জেলা প্রতিনিধি, রংপুর (গঙ্গাচড়া) :
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে চাষাবাদ যোগ্য এক জমিতে বছরে পর্যায়ক্রমে চার ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এ বছরেই এ লক্ষ নিয়ে কিছু কৃষক নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। সফলও হয়েছে, এর তিন ফসল (ধান) ঘরে তুলেছে কৃষক।তাদের মুখে হাসির জোয়ার। তবে কৃষকদের কৃষি বিভাগের লোকজনের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ মেনে ফসল চাষাবাদ করতে হবে। আর এ পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা মেনে এবার সফলতা পেয়েছে কৃষকগণ। কৃষি বিভাগের লোকজনও এই সফলতার বিস্তার ব্যাপকভাবে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিরলস কাজ করছে। গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের গান্নারপাড় চতরা ব্রিজ দোলা ও খামারে ১৫ একর জমির কৃষককে এক জমিতে বছরে চার ফসল উৎপাদনে পরামর্শ দেন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা বেলাল হোসেন। পরামর্শ প্রদানকালে কৃষকের উৎসাহ কম পেলে তিনি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম লেবুর সহযোগিতা নেন। এরপর তিনি ১৫ একর জমির কৃষককে নিয়ে ফসল চাষাবাদে উদ্যোগ নেন। বোরো মৌসুমে ধান বীজ নির্বাচন করেদেন কৃষকদের। বোরো মৌসুমে ব্রি-ধান ২৮, বছরের শুরু মাস জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে জমিতে রোপন করা হয়। নিয়মকানুন মেনে সার, ওষুধ, নিড়ানিসহ অন্যান্য যত্ন নেওয়ায় সঠিক সময়ে ধান কর্তন করা হয়। এর পরের আউস মৌসুমে ব্রি-ধান ৪৮, জুনের প্রথম সপ্তাহে ওই জমিতে রোপন করা হয়। যা সঠিকভাবে পরিচর্চার মাধ্যমে আগষ্টের শেষে কর্তন করেই আমন মৌসুমের জন্য ব্রি-ধান ৮৭, আগষ্টের শেষ সপ্তাহে রোপন করে নভেম্বরের ২য় সপ্তাহ হতে ৩য় সপ্তাহের মধ্যে কর্তন করে ঘরে তুলছে কৃষক। রবি মৌসুমে ওই জমিতে বারি সরিষা, আলু, ভুট্টাসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদের জন্য রোপন করছে কৃষক। সঠিকভাবে সার প্রয়োগসহ অন্যান্য যত্নের মাধ্যমে সফলভাবে রোপন হতে ৭০ থেকে ১’শ দিনের মধ্যে ঘরে তুলবে কৃষক। কৃষি বিভাগ পরামর্শ, দিকনির্দেশনার পাশাপাশি অনেক কৃষককে প্রণোদনার বীজ ও সার সহায়তা দিয়েছে। গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের গান্নারপাড় চতরা ব্রিজ দোলায় কৃষক আলা মিয়া ১ একর ২০ শতক, শফিকুল ৪৫ শতক, নুর ইসলাম ২২ শতক, সোহাগ ১ একর ৪০ শতক, আজাদ ২৫ শতক, সবুজ ২৫ শতক, চান ৪৫ শতক, ফুল মিয়া ২৭ শতক, দোলাগান্নায় মোকছেদুল ৪ একর (ব্লক প্রদর্শনী), খামারে রেয়াজুল ভাইসহ আড়াই একর, রাজু ৮০ শতক, সমসের ৫৫ শতক, আব্দুল কাদের ৫০ শতক জমিতে নিয়ম কানুন মেনে এসব ধান চাষাবাদ করে লাভবান হয়েছেন। তারা অনেকেই ব্রি-ধান ৮৭ কর্তন করেছেন আবার কেউ কর্তন করছেন। তারা রবি মৌসুমের সফল কেউ রোপন করেছেন আবার কেউ রোপনে জমি প্রস্তুত করছেন। কৃষক শফিকুল, নুর ইসলাম, রেয়াজুল, আব্দুল কাদের জানান, আগে আমরা দুবার ধান চাষ করার পর আলু, ভুট্টাসহ অন্য কোন ফসল রোপন করতাম। উপসহকারী কৃষি অফিসার বেলাল হোসেন ও ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম লেবুর উৎসাহ, পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা মোতাবেক এর মধ্যেই একই জমিতে তিনবার চাষ করে তা কর্তন করে ঘরে তুলেছি। ফলন ভাল হয়েছে। এছাড়া খর বিক্রি করে ভাল লাভবান হয়েছি। এখন পছন্দমত কেউ ভুট্টা, কেউ আলু, সরিষা, মিষ্টি আলুসহ অন্যান্য জাতের ফসল রোপন করছি। কোন ধরণের আবহাওয়া জনিত সমস্যা না হলে এ সফলও সঠিক সময়ে ঘরে তুলে অধিক লাভবান হব। ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম লেবু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়ির আনাচে-কানাচেসহ পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি ও আবাদযোগ্য জমিতে পরিকল্পনা মাফিক চাষে গুরুত্ব দিয়ে তা বাস্তবায়নে সব শ্রেণী পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর সে লক্ষ বাস্তবায়নে কৃষকদের পরামর্শ, উৎসাহ প্রদান করছি। কৃষি বিভাগের লোকজন আমাকে সাথে নিয়ে উঠান বৈঠক করছে। কৃষকদের সহযোগিতা করতে আমার ব্যাক্তিগতভাবে অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। তবে সফলতা পেয়েছি ভাল ফসল উৎপাদন করছে কৃষক। উপসহকারি কৃষি অফিসার বেলাল হোসেন বলেন, সরকার প্রধান খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ গড়ার লক্ষে কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। সেগুলো মাঠ পর্যায় বাস্তবায়নের জন্য কৃষি বিভাগকে দিকনির্দেশনাসহ দায়িত্ব দিয়েছে। সে লক্ষে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, উঠান বৈঠক, হাটে ঘাটে আলোচনা করে যাচ্ছি। জমিতে কখন কোন সফল চাষ করলে ভাল উৎপাদন হবে। এক জমিতে কিভাবে ৩/৪ চাষ করা যাবে। তবে কৃষক সচেতন হলে এসবই বাস্তবায়ন সম্ভব। আমি আমার দায়িত্বরত এলাকায় কয়েকজন কৃষক নিয়ে এক বছরে চার ফসল উৎপাদনের জন্য পরামর্শ দেই। প্রথমে তারা উৎসাহী না হলে ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতা নেই। তাই সফল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রতি মৌসুমে ধান উৎপাদনের এক সময় আছে। এ সময়ের মধ্যে চার সফল উৎপাদন সম্ভব হয়না, সেজন্য প্রতি মৌসুমের ধান কর্তনের প্রায় ২৫/৩০ দিন আগে ধান বীজ নির্বাচন করে তা চারা করার জন্য বপন করা হয়েছে। পরে চাষাবাদ ধান কর্তন করেই জমি আবার চাষ করে ওই ধান চারা রোপন করা হয়েছে। এভাবে চাষাবাদ করে ভাল ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩ থেকে সাড়ে ৩ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। শুধু সঠিকভাবে সার, নিড়ানি, পানিসহ অন্যান্য যত্ন দিতে হবে। এসব করতে গিয়ে তিনি ব্যাক্তিগতভাবে অর্থ ব্যয় করে কৃষককে সহযোগিতা করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, সরকার কৃষি বিভাগের আওতায় কৃষকদের প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ ভাল ফসল ফলনে মাঠ পর্যায় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করে এখন এক জমিতে বছরে চার ফসল ফলানে সম্ভব হচ্ছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি