November 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, July 20th, 2021, 2:09 pm

কোরবানির পশুর হাট ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছে জাল নোট চক্রের সদস্যরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

জাল নোট চক্রের সদস্যরা অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানীর পশুর হাটে বেশি তৎপর হয়ে উঠে। ইতিপূর্বে জাল নোট ছাপা ও বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার চক্রগুলোর প্রায় অর্ধশত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা বারবার জামিনে বেরিয়ে একই কারবারে জড়িয়ে পড়ে। অতিসম্প্রতিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে রাজধানীতে একাধিক জাল নোট তৈরির চক্রের সদস্যকে আটক করা হয়েছে। আর বরাবরের মতো এবারও ওই অপতৎপরতা থেমে নেই। করোনাকালে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও জাল নোটের হাতবদল চলেছে। ইতিমধ্যে রাজধানীতে কয়েক কোটি টাকার জাল নোট ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কোরবানির পশুর হাটে জাল নোট শনাক্তের মেশিন স্থাপনসহ সতর্কতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীতে বাসা ভাড়া নিয়ে গোপনে জাল নোট তৈরির সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ইয়াবাসহ মাদক কারবারি, হাসপাতালের দালাল, চোরাকারবারি, গার্মেন্ট ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ রয়েছে। ওই চক্রের সদস্যরা সারা বছরই মাদকের লেনদেন, চোরাই পণ্যের কারবার, সোনা বেচাকেনাসহ বিভিন্ন অবৈধ লেনদেনে জাল নোট চালিয়ে থাকে। আর কোরবানির পশুর হাটের ভিড়ে ওরা আরো বেশি তৎপর হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন নুরেরচালা সাঈদনগরে অভিযান চালিয়ে ৪৩ লাখ টাকার জাল নোট ও নোট তৈরির সরঞ্জামসহ ডিবি পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করে। ভাড়া বাসায় স্বামী-স্ত্রী মিলে ওই জাল নোটের কারখানা চালাতো। তাদের লক্ষ্য ছিল বিপণিবিতান ও কোরবানির পশুর হাটে জাল নোট চালানো। সেজন্য কোটি টাকার নোট তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। তাছাড়া গত ৫ জুলাই রাতে মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়াম এলাকায় চেকপোস্টে দুই যুবকের দেহ তল্লাশি করে প্রায় এক লাখ টাকার জাল নোট পাওয়া যায়। তারা ওসব নোট বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। তার আগে গত ২২ জুন বাড্ডা থেকে এক তরুণকে ৫০ লাখ টাকার জাল নোটসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ৩ বছর ধরে জাল নোট কারবারের সাথে জড়িত আটক ওই ব্যক্তি একটিবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ওই চক্রের আরো দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা এক লাখ টাকার জাল নোট ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। আর ইতিমধ্যে তারা শতাধিক চালানে কয়েক কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছেড়ে দিয়েছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে বাজারে জাল নোটের ঘটনা বাড়ে। তাই ঈদকে সামনে রেখে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জাল নোট প্রতিরোধ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। কারণ জাল নোট চক্রের সদস্যরা কোরবানির পশুর হাটে টার্গেট করে ব্যাপকভাবে জাল নোট চালানোর চেষ্টা চালায়। কারণ ব্যাপারীরা অনেকেই জাল নোট চিনতে পারে না। তাছাড়া পশুর হাটে ভিড়-ব্যস্ততাও থাকে বেশি। আর ওই সুযোগই নে জাল নোট কারবারিরা।
এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঈদ-উল-আজহা সামনে রেখে কোরবানির পশুর স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটে জালনোট প্রতিরোধে বিনা খরচে নোট যাচাইয়ের সেবা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পাঠিয়েছে। করোনা মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওই নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত পশুর হাটে জালনোট শনাক্তকারী মেশিনের সহায়তায় অভিজ্ঞ ক্যাশ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে হাট শুরুর দিন থেকে ঈদের পূর্বরাত পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিরতিহীনভাবে পশু ব্যবসায়ীদের বিনা খরচে নোট যাচাই সংক্রান্ত সেবা দেয়া হবে। আর ঢাকার বাইরে সব জেলায় অনুমোদিত পশুর হাটগুলোতেও একই প্রক্রিয়ায় সেবা দিতে ব্যাংকের শাখাগুলোতে নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে। আর যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই এমন জেলায় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও থানার অনুমোদিত পশুর হাটে বিভিন্ন ব্যাংকের দায়িত্ব বণ্টনের জন্য সোনালী ব্যাংক লিঃ এর চেস্ট শাখাগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বুথে নোট যাচাইয়ের সময় কোন জালনোট ধরা পড়লে জালনোট ০১(পলিসি)/২০০৭-১৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাটে ব্যাংকের নাম ও তার সঙ্গে জালনোট শনাক্তকরণ বুথের ব্যানার প্রদর্শন করতে হবে। আর জালনোট শনাক্তে হাটে দায়িত্ব পালনকারী কার্মকর্তা-কর্মচারীদের বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, জাল নোট কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি রাজধানীর পশুর হাটসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাহিনীর নজরদারি থাকবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় জল নোট শনাক্তকারী যন্ত্রও বসানো হবে।
একই প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, জাল নোটের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর কোরবানির পশুর হাটেও বরাবরের মতোই নজরদারি থাকবে।