October 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 24th, 2022, 9:00 pm

কুলাউড়ায় ১২ প্রকল্পের মধ্যে ৮ প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি, ৪ প্রকল্পে অনিয়ম

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জেলা পরিষদ থেকে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে এডিপির আওতায় বরাদ্দকৃত অর্থে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১২টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এরমধ্যে ৪টি ইউনিয়নে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু করেননি ঠিকাদাররা অথচ
প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র দুই মাস। বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীর মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ১২টি ইউনিয়নের উন্নয়ন কাজের জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে ১২টি প্রকল্পের তালিকা পাঠালে সেটি
গৃহীত হয়। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১২টি রাস্তার ইটসলিং কাজের অনুমোদন হয়। এরমধ্যে কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ও কর্মধা ইউনিয়নে দুটি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান খছরুজ্জামানের মালিকানাধীন মেসার্স তাহমিদ এন্টারপ্রাইজ ও বরমচাল ও ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে প্রকল্প দুটির কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান বিজয় কৃষ্ণ দাসের মালিকানাধীন বর্ষণ এন্টারপ্রাইজ।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাজার-বরমচাল পাকা রাস্তা হতে হযরত শাহ কালা মাজারের উত্তর পাশ দিয়ে কালিয়াআগার রোড ইটসলিং, ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভূকশিমইল ইউনিয়নে পুষাইনগর থেকে নবাবগঞ্জ খালিক মিয়ার বাড়ীর রাস্তা হতে চক মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা ইটসলিং, ভাটেরা ইউনিয়নে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভাটেরা ইউপি পরিষদের
সম্মুখ হতে পূর্বমুখী কৃষ্ণপুর রাস্তা ইটসলিং, জয়চন্ডী ইউনিয়নে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রামপাশা উত্তর মসজিদ সংলগ্ন উত্তরমুখী রাজারবাড়ী ভায়া আবু তালিবপুর রাস্তা ইটসলিং, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পশ্চিম জালালাবাদ ইটসলিং এর মুখ হতে পশ্চিমমুখী রাস্তা ইটসলিং, কাদিপুর ইউনিয়নে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাম পাশের কাঁচা রাস্তার মুখ হতে উচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখ হয়ে কৌলারশীর প্রধান রাস্তার মুখ পর্যন্ত ইটসলিং, কুলাউড়া সদর ইউনিয়নে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শংকরপুর মন্দির হতে পূর্বমুখী পূর্ব প্রতাবী খানকা শরীফের সম্মুখ পর্যন্ত ইটসলিং, রাউৎগাঁও ইউনিয়নে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া টু রবিরবাজার রাস্তা হতে পূর্বমুখী আব্দুলপুর গ্রাম হয়ে চৌধুরীবাজার কালিটি
রাস্তা পর্যন্ত ইটসলিং, টিলাগাঁও ইউনিয়নে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মোবারকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখ হতে মোবারকপুর নতুন মসজিদের সামনের পিছ রাস্তার মুখ পর্যন্ত ইটসলিং, হাজীপুর ইউনিয়নে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাইকপাড়া সুলতানপুর উত্তরমুখী হয়ে চক রনচাপ ভায়্ াইসমাইলপুর পূর্ব পর্যন্ত রাস্তা ইটসলিং, পৃথিমপাশা ইউনিয়নে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মরহুম নবাব
আলী ছফদর সাহেবের রাস্তা হয়ে রাজনগর উচ্চ বিদ্যালয় হতে পশ্চিমুখী ইউসুফসদর রাস্তা ইটসলিং, কর্মধা ইউনিয়নে ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাবনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখের রাস্তা হতে পূর্বমুখী আব্দুল মালিক মাস্টারের বাড়ীর সম্মুখ পর্যন্ত ইটসলিং করার জন্য মোট ৫০ লক্ষ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের প্রকল্পে বক্স না করে বালু না দিয়ে মানসম্মত ইট ব্যবহার না করে প্রায় ৮০০ ফুট ইটসলিং করা হয়েছে। কর্মধা ইউনিয়নের প্রকল্পে প্রায় ১০০০ ফুট ইটসলিং করলেও নি¤œমানের ইট ব্যবহার করে রাস্তা ইটসলিং করা হয়েছে। এছাড়া বরমচাল ও ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের প্রকল্পেও নি¤œমানের কাজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কর্মধা ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রকল্পের কাজটি সঠিকভাবে করা হয়নি। ঠিকাদারের লোকজন খুবই নিম্নমানের কাজ করেছে।

পৃথিমপাশা ও কর্মধা ইউনিয়নের প্রকল্পের ঠিকাদার তাহমিদ এন্টারপ্রাইজের মালিক খছরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, সিডিউল অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করে এসেছি। কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। দুই প্রকল্প মিলে আমার ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে ইটের দাম বেশি থাকার কারণে।

বরমচাল ও ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের প্রকল্পের ঠিকাদার বর্ষণ এন্টারপ্রাইজের মালিক বিজয় কৃষ্ণ দাস মুঠোফোনে বলেন, দুই মাস হলো কাজ শেষ করেছি কিন্তু এখনো কোন বিল পাইনি। কাজটি সঠিকভাবে করেছি। ইটের দাম বৃদ্ধি থাকায় দুই প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা মতো লোকসান হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ঠিকাদাররা এখনো কাজ শুরুই করেননি।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, ইটের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্টানগুলো কাজ শুরু করতে বিলম্ব করছে। তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি কাজটি দ্রুত করার জন্য।
তারপরও ৪টি ইউনিয়নে কাজ করা হয়েছে। কাজে যদি কোন অনিয়ম হয় তাহলে সরেজমিন পরিদর্শন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ এখনো বাকি আছে। নির্ধারিত সময়ের আগে কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।