নিজস্ব প্রতিবেদক:
গরমে বিদ্যুৎ সঙ্কট তীব্র হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে ডলার সংকটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানিআমদানি। ফলে কমে যাচ্ছে গ্যাস, কয়লা ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ আগামী মার্চ থেকেই গরম পড়লে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়বে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তখন লোডশেডিং বাড়বে। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ডলার সংকটে বাধার মুখে পড়ছে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানি। আর আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক বছরের তুলনায় সব ধরনের জ্বালানির দাম এখনো প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। তবে গত জুলাইয়ের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। মূলত ডলার সংকটের কারণেই দাম বেড়েছে। গত এক বছরে ডলারের দাম ২১ টাকা বৃদ্ধিতে জ্বালানি আমদানির খরচও বেড়েছে। দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগেরই জ্বালানি হচ্ছে গ্যাস, কয়লা ও তেল। তাছাড়া শিল্পে ব্যবহৃত ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোও হয় গ্যাস ও তেল দিয়ে পরিচালনা করা। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস ও তেল অপরিহার্য কাঁচামাল। গ্যাসের বড় অংশ দেশ থেকে জোগান দেয়া হলেও কিছু আমদানি করা হয়। কিন্তু জ্বালানি তেলের পুরোটাই আমদানি করতে হয়। তাছাড়া কয়লারও বেশির ভাগ আমদানি করা হয়। আর ওসব আমদানির এলসি খুলতে ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ডলার সংকটে গত কয়েক মাস ধরেই আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই ডিসেম্বরে জ্বালানি তেল আমদানির এলসি ৩৬ শতাংশ ও আমদানি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। তার মধ্যে পরিশোধিত তেল আমদানির এলসি ৭৬ শতাংশ ও আমদানি বেড়েছে ১০৪ শতাংশ। ওসব তেল পরিবহণ ও কৃষি খাতে ব্যবহৃত হয়। অপরিশোধিত জ্বালানিতেলের বড় অংশই বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম কাঁচামাল জ¦ালানি তেল আমদানির এলসি গত জুলাই ডিসেম্বরে কমেছে ৪৪ শতাংশ এবং আমদানিও কমেছে ৫৩ শতাংশ। ফলে আগামী কয়েক মাসে আমদানি আরো কমবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম গত এক বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৫৫ ডলার। গত জুলাইয়ে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১২৭ ডলারে উঠে। তবে এখন তা কমে ৭৮ ডলারে নেমেছে। এক বছরের তুলনায় দাম এখনো বেশি। ডলার সংকট ও জ্বালানিতেলের দাম বাড়তে থাকলে গত আগস্টে সরকার জ্বালানিতেলনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কিছু কেন্দ্র খোলা হলেও জ্বালানির অভাবে সেগুলো বন্ধ রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তেল আমদানির পর বিক্রি করে ওসব অর্থ পরিশোধ করা হয়। তেল বিক্রি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ঋণ পরিশোধের জন্য টাকা ব্যাংকে জমা দিলেও ডলারের অভাবে পরিশোধ করা যাচ্ছে না। তাতে ঋণের বেশ কয়েকটি কিস্তি আটকে গেছে। বকেয়া পড়েছে ১৪০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ১২২ কোটি ডলার বা ১৩ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। যদিও বাংলাদেশ ওই মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমানে কয়লা আমদানির এলসি খোলা ও আমদানি দুটোই কমেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দামও বেড়েছে। ফলে পরিমাণগত হিসাবে কয়লার আমদানি অনেক কম। গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়। তখন থেকে কয়লার চাহিদা বাড়লেও ডলার সংকটে আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ৪১ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের কয়লা আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল। কিন্তুমাত্র ২৮ কোটি ২৪ লাখ ডলারের কয়লা আমদানি করা হয়। একইভাবে গত অর্থবছরের একই সময়ে ৪৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। কিন্তু আমদানি হয় ৩০ কোটি ডলারের। ওই সময়ে এলসি কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ৪ শতাংশ। কয়লা সংকটে জানুয়ারির মধ্যভাগে বন্ধ হয়ে যায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। বর্তমানে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কয়লা সরবরাহ করতে গড়িমসি করছে। এদিকে গত সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাস আমদানি বন্ধ। আর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হওয়ায় আমদানিও কমে গেছে। সরকারের স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের বড় অংশই জ্বালানি খাতের। সরকারি সংস্থাগুলোর স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৫৮ কোটি ডলার, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৬৩৩ কোটি ডলার। সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৩৪ কোটি ডলার। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেই। ওসব ঋণের বড় অংশই জ্বালানি খাতের। ডলার সংকটের কারণে এখন ওসব ঋণ পরিশোধও বিলম্বিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ