December 3, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, April 5th, 2024, 8:22 pm

ক্রিকেট নিয়ে উচ্ছ্বাস থাকলেও রেজাল্ট নেই

অনলাইন ডেস্ক :

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স লেজেগোবরে। দুই টেস্টে এমন লজ্জার হার দেখে মুখ লুকান ক্রিকেট ভক্তরা। ২০০০ সালে প্রথম টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। টানা ২৪ বছরে কত শত কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু মুখ উজ্জ্বল করার মতো রেজাল্ট কোথায়। রাষ্ট্রের অর্থ গেছে তাতে কি কারো ভ্রুক্ষেপ ছিল, না আছে। ক্রিকেট তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। ১৪২ টেস্ট খেলে জয় আছে ১৯টি, ড্র ১৮টি। এই জয় আর ড্রয়ে ম্যাচগুলো এক্সরে করলে দেখা যাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলার ক্রিকেটারদের সহযোগিতা করেছে। একটা ম্যাচ জিতলে পেছনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। একটা ম্যাচ জিতলে আগামী ম্যাচগুলো সহজ হয়ে যায়।

এভাবে টেস্ট সিরিজ আসে, সিরিজ যায়। বিসিবির প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু তো বলে দিয়েছেন এই দুটি টেস্টে নাকি ক্রিকেটের আসল চেহারা দেখা গেছে। ক্রিকেটাররা নিজেরাও নাকি বুঝতে পারছেন কেন ক্যাচ পড়ে যাচ্ছে। ফিল্ডিং ভালো হচ্ছে না। ব্যাটাররা রান করতে পারছেন না। নিজেদের মাঠে অতিথি দল ভালো খেলছে। আর যাদের মাঠঘাট সব চেনা জানা তারাই গরের মাঠে লড়াই করতে পারছে না। একই পিচে শ্রীলঙ্কা রানের ঝড় তুলল, আর সেই পিচেই বাংলার ব্যাটাররা হামাগুড়ি দিল। দ্বিতীয় টেস্টে সাকিব আল হাসান যোগ হলে দলের জন্য বাড়তি প্রেরণা।

সাকিব তো খেলেছেন, কী হয়েছে। যা ছিল তা-ই। চট্টগ্রাম টেস্ট চলাকালীন মুমিনুল হক বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান আর টেস্ট ক্রিকেটের মান কী এক? শুনতে খারাপ লাগবে, কিন্তু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট ও টেস্ট ম্যাচ খেলার মধ্যে অনেক পার্থক্য। আকাশ-পাতাল তফাৎ। আপনারাও জানেন। আমিও জানি। সবাই জানে। এটা অজুহাত নয়। আমি নিজেও জাতীয় লিগ খেলি। এখানে (আন্তর্জাতিক টেস্টে) যে ধরনের চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়, সেখানে তা হয় না। আমার কথা হয়তো অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমি সততার জায়গা থেকে কথাগুলো বলছি।’ সিলেট টেস্টের পরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ‘টেস্টে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জিতবই, ওই আত্মবিশ্বাসটা ছিল না। এটা আসলে ছিলই না। সমস্যাটা হারা নিয়ে না।

সমস্যা হচ্ছে যেভাবে তারা হেরেছে। যেভাবে তারা খেলেছে। তাদের এই মানসিকতা, মনোভাব, শট সিলেকশন, এটা জঘন্য, বিশ্রী ছিল। মনে হয়েছে হয় তারা খেলতে চায় না এই ফরম্যাটটা, অথবা অন্য কোনো সমস্যা। এটা নিয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। হারা-জেতা নিয়ে একেবারে চিন্তিত নই। কিন্তু এই ধরনের শট সিলেকশন, এই ধরনের মানসিকতা এটা টেস্টে যায় না।’ দেশের ক্রিকেট ব্যস্ত ওয়ানডে ম্যাচ নিয়ে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ওয়ানডে নিয়েই যত হিসাব, যত রং। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নির্ভর করে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের ওপর। যে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট যতটা মজবুত সেই দেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও ততটা উজ্জ্বলতা ছড়ায়।

ঘরোয়া ক্রিকেট হচ্ছে ক্রিকেটের আসল কারখানা। পাশের দেশের ক্রিকেটের পরিকল্পনাটা দেখলেও বুঝা যায়। যারা জাতীয় দলে ভালো করতে পারেন না, তারা ফিরে যান ঘরোয়া ক্রিকেটে। সেখান থেকে নতুন করে নিজেকে তৈরি করে আবার জাতীয় দলে ফেরেন। শুধু ভারত কেন, সব দেশেই এমন নিয়ম। ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো সেভাবেই তৈরি হয়েছে। উলটো চিত্র বাংলাদেশে। এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কেউ খবরই রাখে না। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাওয়ার স্বপ্নজাল বুনন দিয়েছিলেন কর্তারা। শুরু হয়েছিল নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট, শুরু হয়েছিল জাতীয় ক্রিকেট লিগ। এখন ঘরোয়া ক্রিকেটে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের আগ্রহ নেই।

ভালো পারফরম্যান্স করারও আগ্রহ দেখা যায় না। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো শক্ত অবস্থানে না থাকার সুফল পাচ্ছে না দেশের জাতীয় দল। একজন ক্রিকেটার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লে তিনি কোথায় গিয়ে নিজেকে তৈরি করবেন, সেই মঞ্চটা প্রস্তুত না থাকায় নিজে নিজে তৈরি হন। আবার জাতীয় দলে ফেরেন নামের ভারে। মোদ্দাকথা হচ্ছে জাতীয় দলের ক্রিকেট নিয়ে উচ্ছ্বাস আছে। কিন্তু রেজাল্ট নেই। দেশের ক্রিকেটাররা আলোচনায় আছেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক পিচে নেমে আলো ছড়াতে পারছেন না। মেধাবী ক্রিকেটার কোথায়। ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো নিয়ে পিরামিড নেই।

ঘরোয়া ক্রিকেট অন্ধকারে পড়ে আছে। এই আধুনিক যুগে বিসিবি ঘরোয়া ক্রিকেটটাকে মজবুত অবস্থানে আনতে পারেনি। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তরা তিন ফরম্যাটে নিজেদেরকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। দেশের এসব ক্রিকেটারদেরকে মোটা অঙ্কের বেতন দিতে হয়। এই মুহূর্তে নাকি শান্ত সবচেয়ে বেশি বেতনে খেলছেন। দেশের আর কোনো ক্রীড়াবিদ এত উচ্চ পারিশ্রমিক পান না। ক্রিকেটের বাইরে অন্যান্য খেলায় আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে যারা ভালো পারফরম্যান্স করছেন তারা ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের তুলনায় কিছুই পান না। তার পরও দেশে মানুষের আবেগে ক্রিকেটের স্থান থাকলে ক্রিকেটাররা সেটি অনুভব করেন কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।