December 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, July 25th, 2022, 9:46 pm

ক্যাপটিভ খাতে জ্বালানি সঙ্কটে শিল্প খাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ক্যাপটিভ খাতে জ্বালানি সঙ্কটে শিল্প খাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। দেশের শিল্প খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাপটিভ বা নিজস্ব উৎপাদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সংস্থান করে। মূলত খরচ বেশি হওয়ার পাশাপাশি সঞ্চালন ব্যবস্থার দুর্বলতা ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চয়তা না থাকায় শিল্পোদ্যোক্তারা জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহারে আগ্রহী নয়। তাছাড়া শিল্প খাতে ক্যাপটিভে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ থেকে জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে গড়ে প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় হয়। কিন্তু বর্তমানে ক্যাপটিভ খাতেও জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে দেশের গোটা শিল্প খাতেই বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে। কারণ একদিকে গ্যাস সঙ্কট, অন্যদিকে আবার জরুরি অবস্থায় অতি ব্যয়বহুল জ্বালানি ডিজেল ব্যবহারের সুযোগ নেই। ক্যাপটিভে গ্যাস সরবরাহ এখনো পুরোপুরি বন্ধ না হলেও তেমন পরিস্থিতির আশঙ্কা উড়িয়েও দেয়া যায় না। এমন অবস্থায় উদ্যোক্তাদের সামনে সরকারের সহায়তা ছাড়া সঙ্কট মোকাবেলার আর কোনো পথও খোলা নেই। শিল্পোদ্যোক্তাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে গ্যাসের মজুদ কমে আসছে। পাশাপাশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানিও বন্ধ। এমন অবস্থায় রেশনিংয়ের ভিত্তিতে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। ক্যাপটিভ কেন্দ্রগুলো থেকে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশের বেশি আসছে। বিগত ২০১০-১২ অর্থবছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশই ক্যাপটিভের ছিল। তবে পরের অর্থবছরে তা ১৬ শতাংশেনেমে আসে। ২০১৯-২০ শেষেও ক্যাপটিভ থেকে মোট বিদ্যুতের ১১ শতাংশ উৎপাদন হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ শেষে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ক্যাপটিভের অবদান বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ শতাংশে। মোট উৎপাদনে অংশ কমতে থাকলেও ক্যাপটিভ খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ছে। ২০১৬ সালে ক্যাপটিভ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওসব কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। আর ২০২০-২১ শেষে তা ৩ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র জানায়, মূলত তৈরি পোশাকের কাঁচামাল সুতা-কাপড় উৎপাদনকারী বস্ত্র শিল্প মালিকরা দেশে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে। ক্যাপটিভনির্ভর শিল্প পরিচালনাকারীদের জন্য প্রধান জ্বালানি উৎসই হচ্ছে গ্যাস। এখন যে দামে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে তা সমন্বয় করা হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় উৎপাদনে গ্যাস সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব প্রকট হয়ে উঠবে। কারণ খুব কম উদ্যোক্তারাই দুই ধরনের জ্বালানি উৎস ব্যবহার করে। আর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকলে ক্যাপটিভ ব্যবহারকারীদের জন্য উৎপাদন বন্ধ থাকবে। বিগত দুই-তিন মাস ধরেই এক ধরনের অঘোষিত রেশনিং হচ্ছিল। আর এখন তা ঘোষণা দিয়ে হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে ১ হাজার ৭শ’র বেশি শিল্প-কারখানায় ক্যাপটিভ বিদ্যুতের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেগুলোয় দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। সরকার অপচয়ের কারণ দেখিয়ে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে আনতে চাইছিল। সেজন্য ক্যাপটিভে সরবরাহকৃত গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়। তবে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আগের অনেক হিসাব-নিকাশই বদলে গেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিল্প খাতকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। শিল্প খাত যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়াই সরকারের লক্ষ্য। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সরকার জ্বালানি তেলসহ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা করেছে। কারণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের অন্যতম বড় উৎস তৈরি পোশাক খাত। আর সরকারের নীতিনির্ধারণের ওপরই ওই শিল্পের জ্বালানি পরিকল্পনা নির্ভর করছে। বিদ্যুতে নিজস্ব উৎপাদনের জন্য উদ্যোক্তাদের সরকারের গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করতে হয়। আর জ্বালানি তেলে চালাতে গেলে লাভ-লোকসানের বিষয় চলে আসে। আবার এলএনজি নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেটি আমদানি করতে হয়। আর তার জন্য ব্যবহার হয় রিজার্ভ। রিজার্ভ সমুন্নত রাখতে রফতানি বাড়াতে হবে। তা করতে হলে কল-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। সামগ্রিকভাবে এ বিষয়ে উদ্যোক্তাদের কিছু করার নেই। ফলে উদ্যোক্তাদের সরকারের নীতিনির্ধারণের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
এদিকে বস্ত্র ও পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা খুবই শঙ্কিত। কারণ এলএনজি আমদানি এখন সুরক্ষিত নয়। তা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে শিল্পেও গ্যাস-বিদ্যুতের রেশনিং করতে হবে। তখন উদ্যোক্তাদের কোনো পরিকল্পনাই কাজে লাগার সুযোগ নেই। সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিদ্যমান সঙ্কটট আরো ঘনীভ‚ত হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জ্বালানির জন্য রফতানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ক্রয়াদেশ থাকলেও সেগুলোর জন্য কারখানা চালাতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিয়ে ঝুঁকি ও শঙ্কা রয়েছে। জ¦ালানি সরবরাহ না থাকলে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহ-সভাপতি ফজলুল হক জানান, গ্যাসে ক্যাপটিভ চালানো হয়। গ্যাসের চাপ না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। জ্বালানি ছাড়া শিল্পোদ্যোক্তাদের এক সেকেন্ডও চলবে না। এমন অবস্থায় যদি গ্যাস না থাকে তাহলে উৎপাদন শতভাগ বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ বিকল্প কিছু নেই। ক্যাপটিভ সক্ষমতা বস্ত্র শিল্পেই সর্বোচ্চ। পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। সরকার বলছে, যেসব এলাকায় শিল্প আছে সেগুলোকে লোডশেডিংয়ের বাইরে রাখা হবে বা সেখানে হলেও কম হবে। এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত।