October 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, June 21st, 2022, 1:48 pm

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র-ধরলা নদীর পানি বাড়ছে, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। হু-হু করে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলায় সেতু পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেতে পারে। বন্যায় এখন পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। বন্যা কবলিতদের মাঝে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বানভাসিদের মধ্যে পানিবাহিত চর্ম, ডায়রিয়া, জ্বর দেখা দিয়েছে।

তবে বন্যা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, জেলার ২৮৪টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলের ২৭ হাজার ১৯৭টি পরিবারের ১ লাখ ৮ হাজার ৭৮৮ জন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার রাজিবপুর-৭টি, রৌমারী-৪৪টি চিলমারী-২৬টি, উলিপুর-২০টি, কুড়িগ্রাম সদর-১১টি, নাগেশ্বরী এবং রাজারহাটে একটি করে মোট ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জেলার ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭টি মাদরাসা এবং একটি কলেজে সাময়িক পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

খামারবাড়ীর উপপরিচালক মো. আব্দুর রশীদ জানান, বন্যায় ১৩ হাজার ৭১১ হেক্টর ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।

জেলা মৎস্য অফিসার কালিপদ রায় জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সর্বশেষ এক হাজার ১৬৩ জন চাষির এক হাজার ২৫৭টি পুকুর/দীঘি/খামার ভেসে গিয়ে ১৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে শনিবার দুপুরে উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের যমুনা সরকারপাড়া গ্রামের মাঈদুল ইসলামের কন্যা মাকসুদা জান্নাত (১১) এবং রবিবার দুপুরে রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঁন্দা পাড়া গ্রামের খলিলুর রহমানের দেড় বছরের ছেলে সন্তান সিয়াম বন্যার পানিতে পরে মারা গেছে বলে সিভিল সার্জন ডা. মো. মনজুর এ মোর্শেদ জানান।

তিনি আরও জানান, বন্যার্তদের সহযোগিতায় জেলায় মেডিকেল অফিসারের নেতৃত্বে ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ৯ উপজেলায় ৯টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মেডিকেল টিমের সদস্যরা বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, এখন পর্যন্ত বন্যায় ৩৩৮ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ১৬ লাখ টাকা ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশু খাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার গো-খাদ্য ক্রয় করা হচ্ছে।

তিনি জানান, বন্যার প্রস্তুতি হিসাবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতিদিনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা এবং ৪০৭ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে।

—ইউএনবি