময় নেই। এক মাস পর আমার (জাতীয়) নির্বাচন। আমি আমার এলাকাতেই থাকছি সবচেয়ে বেশি। ওকে বলেছি, নির্বাচন থেকে এলেই বা শেষ হলেই যে সব সমস্যা জানব, তা তো না। আমি কারও কথায় কিছু করব না। আগে আমার নিজের জানতে হবে, সমস্যাটা কোথায়।” “আমি একদম গভীরে ঢুকতে চাই। সবার সঙ্গে কথা বলব, নিজের সিদ্ধান্তটা নেব। যেটা আগে আমি করতাম।
ওর সঙ্গে কথা হয়েছে, যা-ই সিদ্ধান্ত নেই, সেটা হবে বিপিএলের পর। নির্বাচনের পর বিপিএলটা শুরু হলে যে সময়টা পাবৃ সব ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফদের পাব। এই সময়টায় যা তথ্য পাওয়ার, সব পাব। আমরা একসঙ্গে কথা বলে যেটা ক্রিকেটের জন্য ভালো হয়, সেই সিদ্ধান্ত নেব।” সেই সিদ্ধান্তগুলো নিতে খুব বেশি সময় নিতে নেবেন না বলেও দাবি করলেন।
জোর দিয়েই বললেন, সভাপতি হিসেবে তার বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় দলকে ঠিক করে ফেলবেন। “আমি আর বেশি দিন নাই। এই টার্ম তো আর বেশিদিন নাই। এরপর আর এক বছর আছে। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে, যাওয়ার আগে অবশ্যই দলটা ঠিক করে যাব। যা যা করা দরকার, এটা আমি করে যাব। সেটা ঠিক হবে কি না, জানি না। আমি যেটা মনে করি করা দরকার, ওটা করব। সেটা যদি অনেক কঠিন সিদ্ধান্তও হয়, সেটাও আমি নেব।” “এই জিনিসটাই বলছি, একেকজন একেকটা কথা বলবে। ওটা শুনে সিদ্ধান্ত নেব, তার মধ্যে আমি নাই। আমি নিজে ভেতরে ঢুকেব। আগে যেমন আমি সব জানতাম, এখন জানি না।
এটা তামিমও স্বীকার করল, ‘যে হ্যাঁ, আপনি জানেন না।’ আমি বলেছি যে, ‘খালি তোমার সঙ্গে কথা বলে তো না, আমি সবার সঙ্গে কথা বলে গভীরে যাবো। যা যা সিদ্ধান্ত নিতে হয় নেব।’ কে পছন্দ না করল, তাতে কিছু যায় আসে না। ক্রিকেটের স্বার্থে যা যা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আমি নেব।” বিসিবি সভাপতি যদিও বলছেন তার মেয়াদ আর এক বছর, আদতে তার মেয়াদ আছে আরও দুই বছর। বিসিবির সবশেষ নির্বাচন হয়েছে ২০২১ সালের অক্টোবরে, পরেরটি হওয়ার কথা ২০২৫ সালের অক্টোবর বা নভেম্বরে।
২০১২ সালে প্রথমে সরকারের মনোনয়নে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। পরের বছরই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে বোর্ডের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরে ২০১৭ ও ২০২১ নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে সভাপতি হন তিনি। গতবার নির্বাচনের আগেও তিনি বেশ কয়েক বার বলেছেন, সভাপতির দায়িত্বে আর থাকতে চান না।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা