October 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, September 19th, 2023, 6:47 pm

ক্ষতিপূরণের চেক পেলেন আরো ১৮ পরিবার

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শত কোটি টাকা প্রকল্পের রাজাপুর সেতু ও সেতুর দুইপাশের সংযোগ সড়কের কাজ পরিদর্শন করলেন জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম। ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে তিনি রাজাপুর সেতু এলাকা পরিদর্শন করে সেতুর দুইপাশের সংযোগ সড়কের কাজের অগ্রগতি ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় উপকারভোগীদের সাথে কথা বলেন। এসময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের অবশিষ্ট কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

পরে জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত এল. এ চেক বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুল হকের সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম। বক্তব্য দেন কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান, কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ, পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান জিমিউর রহমান চৌধুরী।

এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান খোন্দকার, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেহা ফেরদৌস চৌধুরী পপি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান, ওসি (তদন্ত) ক্যশৈনু মারমা, সওজ অধিদপ্তরের কুলাউড়া সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ আলম, হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স, শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ১৬ জন ও হাজীপুর ইউনিয়নের ২ জন উপকারভোগীর মধ্যে জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেন।

প্রসঙ্গত, পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে রাজাপুর সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন করে সরকার। পরে সওজ অধিদপ্তর মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পে ‘কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে ২ শত ৩২ দশমিক ৯৪ মিটার পিসি গার্ডার সেতু, সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও জমি অধিগ্রহণ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ৩৪ কোটি টাকায় ব্যয়ে সেতু নির্মাণে ‘জন্মভূমি-ওয়াহিদুজ্জামান-নির্মিতি’ নামের সিলেটের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ করে। ২০২০ সালে কার্যাদেশ পাওয়া প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর দুই পাশে সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ পায় ‘জামিল-ইকবাল’ নামের সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজের মেয়াদ ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে কাজের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানা হয়েছে। তিন বছরে কাজ হয়ে ৩০ শতাংশ।

মনু নদের ওপর কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে “শতকোটি টাকার সেতুতেও লাগছে মই” শিরোনামে নিউনেশনসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিনিয়র এক কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও সওজে’র জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেয়া হয়। এরপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চাপপ্রয়োগ করে সেতুর দুই পাশের এপ্রোচ সড়কে মানুষের সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে বালু দিয়ে ভরাট করায় জেলা প্রশাসন ও জেলা সড়ক বিভাগ। এরপর থেকে স্থানীয় লোকজন কোনোমতে সেতু দিয়ে পারাপার করছেন। এর পর সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জিয়া উদ্দিন সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করে তদারকি করেন এবং স্থানীয় উপকারভোগীদের সাথে কথা বলেন। এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার ১৩ দিন পর রাজাপুর সেতু এলাকায় সরেজমিনে এসে স্থানীয় ১৮ উপকারভোগীর কাছে ক্ষতিপূরণের ৩৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কে পার্ট-১ ও পার্ট-২ মিলে সওজ থেকে প্রাপ্ত মোট ১১ কোটি টাকা থেকে দুই ধাপে মোট ১৪৮ উপকারভোগীর মধ্যে প্রায় ৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। পার্ট-৩ এ শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম,মনোহরপুর ও চাতলাপুর মৌজায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চুড়ান্ত অনুমোদন হলে প্রাক্কলন প্রস্তুত শেষে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরনের টাকা হস্তান্তর কাজ চলমান আছে। মামলা নং-০১/২০২০-২১ ও ০২/২০২০-২১ এ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট উপকারভোগী থেকে মোট ১৭৪ টি আবেদন পাওয়া যায়। তন্মধ্যে প্রাপ্ত আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে শুনানী করে ১৪৮ জনকে ক্ষতিপূরণ চেক প্রদান করা হয়েছে। ২৬টি আবেদনে দাখিলকৃত কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় তা অধিকতর যাচাই বাছাইপূর্বক পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। কুলাউড়ায় এই বৃহৎ সেতু চালু হলে এতদ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হবে। পণ্য পরিবহনসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ধারবাহিক উন্নয়ন কার্যক্রমের একটি প্রকল্প হলো এই রাজাপুর সেতু। সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ অবশিষ্ট পরিবারের মধ্যে জমির কাগজ সঠিকভাবে সংশোধন করার পর ক্ষতিপূরণের টাকা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে।