নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের কৃষি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মূলত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট চাপ মোকাবেলা করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে প্রকৃত কৃষক চিহ্নিত করে দ্রুত ও সহজ শর্তে ঋণ পৌঁছে দিতে ব্যাংকগুলোতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর কৃষি খাতে যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করবে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। করোনার প্রভাব মোকাবেলায় ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে যেসব ব্যাংক সফলভাবে ঋণ বিতরণ করেছে তেমন ১৭টি ব্যাংককে ইতোমধ্যেই পুরস্কৃত করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদনে কৃষি খাতে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মূলত কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানো হবে এবং তার মাধ্যমে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো হবে। করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা করতে কৃষি খাতে কম সুদে সহজ শর্তে ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছিল। ওই তহবিল থেকে ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশ। কিন্তুকোনো জামানত ছাড়াই ৪ শতাংশ সুদে কৃষককে দেয়া হয়। বাকি ৪ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ভর্তুকি হিসাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেয়া হয়। ওই তহবিল থেকে ১৭টি ব্যাংক ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭০ জন গ্রাহককে ৪ হাজার ২৯৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে, যা তহবিলের ৮৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। যেসব ব্যাংক তহবিলের ঋণ সাধারণ কৃষককে দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সফল বাস্তবায়নকারী ১৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) প্রশংসাপত্র দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে প্রশংসাপত্র তুলে দেন। ওই ব্যাংকগুলো হচ্ছে- সরকারি খাতের সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট, কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো হচ্ছে- ইসলামী, এক্সিম, ব্র্যাক, প্রিমিয়ার, ওয়ান, ব্যাংক এশিয়া, শাহজালাল ইসলামী, উত্তরা, এবি, এনআরবি কমার্শিয়াল ও মধুমতি ব্যাংক।
সূত্র জানায়, আমদানির বিকল্প হিসাবে ২০ ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদনে কৃষককে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনার পর এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বব্যাপী প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়েছে। তাতে দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যসহ আমদানিনির্ভর পণ্যগুলো দেশেই উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওসব পণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানো গেলে রিজার্ভের সাশ্রয় হবে।
সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তার মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। বাকি ৬ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা ৩ মাসে বিতরণ করতে হবে। ওই হিসাবে প্রতিমাসে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা বিতরণ করতে হবে। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। একই সময়ের ব্যবধানে গ্রামের অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো হয়েছে ৩২ শতাংশ। তাছাড়া কৃষকের কাছ থেকে ঋণ আদায়েও শিথিলতা দেখানো হচ্ছে। যে কারণে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কৃষি খাতে ঋণ আদায় কমেছে ২ শতাংশ এবং গ্রামের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কমেছে আড়াই শতাংশ। তবে সাম্প্রতিক বন্যা ও হাওড়ের ফসল নষ্টের কারণে কৃষক যাতে নতুন করে চাষাবাদ করতে পারে সেজন্য ঋণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর ব্যাংকগুলোকে ওই খাতে ঋণ বিতরণের যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তার চেয়ে কম বিতরণ করলে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে। এ খাতে ঋণ বিতরণে নীতিসহায়তায়ও দেয়া হচ্ছে নানা ছাড়। বর্তমানে গম, ডাল ও মসলা ৭৫ শতাংশ আমদানিনির্ভর। চাল ও ফল আমদানি করতে হচ্ছে। ভোজ্যতেলের ৯৫ শতাংশই আমদানিনির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে ওসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ওই খাতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। সেগুলো আমদানিতে রিজার্ভ থেকে অর্থব্যয় হচ্ছে। ওসব খাতে মোট আমদানি ব্যয়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ